Advertisement
E-Paper

‘স্যার যেমন চেয়েছিলেন, সে ভাবেই রিপোর্ট তৈরি হল’

এ অনেকটা ‘ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল’-এর মতো। রোগীর রক্তপরীক্ষার ফল ঠিকই ছিল। কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শে তা বদলে গেল! উলুবেড়িয়ার একটি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির কর্মী ফোনে সংশ্লিষ্ট রোগীর স্বাস্থ্যপরীক্ষার রিপোর্ট পড়ে শোনাতে, ডাক্তার নির্বিকার ভাবে তাঁকে নির্দেশ দিলেন, হিমগ্লোবিনের মাত্রা একটু কমাতে হবে।

দেবজিৎ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৭ ০৩:১৫

এ অনেকটা ‘ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল’-এর মতো। রোগীর রক্তপরীক্ষার ফল ঠিকই ছিল। কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শে তা বদলে গেল! উলুবেড়িয়ার একটি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির কর্মী ফোনে সংশ্লিষ্ট রোগীর স্বাস্থ্যপরীক্ষার রিপোর্ট পড়ে শোনাতে, ডাক্তার নির্বিকার ভাবে তাঁকে নির্দেশ দিলেন, হিমগ্লোবিনের মাত্রা একটু কমাতে হবে। বাড়াতে হবে সুগারের পরিমাণ। শুনে আঁতকে উঠেছিলেন ওই কর্মী। ডাক্তারের মুখের উপরে কিছু বলার সাহস দেখাতে না পারলেও নিজেকেই প্রশ্ন করেছিলেন, তা আবার হয় নাকি?

তেমনই হয়েছিল। ‘‘স্যার যেমন চেয়েছিলেন, সে ভাবেই রিপোর্ট তৈরি হল’’— জানান ওই কর্মী। তাঁর মুখেই শোনা, ওই রিপোর্ট নিয়ে রোগী আবার গিয়েছিলেন ডাক্তারের কাছে, ফিরে এসেছিলেন ফের এক দফা রক্ত পরীক্ষার সুপারিশ নিয়ে। এই যাওয়া-আসায় দু’দিকেই কাটল রোগীর পকেট। তার ভাগ পেলেন ডাক্তার, প্যাথলজিক্যাল ক্লিনিক দু’পক্ষই।

আরও পড়ুন: আবার প্যাঁচে অ্যাপোলো, রোগী মৃত্যুতে নেয়নি ব্যবস্থা

দু’হাতে টাকা কামাতে চিকিৎসক বা নার্সিংহোমের নির্দেশে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট বদলে দেওয়ার এমন অভিযোগ প্রায় সর্বত্র। আবার, প্রয়োজন না থাকলেও একই পরীক্ষা প্রতিদিন করার অভিযোগও কম নয়, বলছিলেন ওই কর্মী। তাঁর কথায়, ‘‘ল্যাবরেটরি ও ডাক্তারদের একাংশের গাঁটছড়া এতই মজবুত যে ভাঙা খুব দুষ্কর। প্রশাসনই পারে সেই মৌচাকে ঢিল মারতে।’’ বছর কুড়ি বহু ক্লিনিকে কাজ করা ওই কর্মীর অভিজ্ঞতা, ‘‘জেলাগুলিতে এই প্রবণতা বেশি। বিশেষ করে যে নার্সিংহোমের নিজস্ব ল্যাবরেটরি আছে সেখানেই রিপোর্টে বদল ঘটে বেশি। ’’

বর্ধমান শহরের এক ল্যাবরেটরি মালিক রোগী পাঠানোর শর্তে জনা চারেক ডাক্তারকে লাখখানেকের মতো আগাম দিয়েছিলেন দিন কুড়ি আগে। কিন্তু নবান্নের পদক্ষেপে শর্তপূরণে কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে।

বেসরকারি হাসপাতালগুলির যেমন-তেমন পরীক্ষা ও বিলে লাগাম টানতে বিধানসভায় বিল এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতে প্যাথলজিক্যাল ক্লিনিক ছাড় পেলেও পরের দফায় সেগুলির কাজেও রাশ টানার ভাবনা রয়েছে। কলকাতার সায়েন্টিফিক ক্লিনিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির কর্তা সুবীর দত্তের মতে, নার্সিংহোম ও ডাক্তারদের একাংশের সঙ্গে প্যাথলজিক্যাল ক্লিনিকগুলির অসাধু যোগ খুবই মারাত্মক। তাঁর কথায়, ‘‘যে রক্ত পরীক্ষার মূল্য এত দিনেও ৯০ টাকার বেশি নিতে পারলাম না, সেটাই বহু নার্সিংহোম দু-তিন গুণ বেশি টাকা নিচ্ছে।’’ শহরেরই অন্য একটি নামী প্যাথলজিক্যাল ক্লিনিকের কর্ণধার বলেন, ‘‘যথার্থ চিকিৎসার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই রিপোর্ট বিকৃত করলে রোগীরই আদতে ক্ষতি।’’

Doctors Blood Report Extra Income
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy