তাপস-সুদীপ লড়াইয়ের সূচনা তমোঘ্নকে ঘিরেই। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করছেন, তিনি হাতি। তৃণমূল সাংসদ বহু প্রচলিত প্রবাদ ‘হাতি চলে বাজার, কুত্তা ভোঁকে হাজার’ বলে দলেরই বিধায়ক তাপস রায়কে আক্রমণ করেছেন। জবাবে সুদীপকে ‘সাদা হাতি’ বলে তাপস নিজেকে দলের প্রতি বিশ্বস্ত সারমেয়র সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা দলের ডোবারম্যান, আমরা দলের গ্রে-হাউন্ড, গ্রেট-ডেন। সতর্ক করি, শত্রু দেখলে তেড়ে যাই।’’
তৃণমূলের কলকাতা উত্তরের সাংসদ বনাম বরাহনগরের বিধায়কের মধ্যের এই লড়াইয়ের সূচনা বিজেপি নেতা তমোঘ্ন ঘোষকে ঘিরে। তমোঘ্ন অবশ্য বিজেপিতে নতুন নেতা। তৃণমূল ছাত্র সংগঠন করতে করতেই ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বিজেপিতে যোগ দেন। আর গত সোমবার তাঁকেই কলকাতা উত্তর জেলার সভাপতি করেছে গেরুয়া শিবির। ওই পদে এত দিন ছিলেন সদ্য অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কল্যাণ চৌবে। তমোঘ্ন দায়িত্ব পেতেই তাপস সামনে আনেন এক অন্য অভিযোগ। ইঙ্গিত করেন, সুদীপের কথাতেই তমোঘ্নকে উত্তর কলকাতা বিজেপির সভাপতি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বলেন, ওঁদের (তমোঘ্ন ঘোষ) বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়। অষ্টমীর দিন সুদীপ, শুভেন্দু দু’জনেই ওদের বাড়ি গিয়েছিলেন। আরও এক জন গিয়েছিলেন। কল্যাণ চৌবেও ছিলেন।’’ তাঁর আরও অভিযোগ ছিল, ‘‘দলনেত্রী (মমতা)-র ভাবমূর্তিকে ব্যক্তিগত স্বার্থে কাজে লাগিয়ে নিজের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার পাশাপাশি বিরোধী দল বিজেপির সঙ্গে সুসম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছেন সুদীপ।’’এখান থেকেই শুরু হয় সুদীপ-তাপস লড়াই। মঙ্গলবার শুরু হওয়া সেই যুদ্ধ থামাতে চেয়েও পারেনি তৃণমূল। বরং, শুক্রবার সেই আগুনে নতুন করে ঘি ঢেলেছেন তাপস। এমন পরিস্থিতিতে যাঁকে ঘিরে এত কিছু, সেই তমোঘ্ন একেবারে চুপ। আনন্দবাজার অনলাইন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে প্রথমে কোনও কথাই বলতে চাননি। পরে বলেন, ‘‘এটা অন্য দলের বিষয়। আমি এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্যই করতে চাই না।’’ সুদীপ কি তাঁদের বাড়ির দুর্গাপুজোয় গিয়েছিলেন? তিনি কি তাপসের অভিযোগ মতো সুদীপের সুপারিশেই বিজেপির জেলা সভাপতি হয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তমোঘ্নের নির্লিপ্ত জবাব, ‘‘কে কী করছেন আমি জানি না। আমি কিছু বলব না। দল যে দায়িত্ব দিয়েছে সেটা ঠিক করে পালন করাই আমার কাজ। আর আমি তো তৃণমূলটাও করেছি দীর্ঘ দিন। আর চুপি চুপি নয়, প্রকাশ্যেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছি।’’
তমোঘ্ন তৃণমূলে থাকার সময়ে শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলেই জানা যায়। আর শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে পরেই তিনিও গেরুয়া শিবিরে আসেন। তবে তমোঘ্নের রাজনৈতিক জীবন শুরু ছাত্রবেলা থেকেই। আমহার্স্ট স্ট্রিট সিটি কলেজে ছাত্র পরিষদ করতেন। লেখাপড়া শেষ হলে বিদেশে চাকরি করতে চলে যান। তাঁর বাবা তপন ঘোষ এখন তৃণমূলে থাকলেও একটা সময় ছিলেন কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্রের অনুগামী। সোমেন প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেস তৈরি করার পরে সেই দলের ছাত্র সংগঠনের দায়িত্ব তমোঘ্নকে দিয়েছিলেন। সোমেনের সঙ্গে বাবা ও ছেলে তপন-তমোঘ্ন তৃণমূলে যোগ দেন।
তৃণমূলে ছাত্র সংগঠন করলেও সে ভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাননি তমোঘ্ন। বর্তমানের বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা যখন টিএমসিপির রাজ্য সভাপতি হন তখন সাধারণ সম্পাদক তমোঘ্ন। টানা ১০ বছর তিনি সেই পদে ছিলেন। কিন্তু ২০১৪ সালে শঙ্কুদেবকে সরানোর সময়ে নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তমোঘ্নকে ছাত্র সংগঠনের রাজ্য সভাপতি করার আর্জি জানিয়েছিলেন সুদীপ। মমতা অবশ্য তা না শুনে দায়িত্ব দেন অশোক রুদ্রকে। এখন তমোঘ্নের সঙ্গে সুদীপের ‘সুসম্পর্ক’ নিয়ে বলতে গিয়ে তেমনই এক প্রসঙ্গ টেনেছেন তাপস।
তমোঘ্নের মতো তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা সজল ঘোষও একটা সময় ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনিও কংগ্রেস থেকে তৃণমূল কংগ্রেস হয়ে বিজেপিতে এসেছেন। এখন তৈরি হওয়া বিতর্ক নিয়ে সজলের বক্তব্য, ‘‘ওঁদের (সুদীপ ও তাপস) লড়াই করার জন্য একটা রিং দরকার ছিল। খুঁজে পাচ্ছিল না। এখন সেই লড়াইটার জন্যই এই সব প্রসঙ্গ টেনে আনছেন।’’ সুদীপের সুপারিশে বিজেপিতে দায়িত্ব পাওয়ার অভিযোগকে ‘হাস্যকর’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন সুকান্ত মজুমদার। বিজেপি রাজ্য সভাপতি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘বিজেপি সম্পর্কে যাঁদের বিন্দুমাত্র ধারণা রয়েছে তাঁরা এটা বিশ্বাস করবেন না। আমাদের সাংগঠনিক কাঠামো অনেক মজবুত। অনেক শৃঙ্খলাপরায়ণ। তৃণমূলের মতো কে কার পছন্দ দেখে দায়িত্ব দেওয়া হয় না। অন্য দলের কোনও নেতার কথা শোনার তো প্রশ্নই নেই। যাঁরা এমন অভিযোগ করছেন তাঁদের বৌদ্ধিক সুস্থতা নিয়েই আমার মনে প্রশ্ন জাগছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy