Advertisement
E-Paper

গন্ধে-গুণে বিশ্বজয়ের পথে বাংলার কালো চাল

‘কালো জগতের আলো।’এটা আর শুধু কালোদের জন্য স্তোকবাক্য নয়। কালো যে জগৎকে, জগতের রসনাকেও আলো দিতে পারে, দেখিয়ে দিচ্ছে কালো চাল। সে দেখতে কালো, কিন্তু খেতে ভাল!

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৩৪

‘কালো জগতের আলো।’

এটা আর শুধু কালোদের জন্য স্তোকবাক্য নয়। কালো যে জগৎকে, জগতের রসনাকেও আলো দিতে পারে, দেখিয়ে দিচ্ছে কালো চাল। সে দেখতে কালো, কিন্তু খেতে ভাল!

এবং আরব দুনিয়া, জাপান হয়ে ইউরোপ, আমেরিকাতেও রফতানি বাণিজ্যের ভাল সম্ভাবনা তৈরি করেছে সেই চাল। আক্ষরিক অর্থেই জগতের মনোযোগ আকর্ষণ করে বাণিজ্যলক্ষ্মীর সদয় দৃষ্টির আলো ছড়াচ্ছে বাংলার সেই কালো চাল।

প্যারিসে বসেছিল ‘সিয়াল’ বা হরেক কিসিমের খাদ্যবস্তুর মেলা। সেখানে বর্ধমান-আউশগ্রামের মাঠের কালো চাল দেখে ইউরোপের বহু মানুষেরই চোখ কপালে। সুগন্ধি,তার উপরে কালো চালের পুষ্টিগুণ প্রচুর। অ্যান্থোসায়ানিনে সমৃদ্ধ বলে তা ক্যানসার প্রতিরোধ করে, অভিমত বিশেষজ্ঞদের। সেই সঙ্গে বার্ধক্য, স্নায়ুরোগ, ডায়াবেটিস, ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ ঠেকাতেও কার্যকর ওই চাল।

গত অক্টোবরে প্যারিসের মেলায় কালো চাল নিয়ে হাজির হওয়া পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিদের কাছে বিদেশিরা প্রশ্ন করেন, কবে থেকে এটা নিয়মিত পাওয়া যাবে?

২০০৮ সালে কালো চাল পশ্চিমবঙ্গে প্রথম বার পাওয়া গিয়েছিল ফুলিয়ায়। ধান-গবেষক অনুপল পালের তত্ত্বাবধানে সেই ধান ফলানো হয়েছিল রাজ্যের কৃষি দফতরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। ন’বছরের মধ্যে বাংলার সেই কালো চালের চাহিদা এখন সাগরপারেও!

আমেরিকা ও আরব দুনিয়ার ব্যবসায়ীরাও বাংলার কালো চালের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানাচ্ছেন বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল কমিটির চেয়ারম্যান সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘হংকংয়ে ৫ থেকে ৮ মে খাবারের মেলা বসছে। সেখানে কালো চালের পায়েস রাখা হবে। যাতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজার ধরা যায়।’’

কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের অধীন সংস্থা এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড প্রসেসড ফুড প্রোডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা ‘অ্যাপেডা’ সূত্রের খবর, কালো চালের নমুনা জাপানেও পাঠানো হয়েছিল এবং তাদের সাড়াও ইতিবাচক।

কিন্তু আলো ছড়ানো সেই কালো চালের পথেও কাঁটা আছে! যথেষ্ট ফলনের অভাবের কাঁটা। সরকারি উদ্যোগে চাষ শুরুর ন’বছর পরেও পশ্চিমবঙ্গের ন’টি জেলায় সব মিলিয়ে কালো চাল উৎপন্ন হচ্ছে মাত্র ১৫ টন! যেখানে রাজ্যে খরিফ ও রবি মরসুম মিলিয়ে চালের মোট উৎপাদন দেড় কোটি টনেরও বেশি। অ্যাপেডা-র বক্তব্য, ১৫ টনের মুঠিভর উৎপাদন নিয়ে রফতানিতে যাওয়ার ভাবনা হাস্যকর। কমপক্ষে ২০০-২৫০ টন উৎপাদন হওয়া চাই। কালো চাল নিতে অ্যাপেডা-র সঙ্গে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দু’টি চাল রফতানিকারক সংস্থা যোগাযোগ করেছে। তবে মূল প্রতিবন্ধকতা সেই কম উৎপাদন।

কাঁটা আরও আছে। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, বর্ধমানের আউশগ্রাম ছাড়া অন্য কোথাও এই বিশেষ ধান ভাঙানোর উপযুক্ত কল নেই। কালো চালের আসল উপাদান হল এর উপরে থাকা কালো রঙের পাতলা খোসা। ধান ভাঙানোর সাধারণ মেশিনে ওই খোসা উঠে যায়। ঢেকিতে ছাঁটা এ ক্ষেত্রে আদর্শ, কিন্তু সেটা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ।

‘‘কালো চালের চাষ হচ্ছে, এমন প্রতিটি জেলায় একটি করে ধান ভাঙানোর বিশেষ উপযুক্ত কল বসানো হবে। তাতে উৎপাদন বাড়বে,’’ আশ্বাস দিচ্ছেন কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। অ্যাপেডা-র পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা রণজিৎকুমার মণ্ডলের বক্তব্য, রফতানির জন্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি চাষ করা চাই জৈব পদ্ধতিতে। ‘‘ফলন হয়েছে জৈব পদ্ধতিতে, এই ব্যাপারে নিরপেক্ষ সংস্থাকে শংসাপত্রও দিতে হবে,’’ শর্ত ব্যাখ্যা করলেন রণজিৎবাবু।

Black Rice Cancer Fighter Rice
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy