Advertisement
E-Paper

ইডির উপরে হামলা কোন ভয় থেকে? আনন্দবাজার অনলাইনকে অনেক জবাব দিলেন শাহজাহানের ভাই

তবে স্থানীয় মানুষজন ইডি অফিসারদের উপর চড়াও হয়ে ঠিক কাজ করেননি বলেও মনে করেন শাহজাহান শেখের ভাই আলমগীর। তাঁর মতে, আইন নিজেদের হাতে নেওয়া ঠিক হয়নি।

সারমিন বেগম

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:৪৮
image of alamgir

বাঁদিক থেকে শাহজাহান শেখ, আক্রান্ত ইডি আধিকারিক, শেখ আলমগির। — ফাইল চিত্র।

তাঁর ভাইকে হয়তো ‘ফাঁসানো’ হচ্ছিল! সবটাই হয়তো এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র ‘পরিকল্পনামাফিক’! এমনটাই মনে করছেন ‘পলাতক’ তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের ভাই শেখ আলমগীর। তিনি মনে করেন, ‘ফাঁসানো’ হতে পারে, সেই ভয় থেকেই হয়তো ইডির অফিসারদের উপর চড়াও হয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। তিনি আরও প্রশ্ন তুলেছেন, দিন দুই আগে বসিরহাটে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরেই কেন তাঁর ভাইয়ের বাড়িতে হানা দিতে এসেছিল ইডি! এর মধ্যেও কি কোনও ‘যোগ’ রয়েছে। তবে স্থানীয় মানুষজন ইডি আধিকারিকদের উপর চড়াও হয়ে ঠিক কাজ করেননি বলেও মনে করেন তিনি। তাঁর মতে, আইন নিজেদের হাতে নেওয়া ঠিক হয়নি। তাঁর বিশ্বাস, দাদাও আইনের পথই ধরবেন।

গত শুক্রবার সকালে সন্দেশখালিতে শাহজাহান শেখের বাড়িতে হানা দেয় ইডি। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের তদন্তের সূত্র ধরে। সে সময় ইডির অফিসারদের উপর চড়াও হন স্থানীয়েরা। যদিও শাহজাহানের খোঁজ মেলেনি। দাদার সঙ্গে রেশন দুর্নীতির যে যোগ থাকতে পারে, তা ভাবতেই পারছেন না ভাই আলমগীর। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘দাদা সকলকে সাহায্য করেন। রেশন দুর্নীতির সঙ্গে যোগ থাকতে পারে, আমার মনেই আসে না। ভাবতেই পারি না সম্পর্ক থাকতে পারে।’’ তা হলে কি তাঁর দাদার বাড়িতে হানা পরিকল্পনামাফিক! সেই নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন খোদ আলমগীর। তাঁর কথায়, ‘‘আমি কেন, সকলেই ভাবছেন। পরকল্পিত না হওয়ার কোনও কারণ নেই। শুভেন্দু বসিরহাটে বলেছিলেন, শেখ শাহজাহানের নিরাপত্তা আমার হাতে। খুব তাড়াতাড়ি ওঁর ব্যবস্থা করব। তার দু’দিন পর ইডি এল।’’

আলমগীরের দাবি, এ সবের পরেই স্থানীয় জনগণের মধ্যে ‘উত্তেজনা’ তৈরি হয়েছিল। তাঁরা ভয়ও পেয়েছিলেন। তাঁদের ধারণা হয়েছিল, হয়তো শাহজাহানকে ‘ফাঁসানো’ হতে পারে। আলমগীর নিজে সে সময় উপস্থিত ছিলেন না। মসজিদে গিয়েছিলেন নমাজ পড়তে। তবে সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়ির সামনে কী ঘটেছিল গত শুক্রবার, তা তিনি স্থানীয়দের মুখ থেকেই শুনেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মুখ থেকে শুনেছি। ইডির অফিসারেরা একটা গাড়ি শাহজাহানের ঘরের কাছে নিয়ে এসেছিলেন। তাতে স্থানীয়দের অনুমান হয়েছিল, গাড়িতে করে টাকা নিয়ে এসে শাহজাহানের ঘরে ঢুকিয়ে ইডি ফাঁসাতে পারে।’’ আলমগীর জানান, এই কারণেই ভয় পেয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। তিনি বলেন, ‘‘এই নিয়েই ভয় তৈরি হচ্ছিল গ্রামের মানুষের মধ্যে। তাই হইহই করেন। গাড়ি ঘিরে তারা দাঁড়িয়ে পড়েন। অনেক মহিলাও ছিলেন।’’

আলমগীর জানান, এর পরেই গাড়ি টেনে নিয়ে বেরিয়ে যান ইডি আধিকারিকেরা। পিছন পিছন জনগণও বেরিয়ে যান। তাঁর কথায়, ‘‘ভিডিয়ো ফুটেজ দেখেছি। ইডি আধিকারিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ, ইটপাটকেল চালাচালি হয়নি।’’ আলমগীর আরও বলেন, ‘‘এলাকার মানুষের সন্দেহ, পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে (ইডি) নিজের লোকই হয়তো গাড়ি ভেঙেছেন।’’ ওই ঘটনায় ইডির তিন আধিকারিক আহত হয়েছিলেন। এক জনের আঘাত ছিল গুরুতর। এই প্রসঙ্গে আলমগীর সাফ জানান, কাজটি সেদিন ঠিক হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি মনে করি, যা হয়েছিল, ঠিক হয়নি, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নই। আইনকে কাজ করতে দিতে হবে। তারা নিজেদের ক্যামেরা থেকে ইডির কৌশল ক্যামেরাবন্দি করার চেষ্টা করলে সকলের জন্য ভাল হত।’’

এ সবের নেপথ্যে শুভেন্দুর ‘উস্কানিমূলক বক্তব্য’-কেই দায়ী করছেন আলমগীর। তিনি স্পষ্টই বলেন, ‘‘জনগণের মধ্যে হয়তো উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল।’’ দিন দুই আগে শুভেন্দু এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্ট দিয়ে অভিযোগ করেছিলেন, ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার নেপথ্যে রয়েছেন এই আলমগীরও। কিন্তু শাহজাহানের ভাই না মানতে চাননি। তিনি জানান, ঘটনার সময় মসজিদে গিয়েছিলেন। ফেরার সময় শোনেন ইডি হানার কথা। গ্রামের কিছু প্রবীণ ‘মুরুব্বি’-দের পরামর্শে তিনি আর সেদিন বাড়ি ফেরেননি। বাচ্চাদের পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ায় পরিবার আগে থেকেই বাড়ির বাইরে ছিলেন। যদিও এই ঘটনার পর বাড়িতে ফিরতে চাইছিল না আলমগীরের পরিবার। তিনি বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে আনেন। আলমগীর জানিয়েছেন, ভয়ে রয়েছেন পরিবারের সদস্যেরা। বাচ্চারা স্কুল যেতে পারছে না।

শুক্রবার ভোরে যে বাড়ির দরজায় ধাক্কা দিয়েছিলেন ইডি আধিকারিকেরা, তার আগের রাতে সেখানেই কি ছিলেন শাহজাহান? ভাই আলমগীর এ বিষয়ে নিশ্চিত নন বলেই জানিয়েছেন। তিনি জানান, যে খানে হানা দিয়েছিল ইডি, সেটি ছিল তাঁদের পৈতৃক ভিটে। চার ভাই পাশাপাশি বাড়িতে বাস করেন। শাহজাহান যদিও বেশির ভাগ সময়ই থাকতেন নিজের সরবেড়িয়ার বাড়িতে। তাঁর কথায়, ‘‘শিওর নই, যে দাদা রাতে এসেছিলেন। হয়তো এসেছিলেন।’’ ইডির অভিযোগ, শাহজাহানের ফোনের লোকেশন দেখিয়েছে, ওই বাড়িতেই ছিলেন তিনি। এই প্রসঙ্গে আলমগীর বলেন, ‘‘অনুমান, ইডি, সিবিআইও বলছে, ফোনের লোকেশন দেখাচ্ছে, ওই বাড়িতেই হয়তো ছিলেন দাদা। উনি যখন সেখানে থাকেন, ভোরে হাঁটতে যান। সে সময় বাড়িতে ফোন রেখে বার হন। তখনও হয়তো তা-ই করেছিলেন।’’

আলমগীর এও জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে শুক্রবারের পর থেকে কোনও যোগাযোগ হয়নি তাঁর দাদার। তাঁর কথায়, ‘‘এটাই বলি, যদি দাদা শুনে থাকেন, আমরা আইনের ঊর্ধ্বে নই। আমার ধারণা, দাদা আইনের পথই ধরবেন। আমার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’’ জল্পনা, বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছেন শাহজাহান। অভিযোগ মানেননি আলমগীর। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপির লোকই বলছে। বাংলাদেশে পালাতে গেলে, বিজেপির একটা অংশ সুবিধা করে দিলে তবেই যেতে পারবেন। কেন্দ্রীয় বাহিনী, বিএসএফ কেন্দ্রের হাতে। তাই বিজেপির একটা অংশ সাহায্য না করলে সম্ভব নয়।’’

ED Attacked in Sandeshkhali ED TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy