পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ‘বিস্তারক’ বাছতে এ বার ‘লিখিত পরীক্ষা’ এবং ‘গ্রুপ ডিসকাশন’ পর্বের আয়োজন করছে বিজেপি। ভোটের বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে পৌঁছে যাবেন একজন করে ‘বিস্তারক’। তাঁরা এলাকায় গিয়ে সংগঠন বিস্তার এবং সাংগঠনিক সমম্বয়ের কাজ দেখভাল করবেন। এই কৌশল নতুন নয়। ২০২১ সালেও ‘বিস্তারক’ নিয়োগ করেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু সে বারের মতো এ বার আর আবেদন করলেই ‘বিস্তারক’ হওয়া যাবে না। দু’-তিন রকম মাপকাঠিতে পরখ করে ‘বিস্তারক’ হিসেবে নিয়োগ করবে বিজেপি।
২০২১ সালের নির্বাচনের আগেও প্রত্যেক বিধানসভার জন্য এক জন করে ‘বিস্তারক’ নিয়োগ করেছিল। এ বার সেই পথে হাঁটতে চলেছে বঙ্গ বিজেপি। তবে নিয়োগ পদ্ধতিতে পরিবর্তন করতে চলেছে তারা। গত বার আবেদনের ভিত্তিতেই নিয়োগপর্ব সেরেছিল বিজেপি। আবেদনকারীদের কোনও ‘পরীক্ষা’য় বসতে হয়নি। কিন্তু এ বার তা হচ্ছে। রীতিমতো পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পরেই হবে ‘বিস্তারক’ নিয়োগ। শুধু লিখিত পরীক্ষা নয়, ‘গ্রুপ ডিসকাশন’ পর্বও হবে নিয়োগ পদ্ধতিতে।
বিজেপি সূত্রে খবর, গত বারের তুলনায় এ বার আবেদনকারীর সংখ্যা অনেক বেশি। প্রায় ৫০০ জন মতো ‘বিস্তারক’ হতে চেয়ে আবেদন করেছেন। কিন্তু আবেদনকারীদের সকলকে নেওয়া হচ্ছে না। উল্লেখ্য, আগে থেকেই কিছু বিস্তারক রয়েছেন। বাকিদের বেছে নেওয়া হবে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে। আবেদন বেশি জমা পড়েছে উত্তরবঙ্গ এবং রাঢ়বঙ্গ থেকে। রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি রথীন্দ্রনাথ বসু জানান, আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। রথীন্দ্রনাথের উপরই বিস্তারক বাছাইয়ের দায়িত্ব রয়েছে। বিজেপি সূত্রের খবর, এ রাজ্যের বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসলই চাইছেন বাছাইপর্বের মধ্যে দিয়েই বিস্তারক নিয়োগ করা হোক।
আরও পড়ুন:
প্রথমে ‘লিখিত পরীক্ষা’ এবং পরে ‘গ্রুপ ডিসকাশন’-এর মাধ্যমে বিস্তারক বাছাইয়ের প্রক্রিয়াকে অনেকেই উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক নিয়োগের সঙ্গেও তুলনা করছেন। তবে উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক নিয়োগের ভঙ্গিতে বিস্তারক বাছার বিষয় সরাসরি উল্লেখ করতে চাইছেন না রথীন্দ্রনাথ। তাঁর কথায়, ‘‘নেতৃত্ব চাইছেন একটু দেখেশুনেই বিস্তারক নিয়োগ করা হোক। আবেদনকারীদের মধ্যে কারা দলের ইতিহাস ভাল জানেন, কারা মতাদর্শ ভাল বোঝেন, তা আমরা একটু পরখ করে নিতে চাইছি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়ে এই বিষয়গুলি বুঝে নেওয়া হবে।’’ তবে বিষয়টিকে এ ভাবে পরীক্ষা বলতে নারাজ তিনি।
রথীন্দ্রনাথ আরও জানিয়ছেন, বিস্তারক বাছাইয়ে কিছু মাপকাঠি রয়েছে। সেই মাপকাঠির বিচারেই বাছাইপর্ব চলবে। কোন কোন মাপকাঠিতে পরখ করা হবে আবেদনকারীদের? রথীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন, আবেদনকারী কতদূর পড়াশোনা করেছেন, তা দেখা হবে। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করলে আবেদন করার সুযোগ থাকলেও স্নাতক হলে অগ্রাধিকার মিলবে। এ ছাড়াও, আবেদনকারীর আচার-ব্যবহার কেমন, তা-ও বিচার করে দেখা হবে। আবেদনকারী যে জেলার বাসিন্দা, সেই জেলার নেতৃত্ব এবং স্থানীয়দের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, গত বারের নিয়মে আরও একটি বদল করা হয়েছে। বিবাহিত বা অবিবাহিত সকলেই আবেদনের সুযোগ পেয়েছেন এ বার।