Advertisement
E-Paper

দেহ এল রিয়ার, ভেঙে পড়ল গ্রাম

সোমবার দুপুরে পূর্ব বর্ধমান জেলার একটি নার্সিং ট্রেনিং স্কুলের হস্টেলের ঘর থেকে উদ্ধার হয় বছর উনিশের রিয়া দে-র দেহ। বর্ধমানে ময়না-তদন্তের পরে, তাঁর দেহ গ্রামে ফিরতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়। তার আগেই বাড়িতে সারা গ্রাম যেন ভেঙে পড়েছিল। 

অভিজিৎ অধিকারী 

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:০৬
শোকতপ্ত রিয়ার বাবা। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

শোকতপ্ত রিয়ার বাবা। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

দুই তরুণীই স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মাঝপথেই নিভে গিয়েছে তাঁদের স্বপ্ন। কোতুলপুরের তাজপুরের সমাপ্তি রুইদাস আর পাশের ব্লক বিষ্ণুপুরের বনমালিপুরের রিয়া দে— দুই তরুণীর অস্বাভাবিক মৃত্যু যেন দু’টি গ্রামকে শোকের একই সুতোয় বেঁধে দিয়েছে। দুই গ্রামেরই প্রশ্ন— স্বপ্নের কাছাকাছি গিয়েও কেন এই পরিণতি ওঁদের?

সোমবার দুপুরে পূর্ব বর্ধমান জেলার একটি নার্সিং ট্রেনিং স্কুলের হস্টেলের ঘর থেকে উদ্ধার হয় বছর উনিশের রিয়া দে-র দেহ। বর্ধমানে ময়না-তদন্তের পরে, তাঁর দেহ গ্রামে ফিরতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়। তার আগেই বাড়িতে সারা গ্রাম যেন ভেঙে পড়েছিল।

মা পম্পা দে শোকে জ্ঞান হারাচ্ছেন বারবার। বাবা নিরঞ্জন দে উঠোনে বসে বিড় বিড় করে বলছিলেন, “হতে পারে না। আমার মেয়েকে আমি চিনি। আত্মহত্যা করতে পারে না সে। একান্নবর্তী পরিবারের সবাইকে মাতিয়ে রাখত যে মেয়ে, সে এ ভাবে চলে যাবে বিশ্বাস করি না। এই মৃত্যু-রহস্যের তদন্ত চাই।’’

তিনি দাবি করেন, ‘সুইসাইড নোট’ পর্যন্ত তাঁকে দেখানো হয়নি। হস্টেলে একটি ঘরে রিয়ারা চার জন থাকতেন। নিরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘ঘরে একটি ছাত্রী গলায় ফাঁস লাগিয়ে মারা গেল—এটা কী ভাবে সম্ভব? কেন ছিল না সেখানে নিরাপত্তা?’’ তদন্ত চাই। কিন্তু চাষিবাসি মানুষ। বারবার থানা-আদালতে যেতে পারব না। সরকারের উচিত এই মৃত্যুর প্রকৃত তদন্ত করা।”

শনিবার কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যালের হস্টেলে নার্সিং পড়ুয়া সমাপ্তির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। সেখান থেকেও ‘সুইসাইড নোট’ উদ্ধারের দাবি করেন কর্তৃপক্ষ। যদিও তাঁর মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে পরিবারের মধ্যে। তাঁর বাবা সুকুমার রুইদাসও নিজে লিখিত অভিযোগ করেননি। কিন্তু প্রশাসনের কাছে মেয়ের মৃত্যুর তদন্ত দাবি করেছেন।

এ দিন স্বাস্থ্যভবন থেকে জানানো হয়েছে, সমাপ্তির মতোই রিয়ার মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখবে তদন্তে কমিটি। পূর্ব বর্ধমানের ডেপুটি সিএমওএইচ-র (২) নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঠিক কী কারণে ওই এএনএম (অগজ়িলিয়ারি নার্সিং মিডওয়াইফারি) ছাত্রীর মৃত্যু হল, তা বিশদে জানিয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা করতে বলা হয়েছে।

এ দিন বনমালিপুরে গিয়ে তাজপুরের মতোই একই প্রশ্ন শোনা গিয়েছে বাসিন্দাদের মুখে— অল্প কিছু দিন ক্লাস করার পরে কী এমন হল যে মেয়েটা চলে গেল? রিয়ার দিদি মৌমিতা বলেন, ‘‘কালীপুজোর সময়ে আমাদের শেষ দেখা। ওর মনে মানসিক দ্বন্দ্ব একটা ছিলই। ভূগোল নিয়ে এক বছর পড়ে ছেড়ে দিয়ে এএনএম পড়তে শুরু করে। তাঁর মাঝেই জিএনএম (জেনারেল নার্সিং মিডওয়াইফারি) পড়ার সুযোগ পাওয়া—কোনটা করবে ভেবে পাচ্ছিল না। তবে শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এএনএম-ই পড়বে। কিন্তু এ ভাবে চলে যাবে, তা ভাবিনি। এই মৃত্যুর রহস্য বের করা দরকার।’’

খুড়তুতো ভাই সুমন দে কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘‘দিদি বলেছিল, শনিবার বাড়ি আসবে। আমিও দুর্গাপুর থেকে বাড়ি আসব ঠিক করেছিলাম। তার আগেই দিদি চলে গেল।’’

রিয়াকে শেষবার দেখতে আসা গ্রামবাসী ভিড়ে ছিলেন তাঁর স্কুলের শিক্ষকেরাও। পড়শি পরেশ মানিক বলেন, “এক সপ্তাহের মধ্যে জেলার দুই প্রান্তের দু’টি মেধাবী তরুণী চলে গেল। কোন ভরসায় আমরা গ্রামের মেয়েদের বাইরে পড়তে পাঠাব জানি না। তদন্ত চাই।’’

তদন্তের অপেক্ষায় সমাপ্তির পরিবারও। তাঁর বাবার বক্তব্য, ‘‘দিনরাত মাঠে-ঘাটে কাজ করি, এটাই আমাদের জীবন। মেয়েটা তো পড়াশোনায় ভাল ছিল। কেন এ ভাবে চলে গেল, তা কি জানতে পারব না?’’

Bishnupur Nursing Student Suicide
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy