Advertisement
০৫ মে ২০২৪
manas bhunia

আইকোর-এ মানসকে ডাক সিবিআইয়ের, শুভাকে ইডির তলব সারদায়

বুধবার মানসবাবু বলেন, “এ-সব নোটিসের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমি এখনও পর্যন্ত কোনও নোটিস পাইনি।”

মানস ভুঁইয়া ও শুভাপ্রসন্ন।

মানস ভুঁইয়া ও শুভাপ্রসন্ন। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২১ ০৫:৩৬
Share: Save:

মাত্র সপ্তাহ দুয়েক দূরে ভোট। এই অবস্থায় তৃণমূল কংগ্রেসের বেশ কিছু নেতানেত্রী এবং ওই দলের ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে সিবিআই, ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থা। বিজেপি-বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি যে ‘অতিসক্রিয়তা’ দেখাবে, সেটা আগেই আঁচ করা গিয়েছিল। ভোট যখন আসন্ন, সেই মোক্ষম সময়ে তদন্তের নামে বিভিন্ন জনকে ডেকে কেন্দ্রের শাসক দলের তরফে বিরোধীদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থা আইকোর মামলায় রাজ্যসভার তৃণমূল সদস্য মানস ভুঁইয়াকে নোটিস দিয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। বুধবার মানসবাবু বলেন, “এ-সব নোটিসের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমি এখনও পর্যন্ত কোনও নোটিস পাইনি।”

একই ভাবে তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ চিত্রকর শুভাপ্রসন্নকে আবার ডেকে পাঠিয়েছে ইডি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে তিনি বাজার দরের থেকে অনেক বেশি টাকায় একটি খবরের চ্যানেল বিক্রি করেছিলেন। এর আগেও এই বিষয়ে শুভাপ্রসন্নকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আবার ভোটের মুখে ডাক পড়েছে তাঁর। ইডি সূত্রের খবর, ১৫ মার্চ তাঁর হাজিরা দেওয়ার কথা। ওই সারদা তদন্তেই ডেকে পাঠানো হয়েছে তৃণমূল নেতা সমীর ওরফে বুয়া চক্রবর্তীকে। তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণা চক্রবর্তী এখন বিধাননগরের পুর প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন।
সিবিআই, ইডি সম্প্রতি কয়লা ও গরু পাচারের তদন্তে সক্রিয়। সিবিআইয়ের খবর, কয়লা পাচার কাণ্ডে অন্যতম মূল অভিযুক্ত, ফেরার অনুপ মাঝি ওরফে লালার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এই কারণে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান ও উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসকদের চিঠি দিয়ে সাহায্য চেয়েছে সিবিআই। ওই চার জেলাতেই লালার সম্পত্তি রয়েছে বলে জানান তদন্তকারীরা।

মানসবাবুকে ডেকে পাঠানোটা এ দিনের সব থেকে উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলে রাজনৈতিক শিবিরের অভিমত। সিবিআইয়ের বক্তব্য, মানসবাবু ছাড়াও তৃণমূলের এক হেভিওয়েট মন্ত্রী এবং আগে তৃণমূলে থাকা, এখন বিজেপিতে যাওয়া প্রথম সারির এক নেতার নামে অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লেখার পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দফতর থেকে তা পাঠানো হয় সিবিআই অধিকর্তার কাছে। আইকোরের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্তের আর্জিও জানান কুণাল। সিবিআই-প্রধান সেই চিঠির প্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মানসবাবুকে ডেকেছেন বলে জানান তদন্তকারীদের একাংশ। সিবিআইয়ের খবর, কয়েক দিনের মধ্যে চিঠি পাঠিয়ে বাকি দু’জনকেও ডাকা হবে।
সিবিআই সূত্রে জানানো হয়েছে, ২০২০ সালের জুন নাগাদ শাহকে চিঠি লিখে কুণাল দাবি করেন, তাঁর কাছে থাকা ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, মানসবাবু ও বাকিরা আইকোরের প্রশংসা করে সেই সংস্থায় বিনিয়োগে উৎসাহিত করছেন। সিবিআই আইকোরের মালিক অনুকূল মাইতিকে গ্রেফতার করেছিল। কয়েক মাস আগে ভুবনেশ্বর জেলে মৃত্যু হয় তাঁর। আইকোরের বেশ কিছু সম্পত্তি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বা হেফাজতে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তদন্তকারী সংস্থা।

কুণাল বলেন, ‘‘আমি শাহকে চিঠি লিখেছিলাম ২০১৩ সালে গ্রেফতারের অব্যবহিত পরে। সিবিআইয়ের কোথাও বুঝতে ভুল হচ্ছে। সেই চিঠির জবাব আমাকে পাঠানো হয়েছিল ২০২০ সালের মাঝামাঝি। আমি চিঠি লিখেছিলাম তার সাত বছর আগে।’’

সদ্য তৃণমূলত্যাগী অমূল্য মাইতি এ বার সবংয়ে বিজেপি প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘‘মানস ভুঁইয়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আছে। বছর দশেক আগে কলকাতায় তিনি সেই সংস্থার অনুষ্ঠানে একটি ভুঁইফোঁড় লগ্নি সংস্থার মালিককে সংবর্ধনা দেন। পরে ওই লগ্নি সংস্থার বার্ষিক অনুষ্ঠানে তাদের পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছিলেন। এটা সকলেই জানেন।” বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘সিবিআই কাউকে তলব করলেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে কথা হচ্ছে। আর সিআইডি যে বিজেপি নেতাদের ডেকে হেনস্থা করছে, তখন তো অভিযোগ উঠছে না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Subhaprasanna manas bhunia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE