Advertisement
১৭ মে ২০২৪

ছেলেকে চাকরি দেবে বলেছিল

নাম সঞ্জিত প্রামাণিক (২৭)। বাড়ি নদিয়ার শান্তিপুর শহরের সর্বানন্দপাড়ায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বড় অংশের অভিযোগ, আরও কিছু লোকজনের সঙ্গে বাবলা সর্দারপাড়া হাইস্কুলের বুথ দখল করে ছাপ্পা ভোট মারতে গিয়েছিলেন তিনি।

 রক্তাক্ত: গণপিটুনিতে নিহত সঞ্জিত প্রামাণিক (চিহ্নিত)। শান্তিপুরের বাবলা সর্দারপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র

রক্তাক্ত: গণপিটুনিতে নিহত সঞ্জিত প্রামাণিক (চিহ্নিত)। শান্তিপুরের বাবলা সর্দারপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র

সুস্মিত হালদার
শান্তিপুর শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৮ ০৬:৫৩
Share: Save:

তাঁতশ্রমিকের ছেলে তিনি। অভাবের জোয়াল ঠেলে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ করেছিলেন। সোমবার ভোটের বুথে ঢুকে গণপ্রহারে মৃত্যু হল তাঁর।

নাম সঞ্জিত প্রামাণিক (২৭)। বাড়ি নদিয়ার শান্তিপুর শহরের সর্বানন্দপাড়ায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বড় অংশের অভিযোগ, আরও কিছু লোকজনের সঙ্গে বাবলা সর্দারপাড়া হাইস্কুলের বুথ দখল করে ছাপ্পা ভোট মারতে গিয়েছিলেন তিনি। ছেলের এই পরিণতির জন্য এখন শান্তিপুরের তৃণমূল বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যকে দায়ী করছেন সঞ্জিতের বাবা-মা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ গাড়ি ও মোটরবাইকে কিছু বহিরাগত যুবক এসে ওই বুথে ঢুকে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে ব্যালট কেড়ে ছাপ্পা দিতে শুরু করে। প্রিসাইডিং অফিসার মনোজিৎ সাহা বলেন, “বাধা দিলে ভোটকর্মীদের মারধর করে ওরা।” খবর পেয়ে তির-ধনুক হাতে প্রচুর স্থানীয় লোকজন চলে আসেন। বাকিরা পালালেও চার জন ধরা পড়ে যায়। পুলিশ উদ্ধার করে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তারেরা জানিয়ে দেন, সঞ্জিত মারা গিয়েছেন। বাকিদের কলকাতায় এনআরএস হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

সঞ্জিতের বাবা রঞ্জিত প্রামাণিকের আক্ষেপ, ‘‘ছেলে বলত, বিধায়কের সঙ্গে থাকলে নাকি চাকরি দেবে। সেই আশাতেই ওদের সঙ্গে থাকত। আমরা ওকে অনেক বারণ করেছি। এত বড় সবর্নাশ হয়ে গেল!” অরিন্দম অবশ্য এখন বলছেন, ‘‘আমি কোথা থেকে চাকরি দেব! কখনও এ কথা বলিনি। সঞ্জিত আমাদের দফতরে কাগজপত্র দেখাশোনা করত। কাগজ দিতেই আর ক’জনের সঙ্গে ও বুথে গিয়েছিল।’’ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সামনে বিক্ষোভে যোগ দিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘কারা তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল ওখানে? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন বাংলাকে?’’

সঞ্জিতের মৃত্যুর পরে হাসপাতালে গিয়ে তাঁর আত্মীয়বন্ধু এবং এলাকার লোকজনের ক্ষোভের মুখে পড়েন অরিন্দম। কার্যত পালিয়ে বাঁচতে হয় তাঁকে। রঞ্জিতবাবু বলেন, ‘‘আমি ওঁর কাছে গিয়ে জানতে চেয়েছিলাম, এ ভাবে ছেলেকে মরতে হল কেন? উনি কোনও জবাব দিতে পারেননি।’’

সঞ্জিতের মা লালীর ভিজে চোখে কার্যত আগুন জ্বলছে। কান্না চেপে তিনি বলেন, “চাকরির লোভ দেখিয়ে ওরা আমার ছেলেকে নষ্ট করেছে। অরিন্দমকে ধরে আমার সামনে নিয়ে এসো। আমি ওকে গুলি করে মারব!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE