Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Partha Chatterjee

Partha Chatterjee: আমিই পার্থের ঘনিষ্ঠ, ঝাড়খণ্ড গিয়েছিলাম, টানা আয়কর হানার শেষে স্বীকারোক্তি ব্যবসায়ীর

আয়কর দফতরের আধিকারিকরা সূত্র মারফত খবর পান, ওই হোটেলে এসেছেন পার্থের এক সঙ্গী। বেশ কিছু দিন ধরে তিনি আয়কর দফতরের নজরে ছিলেন।

বাঁ দিকে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং মাঝখানে কৌস্তুভ রায় (সাদা জামা পরা)।

বাঁ দিকে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং মাঝখানে কৌস্তুভ রায় (সাদা জামা পরা)।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২২ ২২:১৩
Share: Save:

রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এক ‘ঘনিষ্ঠ’ জনের খোঁজে ঝাড়খণ্ডের হজারীবাগের একটি হোটেলে হানা দেন আয়কর দফতরের আধিকারিকরা। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের এমন খবর প্রকাশ্যে আসার পরে কে সেই ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়। অবশেষে কলকাতায় নবান্ন ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত কৌস্তুভ রায় জানালেন তিনিই সেই ব্যবসায়ী। তবে টাকা পাচারের যে অভিযোগ উঠেছে তা অস্বীকার করে তিনি জানিয়েছেন, বেড়ানোর উদ্দেশেই তিনি হজারীবাগ গিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে কোনও টাকাপয়সা ছিল না বলে দাবি করার পাশাপাশি পিটিআইয়ের খবরের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কৌস্তুভ। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর সংস্থায় কর্মরত এক সাংবাদিককে নিয়ে নিজের গাড়িতেই তিনি হজারীবাগ গিয়েছিলেন।

পিটিআইয়ের ওই খবর অনুযায়ী, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পার্থ-ঘনিষ্ঠ ওই ব্যক্তির খোঁজে তল্লাশি চালান আয়কর দফতরের আধিকারিকরা। শুক্রবার রাতে হজারীবাগ জেলার একটি হোটেলে যান তাঁরা। খবরে প্রকাশ, আয়কর দফতরের আধিকারিকরা সূত্র মারফত খবর পান, ওই হোটেলে এসেছেন পার্থের এক সঙ্গী। বেশ কিছু দিন ধরে তিনি আয়কর দফতরের নজরে ছিলেন। যদিও হোটেলে আয়কর আধিকারিকরা পৌঁছনোর আগেই তিনি পালিয়ে যান। সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর তরফে আয়কর দফতরকে জানানো হয় পার্থ-ঘনিষ্ঠ ওই ব্যক্তির কাছে প্রচুর নগদ টাকা রয়েছে। এর পরেই ওই ব্যক্তির খোঁজ শুরু হয়।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, প্রথমে ওই হোটেলের সমস্ত প্রবেশপথ বন্ধ করে দেন আয়কর আধিকারিকরা। মাল্টিপ্লেক্স, হোটেল, অনুষ্ঠান বাড়ি— সমস্ত গেট বন্ধ করে খোঁজ শুরু হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আয়কর দফতরের এক কর্তা পিটিআইকে জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে আট ঘণ্টা ওই হোটেলে তল্লাশি চলে। কিন্তু কোনও ভাবে পার্থ-ঘনিষ্ঠকে ধরা যায়নি। তবে হোটেলকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁরা জানতে পারেন, কলকাতা থেকে সরকারি গাড়ি চেপে সেখানে পৌঁছেছিলেন ওই ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে ছিল ঢাউস একটি ব্যাগ।

হজারীবাগ যাওয়ার কথা স্বীকার করে কৌস্তুভ আনন্দবাজার অনলাইনকে জানান, তিনি ওই হোটেলে যে উঠেছিলেন সেটা ঠিক। তবে তাঁর সঙ্গে কোনও টাকা ভর্তি ব্যাগ ছিল না। ছিল না সরকারি গাড়িও। একই সঙ্গে দাবি করেন, তিনি যে হেতু ওয়াই প্লাস ক্যাটেগরির সরকারি নিরাপত্তা পান, তাই কোথায় গিয়েছেন, কী করেছেন সবটাই ঝাড়খণ্ড পুলিশের জানা রয়েছে। তিনি কলকাতায় ফেরার পরে তাঁর বাড়ি ও দফতর-সহ একাধিক জায়গায় যে প্রায় চার দিন ধরে টানা কেন্দ্রীয় সংস্থার তল্লাশি চলে সেটা জানিয়ে কৌস্তুভ বলেন, ‘‘বাড়ি ও অফিস ছাড়াও আমার সংস্থার অনেক কর্মীর বাড়ি এমনকি আত্মীয়দের বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়। আয়কর বিভাগ একা, না কি ইডি ও সিবিআই আধিকারিকরাও তল্লাশিতে ছিলেন, বুঝতে পারিনি। তবে প্রায় ৩৫০ জন আধিকারিক মোট ৮০ জায়গায় তল্লাশি চালান।’’ এই তল্লাশি নিয়ে অনেক অভিযোগ কৌস্তুভের। তিনি বলেন, ‘‘আমার সংস্থায় কর্মরত সাংবাদিকদেরও হেনস্থা করা হয়েছে। কাজে বাধা দেওয়া হয়েছে। মহিলা কর্মীদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে। বাড়ি ও অফিস থেকে নিয়ম মেনে রাখা নগদ ১৮ লাখ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।’’ তাঁর বিরুদ্ধে চলা তদন্ত প্রসঙ্গে কৌস্তুভ বলেন, ‘‘আয়কর বিভাগ যদি আমার বাড়িতে না আসে, ইডি যদি আমাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ না করে, সিবিআই যদি আমাকে গ্রেফতার না করে, তা হলে আমি দেশের জন্য কিছু করছি না বলে বিশ্বাস করি। ইডি-সিবিআইয়ের পর্ব শেষ হয়েছে, তাই এ বার আয়কর বিভাগ এসেছে বৃত্ত সম্পূর্ণ করার জন্য।’’

প্রসঙ্গত, রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ যখন প্রথম বার সিবিআইয়ের তলবে নিজাম প্যালেসে গিয়েছিলেন, তখন তাঁর গাড়িতে ছিলেন কৌস্তুভ। হাওড়ার আমতায় মৃত ছাত্রনেতা আনিস খানের বাড়িতেও তাঁকে দেখা গিয়েছিল। তখন সিপিএম অভিযোগ তুলেছিল, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দূত’ হিসাবেই আনিসের বাড়িতে গিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। তাঁকে নিয়ে বিজেপিরও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। বিধানসভা ও পুরসভা নির্বাচনের সময় কৌস্তুভ শাসকদলের হয়ে ‘সক্রিয়’ ভাবে কাজ করেছিলেন বলে দাবি বিরোধী শিবিরের। সে সব কথা স্বীকার করে কৌস্তুভের দাবি, ‘‘পার্থদা আমার পুরনো পরিচিত। অনেক দিনের সম্পর্ক। এক জন সংবাদমাধ্যমের প্রধান হিসাবেই আমার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠতা।’’ তৃণমূলের হয়ে নির্বাচনে কাজ করার কথাও স্বীকার করেন কৌস্তুভ। তিনি বলেন, ‘‘আমি ঘোষিত ভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে। বাংলায় তৃণমূলের পাশে যেমন আছি তেমন অন্য রাজ্যে গিয়ে যে কোনও বিজেপি বিরোধী দলের সঙ্গে থাকতে পারি।’’

নিজের তো বটেই, সহকর্মী ও আত্মীয়দের বাড়ি এবং অফিসে তল্লাশি চালানো নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে চান বলে জানিয়েছেন কৌস্তুভ। এ জন্য ইতিমধ্যেই তাঁদের পক্ষে কলকাতার বিভিন্ন থানায় হেনস্থার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। শাসকদলের অনেকেই বলেন, কৌস্তুভ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও ‘আস্থাভাজন’। তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, কৌস্তুভকে দলের বিভিন্ন কাজেও লাগানো হয়েছে। মুকুল রায় যে দিন বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফিরলেন, সে দিন তাঁর সল্টলেকের বাড়ি থেকেই তাঁর গাড়িতে ছিলেন কৌস্তুভ। গত মে মাসে কৌস্তুভকে সরকারি একটি কমিটির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করা হয়েছিল। তাঁর জন্য মহাকরণে একটি ঘরেরও বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু কৌস্তুভের নিয়োগ নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তার পরেই কৌস্তুভকে আর ওই কমিটিতে দেখা যায়নি। কিছু দিন আগে কৌস্তুভের চ্যানেল অন্য বিতর্কে জড়িয়েছিল। তখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ছাড়পত্র আটকে দিয়েছিল অমিত শাহের দফতর। পরে বিষয়টি মিটে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Partha Chatterjee income tax Raid
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE