সমালোচনায় উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
স্বাধীনতা দিবসের মঞ্চে বক্তৃতা ঘিরেও বিতর্কে জড়ালেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। বললেন, বোলপুর শহরে কিছু কিছু লোকের ‘পেট ফুলেফেঁপে’ বড় হয়ে উঠছে পয়সা রোজগার করে। উপাচার্য কারও নাম নেননি ঠিকই। কিন্তু, তাঁরা নিশানায় আরও একবার বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সদ্য গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে ধরা পড়েছেন অনুব্রত।
অনুব্রতের সঙ্গে উপাচার্যের সংঘাত নতুন নয়। কখনও উপাচার্য ওই তৃণমূল নেতাকে ‘বাহুবলী’ বলে কটাক্ষ করেছেন। পাল্টা অনুব্রত বলেছেন, উপাচার্য ‘পাগল’। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তৃণমূলের সরকারকেও নাম না নিয়ে বিঁধেছিলেন উপাচার্য। বলেছিলেন, ‘‘অতিরিক্ত খেলে বদহজম হয়। তারই প্রতিফলন এখন দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে।’’ এ বার পৌষমেলা প্রসঙ্গ নিয়ে বলতে উঠে ‘পেট ফুলে ওঠা’র মন্তব্য করতে শোনা গেল উপাচার্যকে। বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার, স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার পরে বক্তৃতা শুরু করেন উপাচার্য। সমাজ মাধ্যমে একটি ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োয় (আনন্দবাজার প্রত্রিকা ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি) উপাচার্যকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘কোভিডের সময় আমরা গ্রামে গিয়েছিলাম, গিয়ে দেখে এসেছি গ্রামের হতদরিদ্রদের কী অবস্থা। অথচ এই বীরভূমেই বোলপুর শহরে কিছু কিছু লোকের পেট ফুলেফেঁপে বড় হয়ে উঠছে পয়সা রোজগার করে, সেখানে তাদের সমর্থনও আছে। এই প্রতিবাদগুলো আমাদের করতে হবে আজকের দিনে।’’
কোন প্রসঙ্গে এ কথা বললেন তিনি?
ঘটনা হল, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের একাংশের সঙ্গে পৌষমেলা নিয়ে অতীতে নানা বিষয় নিয়ে সংঘাত বেধেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের। সিকিওরিটি মানি-সহ একাধিক প্রসঙ্গে বিশ্বভারতীকে বারবার অভিযোগে বিদ্ধ করেছেন সেই ব্যবসায়ীরা। পৌষমেলার দূষণ নিয়েও বারবার বিপাকে পড়েছে বিশ্বভারতী। দু’বছর বন্ধ থাকার পরে এ বার পৌষমেলা হওয়ার আশা দেখা গিয়েছে শান্তিনিকেতনে। এমন আবহে উপাচার্যের অভিযোগ, পৌষমেলা কিছু লোকের মুনাফা অর্জনের জায়গা। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কিছু বিষয়ে আপত্তি করছেন বলেই তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।
ওই ভিডিয়োয় তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘যাঁরা পৌষমেলায় এসে মুনাফা অর্জন করেন, তাঁদের (মেলার প্রতি) কোন দায়িত্ব নেই। আমরা বারণ করছি, আমরা আপত্তি করছি বলে আমাদের উপর অভিযোগের মাত্রা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। কই আমরা তো কেউ ওখান থেকে মুনাফা পাই না! পৌষমেলার এই গণ্ডগোল ও পরিবেশ দূষণের জন্য যখন জাতীয় পরিবেশ আদালত মামলা করে, তখন বিশ্বভারতীকেই লড়তে হয়। তখন কিন্তু পৌষমেলায় যাঁরা মুনাফা অর্জন করেন, তাঁরা আসেন না।’’
উপাচার্যের দাবি, পৌষমেলায় দূষণের জন্য রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিষদ বিশ্বভারতীকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করে। অথচ পৌষমেলার দায়িত্ব শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের, বিশ্বভারতীর নয়। উপাচার্যের কথায়, ‘‘এ বার আমরা সেটা বুঝিয়েছি। পৌষমেলা করবে ট্রাস্ট, তার সঙ্গে বিশ্বভারতীর কোনও যোগ নেই। কিন্তু, এ নিয়ে প্রচুর রাজনীতি হচ্ছে।’’ এখানেই শেষ নয়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এক জন কাউকে (বিশ্বভারতীর) টার্গেট করে দেওয়া হয়, আমরা একবারও ভেবে দেখি না, যাকে টার্গেট করা হল তার দিন কী ভাবে চলছে। কিন্তুস আমি যদি এক দিনের মাইনে বন্ধ করে দিই, সমস্ত মাস্টারমশাই, কর্মচারী আমার বাড়িতে চড়াও হবেন। অর্থাৎ আমরা অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই, কিন্তু দায়িত্ব কেউ নেব না।’’
উপাচার্যের এই সব বকত্তব্য প্রসঙ্গে প্রবীণ আশ্রমিক সৌরীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “স্বাধীনতা দিবসে দেশমাতাকে সম্মান জানানো ছাড়া অন্য কোনও প্রসঙ্গ টানাই উচিত নয়।” বিশ্বভারতীর অধ্যাপক সংগঠন ভিবিইউএফএ-র এক সদস্যও বলেন, “স্বাধীনতা দিবসের মঞ্চে এমন মন্তব্য মোটেই শোভা পায় না উপাচার্যের।” যদিও এ বিষয়ে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy