Advertisement
১০ নভেম্বর ২০২৪
R G Kar Incident

আলোচনায় আপত্তি নেই, মেলের ভাষা ‘অপমানকর’ বলে সাড়া নেই ডাক্তারদের, অপেক্ষা করে ফিরলেন মমতা

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান, সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট নাগাদ একটি মেল পাঠানো হয় আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কাছে। মেলটি পাঠিয়েছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম।

Chief Minister Mamata Banerjee gone home from nabanna after waiting for the protesting junior doctors

(বাঁ দিকে) সাংবাদিকদের মুখোমুখি জুনিয়র ডাক্তারেরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৪২
Share: Save:

মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট নাগাদ আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে রাজ্য সরকারের পক্ষে একটি মেল পাঠানো হয়। সেই মেলে বলা হয়, নবান্নে এসে সরকারের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি দল এসে দেখা করতে পারে। মেলে ‘এখন’ শব্দটিও লেখা ছিল। শুধু তাই নয়, প্রতিনিধি দলে যে সর্বোচ্চ ১০ জন থাকতে পারবেন, মেলে লেখা ছিল সে কথাও। সরকারের তরফে ওই মেলটি পাঠিয়েছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। প্রতিনিধি দলে কারা থাকবেন, পাল্টা মেলে তা-ও জানাতে বলা হয়। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় সেখানে অপেক্ষা করছেন। মেল পাঠানোর পর প্রায় ৮০ মিনিট অপেক্ষা করে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ বাড়ি ফিরে যান তিনি। অন্য দিকে জুনিয়র ডাক্তারেরা জানিয়েছেন, ওই মেলের ভাষা ‘অপমানজনক’। তাই তাঁরা নবান্নে যাননি।

মুখ্যমন্ত্রীর অপেক্ষা এবং তাঁর নবান্ন ছেড়ে যাওয়ার কথা সংবাদমাধ্যমের কাছে জানান রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চন্দ্রিমা জানান, সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট নাগাদ আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কাছে একটি মেল পাঠানো হয়। মেলটি পাঠিয়েছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সেই মেলের জবাব না আসায় নবান্ন থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী।

ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবারই ছিল রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক। সেই বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের জানিয়ে দেন, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনা বা আন্দোলন কিংবা চিকিৎসকদের কর্মবিরতি নিয়ে যা বলার তিনিই বলবেন। তার পরেই স্বাস্থ্যসচিব মেল পাঠান আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের। নবান্ন সূত্রে জানা যায়, মুখ্যমন্ত্রী নিজের ঘরে বসেই জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। তাই সেখানেই তিনি অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু প্রায় এক ঘণ্টা ২০ মিনিট পেরিয়ে যাওয়ার পরেও আন্দোলনকারীদের তরফে কোনও জবাব না আসায় বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত অপেক্ষার পর নবান্ন ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি।

নবান্নে চন্দ্রিমার সাংবাদিক বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে থেকে পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের তরফে ওই ইমেলকে ‘অপমানজনক’ বলে অভিহিত করা হয়। জুনিয়র ডাক্তারদের যুক্তি, তাঁদের দাবিগুলির মধ্যে অন্যতম স্বাস্থ্যসচিবের অপসারণ। কিন্তু বৈঠকের জন্য যে মেলটি পাঠানো হয়েছে, তা এসেছে স্বাস্থ্যসচিবের ইমেল থেকেই। এক জুনিয়র ডাক্তারের কথায়, ‘‘ইমেলে লেখা হয়েছে, রেসপেক্টেড স্যর। মনে রাখবেন, এই আন্দোলনে শুধু স্যর নন, ম্যাডামেরাও রয়েছেন।’’

যদিও চন্দ্রিমা জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীদের জন্য আলোচনার দরজা সব সময় খোলা রয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যে ভাবে আলোচনার পরিবেশ ভেস্তে গেল, তাতে আগামী দিনে আবারও দু’পক্ষকে এক টেবিলে আলোচনায় বসতে দেখা যাবে কি না, তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে।

বুধবার রাজ্যে বণিক এবং শিল্প মহলকে নিয়ে নবান্নে বৈঠকে বসবেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার আবার রাজ্যের সকল বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে নিয়ে নবান্নেই বৈঠকে বসার কথা তাঁর। তা ছাড়া উৎসবের মরসুম এগিয়ে আসায় রাজ্য প্রশাসনকে নিয়ে ক্রমশ ব্যস্ত হয়ে পড়বেন মমতা। তবে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তো ওঁদের পাঁচ দফা দাবি মেনে নিলেই পারেন! তা হলে তো আর মুখ্যমন্ত্রীর পদ যাচ্ছে না। জুনিয়র ডাক্তারেরা যে আন্দোলন করছেন, তা তাঁরা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক রেখেছেন। এ ক্ষেত্রে আমার কিছু বলা সাজে না। তাঁরা যা করবেন, ভালই করবেন না। আমার পূর্ণ সমর্থন তাঁদের সঙ্গে রয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী তো এক জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তাঁর সঙ্গে আলোচনায় না-বসে বরং আন্দোলনকারীরা সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যপাল বা রাজ্যের মুখ্যসচিবের সঙ্গে আলোচনায় বসে তাঁদের দাবির কথা জানাতেই পারেন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE