E-Paper

বিশাল বহরের বাহিনী নিয়ে যুদ্ধে চলল কংগ্রেস

কংগ্রেস সূত্রের ব্যাখ্যা, সামনে বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে ভারসাম্যের নীতি নেওয়া হয়েছে। তাই তেমন কাউকে বাদ দেওয়ার ‘ঝুঁকি’ এড়ানো হয়েছে।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২৫ ০৭:১৫

নিদ্রিত কৃষ্ণের শয্যা-শিরে অপেক্ষা করে এক অক্ষৌহিণী নারায়ণী সেনা পেয়েছিলেন কৌরব সেনাপতি দুর্যোধন। মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগের কাহিনি। কলি কালের এই বঙ্গে দলের সেনাপতি মনোনয়নের ১১ মাস পরে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের ঘুম ভাঙল, যখন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে! ভোট-যুদ্ধের আগে বিশালায়তন কমিটি পেলেন প্রদেশ কংগ্রেসের সেনাপতি। নাম-ধাম পরের কথা, সে কমিটির বহর অন্য যে কোনও দলের ঘুম ছুটিয়ে দিতে পারে।

এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সে বেণুগোপালের সিলমোহর সংবলিত প্রদেশ কংগ্রেসের যে কমিটি গঠিত হয়েছে, সেখানে সহ-সভাপতি ৩৫ জন, সাধারণ সম্পাদক ২৯ জন। সাংগঠনিক সম্পাদক ৪৮ জন, তার বাইরে আরও সম্পাদক ৬৫ জন! তার মধ্যে নদিয়া জেলা থেকে এক সম্পাদক বুধবার রাতেই পদত্যাগ-পত্র লিখে ফেলেছেন বলেও কংগ্রেস সূত্রের খবর! কংগ্রেসের সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতি বিষয়ক ও নির্বাচন কমিটির সদস্য-সংখ্যা যথাক্রমে ৪৮ জন ও ৬৭ জন। এঁদের সঙ্গে পদাধিকার বলে আরও সদস্য আছেন। প্রদেশ কার্যনির্বাহী কমিটিতে জায়গা হয়েছে ৭২ জনের। সব কমিটির সদস্য-সংখ্যা যোগ করলে (যদিও এক ব্যক্তি একাধিক কমিটিতে আছেন) ৪০০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এই বিপুল বহরের কমিটি তাঁরা আগে দেখেছেন কি না, মনে করতে পারছেন না কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতারা। দলের এক প্রাক্তন সাংসদের কথায়, ‘‘আমাদের যে কোনও কমিটির বৈঠকই এখন থেকে জনসভা হবে!’’ কেউ কেউ মন্তব্য করছেন, প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতর বিধান ভবনে এমনতর কমিটির জন্য স্থান সঙ্কুলান হবে তো!

কংগ্রেস সূত্রের ব্যাখ্যা, সামনে বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে ভারসাম্যের নীতি নেওয়া হয়েছে। তাই তেমন কাউকে বাদ দেওয়ার ‘ঝুঁকি’ এড়ানো হয়েছে। কমিটিতে মহিলা মুখ বেড়েছে, তফসিলি জাতি-জনজাতির প্রতিনিধিও এসেছেন। তবে সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব নিয়ে দলের কোনও কোনও অংশে প্রশ্ন আছে। সূত্রের ইঙ্গিত, এর পরে কিছু কার্যনির্বাহী সভাপতিও নিয়োগ করা হতে পারে। কমিটি সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলছেন, ‘‘সকলকেই তো কমিটিতে রাখা যায় না। এর বাইরেও যোগ্য যদি কেউ থেকে যান, নিশ্চয়ই আলোচনা করা যাবে। সামনে নির্বাচন, বেশি সময় নেই। সকলকে নিয়ে কাজ করতে হবে। কংগ্রেসের আসল লক্ষ্য বুথকে শক্তিশালী করা।’’

অধীর চৌধুরী, দীপা দাশমুন্সি, প্রদীপ ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নান, অমিতাভ চক্রবর্তী-সহ প্রদেশ কংগ্রেসের সব পরিচিত নামই কোনও না কোনও কমিটিতে রয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেসের পূর্বতন কোষাধ্যক্ষ সন্তোষ পাঠক এ বার সহ-সভাপতি হয়েছেন, নতুন কোষাধ্যক্ষ করা হয়েছে দীপ্তিমান ঘোষকে। একই সঙ্গে ৩৩টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতিদের নামও ঘোষণা করা হয়েছে। সেই তালিকায় উত্তর দিনাজপুরের মোহিত সেনগুপ্ত, পুরুলিয়ার নেপাল মাহাতো, পশ্চিম বর্ধমানের দেবেশ চক্রবর্তী, দক্ষিণ কলকাতার প্রদীপ প্রসাদ ও উত্তর ২৪ পরগনার (শহর) তাপস মজুমদার পুরনো পদে রয়ে গিয়েছেন। বাকিরা নতুন। উত্তর ২৪ পরগনা (গ্রামীণ) সাংগঠনিক জেলাকে দু’ভাগে ভেঙে সভাপতি করা হয়েছে ইন্দ্রাণী দত্ত চট্টোপাধ্যায় ও শিবমাল্য বসুকে। মুর্শিদাবাদের প্রয়াত আবু হেনার জায়গায় নতুন জেলা সভাপতি হয়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী।

কমিটি গঠনের পরে এ বার নির্বাচনী রণকৌশল ঠিক করার পালা। কৃষ্ণের মতো মন্ত্রণাদাতা কংগ্রেস পাবে কি না, গুঞ্জন উঠেছে দলেই!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Youth Congress AICC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy