Advertisement
E-Paper

‘নরেন্দ্র কাপ’ শেষে কিছুটা স্বস্তির শ্বাস বিজেপিতে, তবে কলকাতার ‘জনবিচ্ছিন্নতা’ দেখে সতর্কও হচ্ছেন নেতৃত্ব

বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ বলছেন, ছোটখাটো ক্ষোভ-অসন্তোষ বা ভুল-ত্রুটি বড় কর্মসূচি ঘিরে হয়েই থাকে। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের মাস ছয়-সাতেক আগে রাজ্যে বিজেপির সব মণ্ডলকে যে সক্রিয় ভাবে অর্থে ‘মাঠে’ নামানো গিয়েছে, তা কম কথা নয়।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:৫০
Bengal BJP exhales breath of satisfaction as 7-Day long Narendra Cup football brings all Mandals to ground literally

বুধবার ‘নরেন্দ্র কাপ’ ফুটবল প্রতিযোগিতায় হাজির হয়েছিলেন শমীক ভট্টাচার্য। ছবি: সংগৃহীত।

ফুটবল ঘিরে জনজোয়ার তৈরি হয়েছে বলে কেউ দাবি করছেন না। তবে রাজ্য জুড়ে সাত দিনের ‘নরেন্দ্র কাপ’ আয়োজন সম্পন্ন হওয়ার পরে স্বস্তির হাওয়া বঙ্গের ‘পদ্মবনে’। ফুটবল প্রতিযোগিতার এই আয়োজনকে বিজেপি সরাসরি দল বা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত বলে স্বীকার করতে চায়নি। কিন্তু দল গঠন থেকে প্রতিযোগিতার পরিধি নির্ধারণ, সবই হয়েছে একেবারে বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোর সঙ্গে মিলিয়ে মিলিয়েই। নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিনে সব জেলায় সে প্রতিযোগিতার ফাইনাল ম্যাচও অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। কয়েকটি জেলার কথা বাদ দিলে, আয়োজন এবং অংশগ্রহণের বহর দেখে বিজেপি নেতৃত্ব ‘সন্তুষ্ট’ বলে সূত্রের খবর। কলকাতায় দলের সাংগঠনিক শক্তি যে এখনও খুব সুবিধাজনক নয়, তা কিন্তু ফুটবলের আসরেও ধরা পড়েছে।

১১ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ স্বামী বিবেকানন্দের ‘শিকাগো বক্তৃতা’র তারিখে রাজ্য জুড়ে ‘নরেন্দ্র কাপ’ শুরু করে বিজেপি। আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন দেশের ফুটবল নিয়ামক সংস্থা এআইএফএফ-এর প্রধান কল্যাণ চৌবে। আর সরাসরি গোটা আয়োজনের দেখভাল করছিলেন পুরুলিয়ার সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো।

রাজ্যে বিজেপির মণ্ডল কমিটির সংখ্যা ১৩০০-র কিছু বেশি। এই প্রতিযোগিতায় অংশও নিয়েছিল ১৩০০-র কিছু বেশি সংখ্যক ফুটবল দল। অর্থাৎ বিজেপির প্রতিটি মণ্ডল একটি করে পূর্ণাঙ্গ ফুটবল দলকে মাঠে নামিয়েছিল। আর প্রতিযোগিতা যে হেতু জেলা স্তরে আয়োজিত হয়েছে, সে হেতু প্রত্যেক সাংগঠনিক জেলায় একটি করে দল চ্যাম্পিয়ন ঘোষিত হয়েছে। উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ জেলা থেকেই এই প্রতিযোগিতা ঘিরে ‘ভাল সাড়া’ আশা করেছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপি সূত্রের দাবি, নেতৃত্বকে খুব একটা হতাশ হতে হয়নি। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে ফ্রেন্ডস উইনিয়ন মাঠে হাজির হয়েছিলেন এলাকার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। বালুরঘাট শহরে বিজেপির দৈনন্দিন জনসংযোগ ভাল হওয়ায় ফাইনাল ম্যাচেও ভালই জনসমাগম দেখা গিয়েছে। বিজেপি বলছে, বিধানসভায় বিরোধী দলের মুখ্য সচেতক শঙ্কর ঘোষের এলাকা শিলিগুড়িতেও স্বস্তিদায়ক ছবি। হিলকার্ট রোডের ধারে দাগাপুর ফুটবল মাঠে প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়েছিল। শঙ্করের কথায়, ‘‘শিলিগুড়ি এমনিতেই খেলাধুলোয় উৎসাহী শহর। আমরা মাঠও বেছেছিলাম জনবহুল এলাকাতেই, যাতে ফুটবল উৎসাহীরা সহজেই হাজির হতে পারেন। ফলে খেলার মাঠে ভালই ভিড় হয়েছে।’’

বালুরঘাটে  ‘নরেন্দ্র কাপ’ ফুটবল প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সুকান্ত মজুমদার।

বালুরঘাটে ‘নরেন্দ্র কাপ’ ফুটবল প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সুকান্ত মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত।

দক্ষিণবঙ্গে অবশ্য দু’রকম ছবি। বুধবার রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য দু’টি সাংগঠনিক জেলার ‘নরেন্দ্র কাপে’ হাজির ছিলেন। প্রথমে গিয়েছিলেন কাঁচরাপাড়া রেলওয়ে মাঠে ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার খেলায়। তার পরে যান বনগাঁর আরএস ময়দানে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার খেলায়। সে মাঠে আবার শমীকের পাশাপাশি ছিলেন স্থানীয় সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরও। দুই মাঠেই দর্শকাসনে উৎসাহ চোখে পড়েছে। সাংগঠনিক শক্তি বা জনভিত্তির ছাপও স্পষ্টই ধরা পড়েছে বলে বলছেন দলের নেতারা। কাঁচরাপাড়ার ম্যাচ ঘিরে উৎসাহী দর্শকদের ভিড় উচ্ছ্বসিত হওয়ার মতো নয় বলে বিজেপি নেতারাও মানছেন। কিন্তু বনগাঁর ম্যাচ ঘিরে জনসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। জনসমাগম দেখা গিয়েছে বারাসতের শতদল ময়দানেও। টাকি রোড সংলগ্ন সে মাঠে ‘নরেন্দ্র কাপ’ ঘিরে স্থানীয়দের জমায়েতই বেশি ছিল। ফাইনাল ম্যাচের দিন মাঠে হাজির হয়েছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সহকারী পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়।

যাদবপুর সাংগঠনিক জেলার খেলা হয়েছিল বারুইপুর ফুলতলা সংলগ্ন সাগর সংঘ ময়দানে। যে মণ্ডল খেলতে নেমেছিল, তারা নিজেরাই কিছু দর্শক জুটিয়ে এনেছিল বলে মাঠ একেবারে খালি ছিল না। তবে স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, ফুটবল প্রতিযোগিতা ঘিরে অটো বা টোটো নিয়ে মাইক-প্রচার চালালে আরও বেশি লোকজন জড়ো হতে পারত। কিন্তু সে সব করা হয়নি বলে উদ্দেশ্য কিছুটা হলেও ‘ব্যর্থ’ হয়েছে। জয়নগর সাংগঠনিক জেলার ম্যাচে আবার বিজেপি কর্মীদের মধ্যেই ক্ষোভ তৈরি হওয়ার কথা শোনা গিয়েছে। সুন্দরবন অঞ্চলের বড় অংশ জয়নগর সাংগঠনিক জেলার মধ্যে পড়ে। ভৌগোলিক কারণে সে জেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছতে অনেক সময় যায়। বেশ কিছু প্রত্যন্ত এলাকা থেকে বেশ কয়েক ঘণ্টা সফর করে খেলার মাঠে পৌঁছে জলখাবার না-পেয়ে অনেকে প্রকাশ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর।

বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ বলছেন, এ সব ছোটখাটো ক্ষোভ-অসন্তোষ বা ভুল-ত্রুটি বড় কর্মসূচি ঘিরে হয়েই থাকে। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের মাস ছয়-সাতেক আগে রাজ্যে বিজেপির সব মণ্ডলকে যে সক্রিয় ভাবে আক্ষরিক অর্থে ‘মাঠে’ নামানো গিয়েছে, তা কম কথা নয়। শুধুমাত্র যুব কর্মীরাই খেলতে পারবেন, এই ছিল প্রতিযোগিতার শর্ত। রাজ্যে বিজেপির ১৩০০-র বেশি মণ্ডলই যে ১৫-২০ জন করে যুব কর্মী তৈরি করে ফেলেছেন, তা এই ফুটবল প্রতিযোগিতা থেকে পরখ করে নেওয়া গিয়েছে বলে বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন।

তবে ব্যর্থতাও নজরে এসেছে। উত্তর কলকাতা জেলা কমিটি নিজেদের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে কোনও মাঠ খুঁজে পায়নি। বিধাননগরে সাই-এর মাঠে ‘নরেন্দ্র কাপ’ আয়োজন করেছিল তারা। তাতে প্রতিযোগিতা নির্বিঘ্নেই মিটেছে। কিন্তু প্রথমত সে মাঠ উত্তর কলকাতায় পড়ে না। দ্বিতীয়ত সেখানে সাধারণের অবাধ প্রবেশাধিকার নেই। তাই ফুটবল ঘিরে সাধারণ স্থানীয় জনতাকে জড়ো করার লক্ষ্য উত্তর কলকাতায় ‘ব্যর্থ’ হয়েছে বলেই বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন। রাজ্য স্তরের একাধিক পদাধিকারী মানছেন, উত্তর কলকাতার ভৌগোলিক সীমার মধ্যে এবং কোনও জনবহুল পাড়ার মধ্যে কোনও মাঠ জোগাড় করতে না পারা ‘জনবিচ্ছিন্নতা’র ছবিই তুলে ধরেছে।

Narendra Cup football tournament BJP Bengal West Bengal Politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy