Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

এত ‘উন্নয়ন’ হলে এই অশান্তি কেন

ভোটপর্ব শুরুর আগেই ১০০% জয়ের বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি হিসাবে এটাই দলের লক্ষ্য। সেই বার্তাকে ‘বাস্তবরূপ’ দিতে দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা রাজ্য জুড়ে সর্বশক্তিতে নেমে পড়েছেন।

ধুন্ধুমার: জেলাশাসকের দফতরের সামনে খণ্ডযুদ্ধে জড়াল সিপিএম এবং তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা। শনিবার বর্ধমান শহরে। ছবি: উদিত সিংহ

ধুন্ধুমার: জেলাশাসকের দফতরের সামনে খণ্ডযুদ্ধে জড়াল সিপিএম এবং তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা। শনিবার বর্ধমান শহরে। ছবি: উদিত সিংহ

রবিশঙ্কর দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৫৭
Share: Save:

‘উন্নয়ন’ যদি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে, জয় যদি নিশ্চিত হয়, তা হলে পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বেই এত হিংসা কেন? তৃণমূলের অন্দরে চর্চা— ব্যাখ্যা যা-ই হোক, এই দায় দল এড়াতে পারবে না। বরং গত কয়েকটি পঞ্চায়েত ভোটের তুলনায় এ বার যদি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা আসনের সংখ্যা বেড়ে যায়, তা হলে সন্ত্রাসের অভিযোগ প্রতিষ্ঠা পেয়ে যাবে বলেই মনে করছেন দলের একাংশ।

রাস্তা, জল, বিভিন্ন সুযোগসুবিধা বণ্টন— গ্রামে সরকারের কাজ নিয়ে প্রচার পুস্তিকা তৈরি করেছেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু হিংসাত্মক পরিস্থিতিতে তা প্রচারের সুযোগ কি থাকবে? মনোনয়ন শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন জেলায় যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে তা নিয়েই জেরবার দলীয় নেতৃত্ব। সেই দায় বিরোধীদের উপর চাপিয়ে পার্থবাবু বলেন, ‘‘প্রচারের মুখ ঘোরাতেই বিরোধীরা হিংসা ছড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সরকার যা করেছে তাতেই রাজ্যব্যাপী আমাদের জয় নিশ্চিত। উন্নয়ন চোখে দেখা যাচ্ছে। তা প্রচারও করব।’’

ভোটপর্ব শুরুর আগেই ১০০% জয়ের বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি হিসাবে এটাই দলের লক্ষ্য। সেই বার্তাকে ‘বাস্তবরূপ’ দিতে দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা রাজ্য জুড়ে সর্বশক্তিতে নেমে পড়েছেন। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, সংঘর্ষের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে এ ভাবেই। অন্য দল মনোনয়ন জমা দিলে সব জেতার নিশ্চয়তা ধাক্কা খেতে পারে। তাই মনোনয়ন জমা দেওয়া আটকানো দিয়ে শুরু হয়েছে ‘দখলদারি’।

পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাস রাজ্য আগেও দেখেছে। বাম জমানায় প্রথমে কংগ্রেস পরে তৃণমূল আঙুল তুলত সিপিএমের দিকে। যা খুব ভুল ছিল না। পরিসংখ্যান বলে, ২০০৩ সালে ১১% আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হয়নি। ২০০৮ সালে সেই সংখ্যা কিছুটা কমেছিল। তত দিনে অবশ্য বামেদের ক্ষয় শুরু হয়েছে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের পরে হয় ২০১৩-র পঞ্চায়েত নির্বাচন। ক্ষমতায় তখন তৃণমূল। সেই ভোটেও ১১% আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি।

কিন্তু এ বারের মতো মনোনয়নপর্ব থেকে ব্যাপক সংঘর্ষের আবহ আগে তৈরি হয়নি। অনেকের ধারণা, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা আসনের সংখ্যা এ বার আরও বাড়বে। ভোট বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর অবশ্য মনে করেন, ‘‘১৯৯৮ সাল থেকে বিরোধীশূন্য করার প্রবণতা ধরা পড়ছে। যদিও তা ছিল হিসাব কষা। এখন সেই প্রবণতা বাড়ছে।’’ তৃণমূল অবশ্য মনে করে, বিরোধীদের লোকবল নেই সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার। মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘বরাবরই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় হয়েছে। শাসক দলের শক্তি বেশি হয়। নীচের তলায় তাদের মতো বিরোধীরা সব আসনে প্রার্থী দিতে পারে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE