Advertisement
১১ মে ২০২৪
Saigal Hossain

Saigal Hossain: সাইকেল মানে সহগাল, রহস্যভেদ সিবিআইয়ের

অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে অন্যদের কথোপকথনের যে সব বয়ান গরু পাচারের তদন্তে নামা সিবিআইয়ের হাতে এসেছিল, তাতেই তারা প্রথম পেয়েছিল ‘সাইকেল’ শব্দটা।

ফাইল চিত্র।

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২২ ০৬:৩৫
Share: Save:

‘সাইকেল’ কি সন্ধ্যা-শব্দ? অর্থাৎ সাইকেল মানে সাইকেল নয়, অন্য কিছু? রহস্য বলা হোক বা ধন্দ, গোড়া থেকেই এই একটি শব্দের জটে বেদম পাক খাচ্ছিলেন তদন্তকারীরা।

রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে অন্যদের কথোপকথনের যে সব বয়ান গরু পাচারের তদন্তে নামা সিবিআইয়ের হাতে এসেছিল, তাতেই তারা প্রথম পেয়েছিল ‘সাইকেল’ শব্দটা। ‘সাইকেলে অত টাকা...’ গোছের শব্দবন্ধ শুনে তদন্তকারীরা মাথা চুলকেছিলেন, এত টাকা সাইকেলের মতো দ্বিচক্রযানে কী ভাবে আনা সম্ভব? আর বড় বড় গাড়ি থাকতে কেনই বা অহেতুক সাইকেলে টাকা লেনদেনের ঝুঁকি নেওয়া হত?

তখনই তদন্তকারীদের সন্দেহ জাগে, তা হলে কি এটি আসলে সাঙ্কেতিক শব্দ? উচ্চারণ করা হচ্ছে সাইকেল, কিন্তু বোঝাতে চাওয়া হচ্ছে অন্য কিছু? সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয় অনুব্রত-ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে আটক করা বিভিন্ন নথিতে আবার ‘সাইকেল’ শব্দটি পাওয়ার পরে। দেখা যায়, প্রতি বার সাইকেল শব্দের পাশে বিভিন্ন অঙ্কের টাকার কথা লেখা আছে। কখনও ১০ লক্ষ টাকা, কখনও আবার ২০ লক্ষ। এমনকি গরু পাচারে মূল অভিযুক্ত এনামুল হক এবং অন্য গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা নথিতেও এই সাইকেল শব্দটি পেয়েছিলেন তদন্তকারীরা।

সাইকেলে সন্দেহ

• অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে অনেকের কথোপকথনে বার বার সাইকেল।

• অনুব্রত-ঘনিষ্ঠদের থেকে পাওয়া নথিতেও ওই দ্বিচক্রযানের নাম।

• বিভিন্ন জায়গায় সাইকেলের পাশে লেখা নানা টাকার অঙ্ক। কখনও ১০ লক্ষ টাকা, কখনও ২০ লক্ষ!

• সাইকেলের উল্লেখ এনামুল হক-সহ গরু ব্যবসায়ীদের নথিতেও।

অবশেষে সেই রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। জানা গিয়েছে, সাইকেল আসলে অনুব্রতের দেহরক্ষী ও ছায়াসঙ্গী সহগাল হোসেনের ছদ্মনাম। মাসখানেক আগে অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ তিন ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই ‘সাইকেল’-এর আসল অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তদন্তকারীরা। সহগালের নামই যে ‘সাইকেল’, সম্প্রতি আসানসোল জেলে গিয়ে তাঁকে জেরা করে সেই বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে সিবিআই। সেই তথ্য মুখ-বন্ধ খামে জানানো হয়েছে আদালতেও। তদন্তকারীদের দাবি, সব জায়গায় সহগালের নাম থাকলে তাঁর নিজের নাম জড়িয়ে যেতে পারে ভেবেই সঙ্গীর ‘সাইকেল’ ছদ্মনাম ব্যবহারের কৌশল নিতেন অনুব্রত।

তদন্তকারীদের দাবি, গরু পাচারে মূল অভিযুক্ত এনামুলের সঙ্গে অনুব্রতের যোগাযোগ যে সহগালই করিয়ে দিতেন, সহগালের মাধ্যমেই যে গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আসত, সাইকেল রহস্য উন্মোচনের পরে তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। ইতিমধ্যেই এনামুল-সহ বীরভূমের বিভিন্ন গরু ব্যবসায়ীর সঙ্গে সহগালের সরাসরি যোগাযোগের বিষয়টি প্রমাণিত। সহগালের মাধ্যমেই অনুব্রত গরু পাচার নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে বিচারকের কাছেও দাবি করেছেন তদন্তকারী অফিসার।

এর পাশাপাশি সহগালের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির হদিস পাওয়া গিয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অনুব্রত, সহগাল তো বটেই, তাঁদের ঘনিষ্ঠদেরও সম্পত্তির পরিমাণ রকেটের গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ওই সময়েই এনামুল-সহ বিভিন্ন গরু ব্যবসায়ীর নথিতে সাইকেল নামের পাশে মোটা অঙ্কের কমিশন লেখা রয়েছে।

তদন্তকারীদের দাবি, মূলত ঝাড়খণ্ড সীমানা পেরিয়ে আসা উন্নত প্রজাতির গরু ইলামবাজারের গরুর হাটে অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ আব্দুল লতিফের মাধ্যমে বাংলাদেশের পাচার করতেন এনামুল। এই গরু আসত মূলত উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও হিমাচলপ্রদেশ থেকে। ইলামবাজারের গরুর হাট থেকেই লতিফের মাধ্যমে উন্নত প্রজাতির গরু কিনতেন এনামুল। অভিযোগ, বীরভূম জেলার পুলিশ ও প্রশাসনের একাংশের যোগসাজশে সেই সব গরু সহগালের তত্ত্বাবধানে মুর্শিদাবাদ ও বাংলাদেশের সীমান্তে পৌঁছে দেওয়া হত। এবং সেই সব গরু পাচারের জন্য বিশেষ ছাউনি দেওয়া লরি ব্যবহার করা হত।

তদন্তকারীদের দাবি, ওই সব উন্নত প্রজাতির গরু খুব লাভজনক। পাচার কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত এনামুলের বয়ান অনুযায়ী এক-একটি গরু ৭০-৮০ হাজার টাকায় কিনে বাংলাদেশে দেড় থেকে পৌনে দু’লক্ষ টাকায় বিক্রি করা হত। সিবিআইয়ের অভিযোগ, বীরভূম থেকে সেই সব গরু সহগাল ওরফে ‘সাইকেল’-এর তত্ত্বাবধানে সীমান্তে পৌঁছে দেওয়া হত অনুব্রতের নির্দেশে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Saigal Hossain Anubrata Mandal Cattle Smuggling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE