উপলক্ষ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিন। লক্ষ্য দলের নীচের তলায় ‘কোন্দল’ মিটিয়ে তরুণ কর্মীদের মধ্যে সৌহার্দ তৈরি করা এবং নির্বাচনের আগের ও পরের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখা। তাই পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ‘নরেন্দ্র কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট’ আয়োজন করছে বিজেপি। দেখভালে থাকছেন দেশের ফুটবল নিয়ামক সংস্থার প্রধান কল্যাণ চৌবে।
মোদীর জন্মদিন ১৭ সেপ্টেম্বর। সেই তারিখের আগেপিছে ১৫ দিন ধরে বিজেপি সারা দেশেই নানা ‘সেবামূলক ও সামাজিক কর্মসূচি’ পালন করে। নাম দেওয়া হয় ‘সেবাপক্ষ’। এ বারও সেই কর্মসূচি দেশ জুড়েই পালিত হবে। রক্তদান শিবির, নিখরচায় স্বাস্থ্য পরিষেবা শিবির, পরিচ্ছন্নতা অভিযান— সবই থাকছে। পশ্চিমবঙ্গে তার সঙ্গে জুড়ছে ‘নরেন্দ্র কাপ’। এই ফুটবল প্রতিযোগিতায় বিজেপির মণ্ডল কমিটিগুলিই মূলত নিজেদের দল নামাবে। মণ্ডলে-মণ্ডলে খেলা হবে। তবে বিজেপি আনুষ্ঠানিক ভাবে একে ‘মণ্ডল টিম’ বলছে না। বলা হচ্ছে, প্রতিটি ব্লক থেকে একাধিক দল নামছে এবং রাজ্য জুড়ে ১৩০০-র বেশি দল নাম নথিভুক্ত করিয়েছে।
প্রসঙ্গত, এ রাজ্যে বিজেপির মণ্ডলের সংখ্যাও ১৩০০-র কিছু বেশিই। প্রাথমিক পর্যায়ে জেলা স্তরে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন হচ্ছে। তাই প্রতিযোগিতার সংখ্যাও ৪৩, যা বিজেপির সাংগঠনিক জেলার সংখ্যার সমান। ১১ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ স্বামী বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতার তারিখে এই প্রতিযোগিতা শুরু হচ্ছে। আর শেষ হচ্ছে ১৭ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ মোদীর জন্মদিনে।
রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো এই ‘নরেন্দ্র কাপ আয়োজক সমিতি’র আহ্বায়ক। বুধবার এক সাংবাদিক বৈঠকে ‘নরেন্দ্র কাপে’র আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘোষণা করে তিনি বলেন, ‘‘৪৩টি জায়গাতেই চ্যাম্পিয়ন দল ৫০ হাজার টাকা এবং রানার আপ দল ২৫ হাজার টাকা করে পাবে, বাকি দুই সেমিফাইনালিস্টকেও ১৫ হাজার টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হবে।’’
আরও পড়ুন:
বিধানসভা নির্বাচন যখন আসন্ন, তখন রাজনৈতিক কর্মসূচি ছেড়ে খেলাধুলো কেন? বিজেপির মুখপাত্র তথা জাতীয় পরিষদের সদস্য শতরূপা বলছেন, ‘‘যুব সমাজের জন্য খেলাধুলার মধ্যে থাকা কত জরুরি, তা স্বামী বিবেকানন্দ বলে গিয়েছেন। আমরা চাই আমাদের দলের যুবসমাজ স্বামীজির দেখানো পথে গড়ে উঠুক। তাই ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সিদের নিয়ে এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হচ্ছে।’’ বঙ্গ বিজেপির অন্য একটি সূত্রের দাবি, এই টুর্নামেন্টের অন্যতম লক্ষ্য, দলের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একটা মসৃণ বোঝাপড়া তথা বন্ধুত্বের বাতাবরণ তৈরি করা। মণ্ডল বা তার নীচের স্তরে বিজেপির যে তরুণ কর্মীরা রয়েছেন, ভোটের সময়ে যাঁরা প্রত্যক্ষ ভাবে ময়দানে নামেন, তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া এই ফুটবল প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে মসৃণ হবে বলে বিজেপি নেতৃত্বের আশা।
তা হলে কি নীচের তলায় দলের কর্মীদের মধ্যে বোঝাপড়া তেমন মসৃণ নয়? নীচের তলায় ‘অভ্যন্তরীণ কোন্দল’ নিয়ে কি নেতারা উদ্বিগ্ন? মুখপাত্র শতরূপা তা মানছেন না। তিনি বলছেন, ‘‘কোন্দল আমাদের দলে নেই। তবে বোঝাপড়ার অভাব কোথাও কোথাও হয়। কোথাও হয়তো একটু ঝগড়া হয়ে যায়। এই টুর্নামেন্ট সে সব মুছে দিয়ে বন্ধুত্ব গাঢ় করবে।’’ কী ভাবে, তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলছেন, ‘‘একটা মণ্ডল বা একটা এলাকায় স্থানীয় ১১টা ছেলে একসঙ্গে খেলতে নামবে, যাদের বয়স ১৮-২৫ বছর। তাদের সঙ্গে রিজ়ার্ভ বেঞ্চ থাকবে। সব মিলিয়ে ১৬টা ছেলে একটা এলাকা থেকে মাঠে নামবে, একটা টিম হয়ে খেলবে। তাদের মধ্যে কারও সঙ্গে কারও কোনও মনোমালিন্য থাকলেও খেলার মাঠে এক হয়ে লড়ার সময় সে সব কেটে যাবে। সেটাই লক্ষ্য।’’
বিজেপি এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচনের আগের ও পরের ‘পরিস্থিতি’ মোকাবিলার জন্য সমস্ত এলাকায় ১৫-২০ জন তরুণকে একজোট করে রাখতে চাইছে। ভোটের সময় বিভিন্ন পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য দলের ছাতার তলায় থাকা তরুণদের মধ্যে মসৃণ বোঝাপড়া দরকার। ভোটগ্রহণের দিনগুলিতে সে প্রয়োজন আরেও বেশি। ভোটের ফলপ্রকাশের পরে ২০২১ সালের মতো পরিস্থিতি তৈরি হলেও তরুণ কর্মীদের ‘ঐক্যবদ্ধ চলাফেরা’ অনেক বিপদ-আপদ রুখে দিতে পারবে। রাজ্য স্তরের এক নেতার কথায়, ‘‘আমাদের বিশ্বাস, ভোট ঠিকমতো হলে এ বার ফলাফল অন্য রকম হবে। কিন্তু সব রকমের ফলাফলের মুখোমুখি দাঁড়ানোর জন্যই প্রস্তুতি দরকার। আমরা সে কাজটাই করছি।’’
প্রতিযোগিতার নাম ‘নরেন্দ্র কাপ’ কেন? স্বামী বিবেকানন্দের পূর্বাশ্রমের নামে? না কি প্রধানমন্ত্রীর নামে? শতরূপার জবাব, ‘‘স্বামীজির বাণী যে এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের অন্যতম অনুপ্রেরণা, তা তো আমরা বলছিই। স্বামীজির পূর্বাশ্রমের নামের সঙ্গে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নাম মেলে, এটাও বাস্তবতা। সে বাস্তবতা মাথায় রেখেই নামকরণ। নইলে তো মোদী কাপও বলা যেত।’’