E-Paper

বাংলায় বিজেপির নজরে এ বার আরও ৬০টি আসন

নরেন্দ্র মোদী সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার এগারো বছর পূর্ণ করেছে। ওড়িশায় জিতে আসার পরে পূর্ব ভারতে বিজেপির এখন অন্যতম লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা দখল করা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২৫ ০৮:৪৪

—প্রতীকী চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গে গত বিধানসভা নির্বাচনে ষাটটি আসনে অত্যন্ত কম ব্যবধানে হেরেছিল বিজেপি। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনগুলিকে পাখির চোখ করে এগোতে চাইছে তারা। বিজেপির বক্তব্য, গত বিধানসভা নির্বাচনে দল আশিটির কাছাকাছি আসন জিতেছিল। ষাটটি আসনে হেরেছিল খুবই কম ভোটে। এ বার এই সব আসনগুলিতে ভাল ফল করলেই পশ্চিমবঙ্গে জেতার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে।

নরেন্দ্র মোদী সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার এগারো বছর পূর্ণ করেছে। ওড়িশায় জিতে আসার পরে পূর্ব ভারতে বিজেপির এখন অন্যতম লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা দখল করা। দলের এগারো বছর উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, “নিয়োগে দুর্নীতি-সহ অসংখ্য কেলেঙ্কারি, অপশাসন, স্বজনপোষণ, তুষ্টিকরণের রাজনীতি, অনুপ্রবেশ সমস্যা, নারীর নিরাপত্তাহীনতার মতো বিষয়গুলি নিয়ে রাজ্যের মানুষ তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল ভাবে ক্ষেপে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে দলকে ঐক্যবদ্ধ করে ঝাঁপাতে পারলে কাঙ্ক্ষিত ফল মিলতে পারে।”

পরিসংখ্যান বলছে, লোকসভা নির্বাচনে ২৯টি আসন জিতেও পশ্চিমবঙ্গের মোট ভোটের ৪৫.৭৬ শতাংশ পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেখানে বিজেপি মাত্র ১২টি আসন জিতে ভোট পেয়েছে ৩৮.৭৩ শতাংশ। যার অর্থ, বিজেপির থেকে সাত শতাংশ বেশি ভোট পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপির ওই কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, “২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পর থেকে পশ্চিমবঙ্গে প্রধান বিরোধী দলে পরিণত হয়েছে বিজেপি। গত তিনটি নির্বাচন বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির ভোটের ব্যবধান পাঁচ থেকে আট শতাংশ। এ বারের লোকসভা ভোটের কথা ধরলে, যে সাত শতাংশের ব্যবধান রয়েছে, তাতে বিজেপি যদি কেবল চার-পাঁচ শতাংশ ভোট বাড়াতে পারে, তা হলেই তৃণমূলকে টপকে যাওয়া সম্ভব হবে।” তাঁর যুক্তি, “বর্তমানে বাংলায় প্রধান দু’টি দল হল তৃণমূল ও বিজেপি। তাই বিজেপির যদি চার শতাংশ ভোট বাড়ে, তা হলে উল্টো দিকে তৃণমূলের চার শতাংশ ভোট কমে গিয়ে ব্যবধান শূন্যতে নেমে আসবে।”

আপাতত তাই চার থেকে পাঁচ শতাংশ ভোট বৃদ্ধির লক্ষ্য রাজ্য বিজেপির সামনে বেঁধে দিতে চাইছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় নেতাটির কথায়, “রাজ্যে মুসলিম ভোটার রয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। সেই ভোটের অধিকাংশ তৃণমূল পেয়েছে বলেই ধরে নেওয়া যায়। পরিসংখ্যান বলছে, গোটা রাজ্যের বাকি প্রায় ৭০ শতাংশ হিন্দু জনগণের মাত্র ১৫ শতাংশের ভোট পেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য দিকে, বিজেপির প্রতীকে যে ৩৮ শতাংশ ভোট পড়েছে, তার গোটাটাই হিন্দু ভোট বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। যোগ-বিয়োগ করে পড়ে থাকে ১৭ শতাংশ হিন্দু ভোট। ওই পড়ে থাকা হিন্দু ভোট ও মমতার পক্ষে থাকা হিন্দু ভোটে সিঁদ কাটা গেলেই বাড়তি চার থেকে পাঁচ শতাংশ হিন্দু ভোট বিজেপির ঘরে চলে আসবে। সে ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানের দিক থেকে রাজ্যে তৃণমূলকে টপকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিজেপির কাছে।”

পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের প্রায় ষাটটি আসনে বিজেপির সঙ্গে জয়ী তৃণমূল প্রার্থীর ব্যবধান পাঁচ থেকে সাত হাজার ভোটের। বিজেপির লক্ষ্য হল ওই ষাটটি আসনে নিজের ভোট শতাংশকে বাড়ানো। যাতে দল জেতার মতো অবস্থায় পৌঁছতে পারে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, “আমাদের প্রথম লক্ষ্য হল গত বারের ফল ধরে রাখা। সেই সঙ্গে যে ষাটটি আসনে স্বল্প ব্যবধানে হেরেছিলাম, তাতে জেতার মতো পরিস্থিতি তৈরি করা। তা হলেই তৃণমূলকে ক্ষমতা থেকে হটানো সম্ভব হবে।”

বিজেপির এক জন শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে ধর্মীয় মেরুকরণের দিকে না ঝুঁকে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সুশাসন ও রাজ্য সরকারের ব্যর্থতাকে তুলে ধরা হবে।” তৃণমূলের বেশ কয়েক জন শীর্ষস্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল বিজেপি। সেই প্রসঙ্গে বিজেপির ওই শীর্ষস্থানীয় নেতার মন্তব্য, “তৃণমূলের কোনও কোনও নেতা বিদেশ সফরের সময় ‘অপারেশন সিঁদুর’ সম্পর্কে অনেক ইতিবাচক কথা বলেছেন। তবে দুর্নীতির প্রশ্নে তাঁদের ছাড় দেওয়া হবে— এমন ভাবার কোনও কারণ নেই।” বিজেপির নেতাটির কথায়, “ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গে হিংসা একটি বড় সমস্যা। কী ভাবে এর মোকাবিলা করা যায়, দল সেই বিষয়টি মাথায় রাখছে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

BJP West Bengal Assembly Election

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy