মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বেশিরভাগ কর্মীকে কার্যত অন্ধকারে রেখে টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে অভিযুক্ত পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ একটি অপরাধচক্র তৈরি করেছিলেন বলে আদালতে ফের দাবি করল সিবিআই। আরও দাবি, ওই চক্রে ঠাঁই পেয়েছিলেন শুধু ওই দু’জনের ঘনিষ্ঠরাই। নিজের অফিসের পাশেই আরেকটি ছোট ঘরে দৈনিক মাথাপিছু ৩০৪ টাকা মজুরি দিয়ে জনা ১৫ লোক নিয়োগ করেছিলেন কল্যাণময়— আদালতে নথি পেশ করে এমনই দাবি করল সিবিআই।
সম্প্রতি আলিপুর সিবিআই বিশেষ আদালতে কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের অফিসের এক পদস্থ কর্মীর সাক্ষ্য ও সংশ্লিষ্ট নথি পেশ করে নিয়োগ দুর্নীতির নানা কীর্তির কথা জানায় সিবিআই। সিবিআই তদন্তকারীদের কথায়, ওই সাক্ষী কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের নিয়ে গঠিত কমিটি-র অন্যতম সাক্ষীও। সম্প্রতি এসএসসি-র শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দুর্নীতির মামলার বিচার প্রক্রিয়া আলিপুর সিবিআই বিশেষ আদালতে শুরু হয়েছে। ওই বিচার প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দুর্নীতির একাধিক নথি পেশ করেছে সিবিআই। বিচার প্রক্রিয়ায় ইতিমধ্যে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে।
ওই সাক্ষীর বয়ান অনুযায়ী, ২০১৮ সালের পর থেকে প্রচুর পরিমাণে সুপারিশপত্র সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের অফিসে জমা পড়ত। কিন্তু ওই সব সুপারিশপত্র কোথাও নথিভুক্ত করা হত না। শনিবার ছুটির দিন ওই মামলায় আর এক অভিযুক্ত এসএসসির প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ হাতে নানা খাম নিয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অফিসে আসতেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কল্যাণময়ের সঙ্গে বৈঠক চলত।
অভিযোগ, ওই সব সুপারিশপত্র অনুযায়ী অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগপত্র সভাপতি ঘনিষ্ঠ কয়েক জন অফিসার এবং দফতরের বাইরে থেকে নিয়োগ করা চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীরা বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষিকাদের কাছে সরাসরি পাঠিয়ে দিতেন। এ ব্যাপারে দফতরের বেশিরভাগ কর্মী অন্ধকারে ছিলেন। সিবিআইয়ের দাবি, শনি ও রবিবার ছুটির দিনে গভীর রাত পর্যন্ত ওই সুপারিশপত্র অনুযায়ী নিয়োগপত্র পাঠানোর ব্যবস্থা করা হত।
ওই সাক্ষীর বয়ান অনুযায়ী সিবিআইয়ের দাবি, ২০২২ সালে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলা সিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তরের পরেই নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত নথি সরিয়ে ফেলা এবং নষ্ট করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। তদন্তকারীদের দাবি, সভাপতির নির্দেশ অনুযায়ী ঘনিষ্ঠ অফিসার ও চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা ওই সব নথি সরিয়ে ফেলেছিলেন এবং কিছুটা নষ্ট করে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি ঘনিষ্ঠ কয়েক জন অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে নিয়োগ দুর্নীতির বেশ কিছু নথি উদ্ধার করা গিয়েছে বলে আদালতে দাবি করেছে সিবিআই।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)