Advertisement
E-Paper

খামতিতে ভরা সুরতহাল রিপোর্ট, দাবি সিবিআইয়ের, ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার এত বার সন্দীপের ঘরে কেন?

তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, দেহ উল্টে পর্যন্ত দেখা হয়নি। যে ভাবে দেহ শুইয়ে রাখা হয়েছিল, শুধুমাত্র তা ওপর-ওপর দেখে চটজলদি রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে বলেই রিপোর্ট পড়ে মনে হয়েছে।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:২৬

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক-পড়ুয়ার খুন, ধর্ষণের ঘটনায় মাত্র ২০ মিনিটে সুরতহাল (ইনকোয়েস্ট) এবং ১ ঘণ্টা ১০ মিনিটে ময়না তদন্তের রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি সিবিআই সূত্রের। ধর্ষণ ও খুনের তদন্তে এ দু’টিই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ আদালতগ্রাহ্য তথ্যপ্রমাণ। আর ওই দু’টো রিপোর্টেই পর পর ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা হয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের।

ময়না তদন্তের আগে এক জন বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট মৃতদেহ পর্যবেক্ষণ করে রিপোর্ট প্রস্তুত করেন। তাকে সুরতহাল রিপোর্ট বলা হয়। তিনি মৃতদেহের নানা ক্ষতচিহ্ন খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে যে রিপোর্ট দেন, তার ভিত্তিতে ময়না তদন্ত করা হয়। এই পরীক্ষায় সাধারণত ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। মাত্র ২০ মিনিটে কী করে এই পরীক্ষা করা হল, তা নিয়ে তদন্তকারীদের সূত্রেই প্রশ্ন উঠছে। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, রিপোর্টে বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট লিখেছেন, তিনি বিকেল ৪টে ২০ মিনিট থেকে ৪টে ৪০ মিনিট পর্যন্ত মৃতদেহ পর্যবেক্ষণের রিপোর্ট তৈরি করেছেন।

তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, দেহ উল্টে পর্যন্ত দেখা হয়নি। যে ভাবে দেহ শুইয়ে রাখা হয়েছিল, শুধুমাত্র তা ওপর-ওপর দেখে চটজলদি রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে বলেই রিপোর্ট পড়ে মনে হয়েছে। মৃতের শরীরে আঘাতের চিহ্নগুলি ঠিক কোথায় কোথায়, তা-ও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়নি বলে তদন্তকারীদের সূত্রে প্রকাশ। যেমন, রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাঁ পায়ে একাধিক আঘাত হয়েছে। কিন্তু সেটা পায়ের পাতা, হাঁটু না গোড়ালি? তা বলা হয়নি বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি। ওই সূত্রে আরও দাবি, মুখের কোথায় কোথায় আঘাতের চিহ্ন, তা-ও লেখা নেই। মৃতার মুখের ভিতরে এবং চোখে রক্ত পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু কী ধরনের ক্ষত থেকে ওই রক্তপাত, তা উল্লেখ করা হয়নি বলে তদন্তকারীদের সূত্রে প্রকাশ। মাথার পিছনে বা দেহের পিছনের অংশে কোনও আঘাত ছিল কি না, রিপোর্টে তার উল্লেখ নেই। মৃতদেহের পিছনের অংশে কোনও আঘাত ছিল কি না তা-ও রিপোর্টে লেখা নেই বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি।

ওই সূত্রে আরও দাবি, মৃতার পেটের কোন কোন অংশে কী ধরনের আঘাত, তারও খুঁটিনাটি বলা নেই। রিপোর্টে মৃতদেহের গোপনাঙ্গে রক্তের কথা রয়েছে কিন্তু রক্তপাতের কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি বলে তদন্তকারীদের সূত্রে জানা যাচ্ছে। গোপনাঙ্গের পাশে একটি ভাঙা ‘হেয়ার ক্লিপ’ পাওয়া গিয়েছে, বলা হয়েছে। কিন্তু তা কতটা দূরে, সেই তথ্য অস্পষ্ট বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, মৃতার পোশাকের বিষয়টিও স্পষ্ট ভাবে বলা নেই। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির সময়ে দু’জন চিকিৎসককে সাক্ষী রাখা হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের কোনও বক্তব্য রিপোর্টে নেই।

সিবিআইয়ের এক কর্তা এ প্রসঙ্গে বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, “২৬ বছরের চাকরি জীবনে এমন অবহেলায় তৈরি সুরতহাল রিপোর্ট দেখিনি। বিষয়টি খুবই বিচলিত হওয়ার মতো।” তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, মৃতদেহের ক্ষতচিহ্নগুলির বিশদে ব্যাখ্যা থাকলে খুন, ধর্ষণ কী ভাবে হয়েছে তা অনেকটাই স্পষ্ট বোঝা যেত এবং এক না একাধিক ব্যক্তি ওই অপরাধে জড়িত তারও ধারণা করা যেত। কিন্তু রিপোর্ট দেখে তা বোঝার উপায় নেই বলেই তদন্তকারীদের অভিমত।

সিবিআইয়ের এক কর্তার দাবি, ওই বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটকে একাধিক বার তলব করে এত দ্রুত সুরতহাল রিপোর্ট লেখা নিয়ে তাঁর বয়ান নথিবদ্ধ করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি বিষয়ে খটকা রয়েছে বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি। সুপ্রিম কোর্টের মামলার শুনানিতে ওই সব বিষয়েই মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট পেশ করা হবে।

তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, বিভিন্ন রিপোর্টের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, ঠান্ডা মাথায় সুকৌশলে ধাপে ধাপে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হয়ে থাকতে পারে। তাঁদের দাবি, সুরতহাল রিপোর্টে তথ্যের খামতি ও সূর্যাস্তের পরে তাড়াহুড়োয় ময়না তদন্ত এখন তদন্তে অন্যতম প্রধান বাধা হয়ে উঠছে।

R G Kar Hospital CBI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy