সরকারি, বেসরকারি ব্যাঙ্কের আধিকারিক ও চুক্তি-ভিত্তিক কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশেই ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর প্রতারণা চক্রের কালো টাকা পাচার করা হচ্ছে বলে দাবি সিবিআইয়ের। সম্প্রতি কয়েক মাস আগে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় এবং অর্থ মন্ত্রকের সুপারিশে ডিজিটাল গ্রেফতারি প্রতারণার মামলার এফআইআর দায়ের করে সারা দেশে তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। দেশ জুড়ে আর্থিক প্রতারণার এই ছকে একাধিক বারপ্রকাশ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
তদন্তকারীদের দাবি, প্রতারণা চক্রের সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের জড়িত থাকার বিষয়টি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার শীর্ষ কর্তাদের জানানো হয়েছে। সম্প্রতি আরবিআই-এরনির্দেশিকায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়।
তদন্তকারীদের কথায়, ওই তদন্ত প্রক্রিয়ার অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে চক্র-৫। গোটা দেশ জুড়ে আঞ্চলিক অফিসগুলির মাধ্যমে প্রতারণা-চক্রটির জালের হদিস বার করার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দিল্লির সিবিআই সদর দফতরের কর্তারা। সিবিআইয়েরদাবি, ডিজিটাল গ্রেফতারি প্রতারণার আঁতুড় ঘর রাজস্থান, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ও হরিয়ানা। এখনও পর্যন্ত এই সব রাজ্যের একাধিক ব্যাঙ্কের চুক্তিভিত্তিক কর্মী এবং প্রতারণা চক্রের কয়েক জন পান্ডা মিলিয়ে ন’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে দফায় দফায় জেরা করে দেশ জুড়ে প্রতারণা চক্রের জালের বিস্তারের খোঁজ মিলছে বলে দাবি তদন্তকারীদের।
তদন্তকারীদের দাবি, কখনও পুলিশ অফিসার আবার কখনও সিবিআই বা ইডির অফিসারের ভেক ধরে ১০-১২ ঘন্টা ডিজিটাল গ্রেফতারির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। মূলত, প্রবীণ নাগরিকেরা নিশানা এই প্রতারণা চক্রের। নানা ভাবে ভয় দেখিয়ে ও চাপ দিয়ে কোনও পুলিশ পদাধিকারী সেজে তাঁদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়। সারা দেশে ওই প্রতারণা চক্রের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার মামলা দায়ের হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে দাবি। ওই প্রতারণা চক্রের মূল মাথাদের একাংশ বিদেশে রয়েছে বলে দাবি করছেন তদন্তকারীরা। ফলে প্রতারণার কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
তদন্তকারীদের কথায়, এখনও পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আট লক্ষ লোকের নামে ভাড়া নেওয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের (মিউল ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট) মাধ্যমে প্রতারণার টাকা সরানো হয়েছিল। পাশাপাশি প্রতারণা চক্রের পান্ডাদের নামে-বেনামে আরও ৭০০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিস পাওয়া গিয়েছে। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রতারণার কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে। এবং ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে বিদেশেও টাকা পাচার করা হয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)