আরও এক বার উত্তরবঙ্গে রাজবংশী তথা কামতাপুরি ‘আবেগ’ জাগিয়ে তোলার চেষ্টায় বিজেপি। তবে এ বার পৃথক রাজ্যের দাবি নিয়ে নয়, পৃথক ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে। রাজবংশী ভাষাকে সংবিধানের অষ্টম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে বুধবার রাজ্যসভায় সরব হয়েছেন বিজেপি সাংসদ অনন্ত মহারাজ (নগেন্দ্র রায়)। গত মাসে উত্তরবঙ্গের বিজেপি বিধায়কেরা একই দাবিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিয়েছেন। ২০ দিনের ব্যবধানে সেই দাবি আবার রাজ্যসভায় তোলা হল। নির্বাচনের এক বছর আগে রাজবংশী-কামতাপুরি ভাষা নিয়ে বিজেপির এই উপর্যুপরি সক্রিয়তায় ভোটব্যাঙ্ক সংহত করার কৌশল স্পষ্ট বলেই মনে করা হচ্ছে।
অনন্ত বুধবার রাজ্যসভায় ‘জ়িরো আওয়ার’-এ বিষয়টি উত্থাপন করেন। দু’মিনিট ধরে তিনি রাজবংশী ভাষার প্রাচীনত্ব, ব্যাপ্তি এবং ঐতিহ্য সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করেন। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের সরকার যাতে ওই দাবি মেনে নেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত হয়, তার জন্য রাজবংশী ভাষার ইতিহাসকে হিন্দুত্বের সঙ্গে জুড়ে দেখানোর চেষ্টাও করেন কোচবিহারের এই রাজবংশী নেতা। তিনি বলেন, ‘‘রাজবংশী ভাষা নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে আসা ওঁ-কারের সঙ্গে উচ্চারিত হয়। যেমন খাইচোং গেইচোং লিচোং দিচোং।’’

গত মাসে উত্তরবঙ্গের বিধায়কেরা এই চিঠি পাঠিয়েছেন অমিত শাহকে।
সংবিধানের অষ্টম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত হলে সাংবিধানিক ভাবে স্বতন্ত্র ভাষার মর্যাদা পাবে রাজবংশী। এখনও পর্যন্ত রাজবংশী-কামতাপুরিকে ‘উপভাষা’ বা ‘আঞ্চলিক বুলি’ হিসেবেই দেখা হয়। ভাষার মর্যাদা পেলে সংসদে রাজবংশী-কামতাপুরিতে ভাষণ দেওয়া যাবে, সংসদে শপথ নেওয়া যাবে, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবেও ওই ভাষা ব্যবহার করা যাবে।
রাজবংশী-কামতাপুরিকে অষ্টম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তুলে ২৪ জন বিজেপি বিধায়কের সাক্ষরিত চিঠির (যা শাহের কাছে জমা পড়েছে) স্বাক্ষরকারীদের অন্যতম ফালাকাটার বিধায়ক তথা রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক দীপক বর্মণ মানতে অবশ্য নারাজ যে, রাজবংশী-কামতাপুরি নিয়ে বিজেপির আচমকা উৎসাহ একটি ‘নির্বাচনী কৌশল’। তাঁর বরং পাল্টা দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই উত্তরবঙ্গে ভাষা নিয়ে বিভেদের রাজনীতি করতে চাইছেন।’’ দীপকের ব্যাখ্যা, ‘‘রাজবংশী আর কামতাপুরি একই ভাষা। এক এক এলাকায় এক একটা নামে ডাকা হয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী দুই ভাষাকে আলাদা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে দুটো আলাদা ভাষা অ্যাকাডেমি তৈরি করেছিলেন। তার প্রতিবাদ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মনোনীত ব্যক্তিই রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমির সর্বোচ্চ পদ থেকে ইস্তফা দেন।’’