ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) দামামা বাজিয়ে উপনির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতীর নেতৃত্বে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরা রাজ্য ছাড়তেই বৃহস্পতিবার কমিশনের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দাবি করলেন, একমাত্র ভোট এলেই আধিকারিকেরা কমিশনের অধীনে (ডেপুটেশনে) আসেন। যদিও কমিশন এই সফরে জেলা-কর্তাদের যে বার্তা দিয়েছে, তাতে এসআইআর চলাকালীনও আধিকারিকেরা কমিশনের অধীনস্থ বলে ধরা হবে। ফলে তাঁদের কাজ করতে হবে কমিশনের বিধি-নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনেই।
বৃহস্পতিবার কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বলাকা মঞ্চে এ দিনের বৈঠকে কমিশন-কর্তাদের ইঙ্গিত, ফেব্রুয়ারির শেষ বা মার্চের গোড়ায় এ রাজ্যে বিধানসভার ভোট ঘোষণা হতে পারে। ফলে তার আগে এসআইআরের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ পাবে। কমিশন সূত্রের অনুমান, কালীপুজোর ছুটির পরেই হয়তো এসআইআর-এর কাজ শুরু হবে।
এ দিন বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের জেলা-কর্তা এবং বুথ লেভেল আধিকারিকদের (বিএলও) নিয়ে বৈঠক করেন কমিশন-কর্তারা। ছিলেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়ালও। সেখানে বলা হয়েছে, ভোটার তালিকায় একমাত্র যোগ্য ব্যক্তিদেরই জায়গা হবে। এক জন যোগ্য ব্যক্তিও তালিকার বাইরে যাতে না থাকেন, নিশ্চিত করা হবে তা। এমনকি, নথি না থাকলেও, সমীক্ষায় প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের থেকে তথ্য নিয়ে যোগ্য ভোটারের তালিকায় নাম তোলার সুযোগ থাকবে। এ ক্ষেত্রে বিএলও, সংশ্লিষ্ট ইআরও (ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার) এবং সহকারি ইআরও-দের বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে।
কমিশন সূত্রের বক্তব্য, এসআইআরের সময়ে আধিকারিকেরা কমিশনের অধীনে থাকবেন। ফলে তাঁদের মানতে হবে কমিশনের নিয়ম-বিধি। মুক্ত থাকতে হবে বাহ্যিক প্রভাব-চাপ থেকে। এ বার ডিজিটাল মাধ্যমে পুরো কাজ হওয়ায় যে কোনও গাফিলতি ধরে ফেলা সহজ হবে। প্রসঙ্গত, ভোটার তালিকায় অসাধু হস্তক্ষেপের অভিযোগে ইতিমধ্যেই চার জন আধিকারিকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ হয়েছে।অবশ্য এ দিনই মমতা অভিযোগ করেছেন, রাজ্যের আধিকারিকদের ভয়-হুমকি দেখিয়ে নিজেদের মন-মতো বিজেপির কথায় কাজ করাতে চাইছে কমিশন। যদিও কমিশন সূত্রের বক্তব্য, ভোটার তালিকা ত্রুটিমুক্ত করা সাংবিধানিক দায়িত্ব, তা রয়েছে তাদেরই হাতে।
জানা দিয়েছে, এ দিনের প্রশ্নোত্তর পর্বে ঝাড়গ্রাম জেলার এক বিএলও বলেন, ‘অনেক সময় রাজনৈতিক দলের নেতারা ভোটারদের নাম বাদ দিতে চাপ দেন, না হলে মেরে চামড়া গুটিয়ে দেবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। এ রকম হলে তো বিপদ!’’ সিইও তাঁকে বিডিও, মহকুমাশাসক, জেলাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। এ-ও বলেন, প্রয়োজনে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে নিরাপত্তার জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে। নির্ভয়ে ও নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে বলেন সকলকে। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক বিএলওদের বলেন, ‘এসআইআর নিয়ে কাজ শুরুর আগে আরও মিটিং হবে। ট্রেনিং দেওয়া হবে।’
এ দিনের বৈঠকে কমিশন কর্তারা উল্লেখ করেছিলেন, জলপাইগুড়ি সদরের এক বাসিন্দার পাসপোর্ট উদ্ধার হয়েছিল এক বাংলাদেশির কাছে। তার ভিত্তিতে জলপাইগুড়ির ওই বাসিন্দাকেও বাংলাদেশি মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু কমিশন তদন্ত করে দেখে, ওই ব্যক্তি আদতে ভারতীয়। অসাধু উপায়ে তাঁর তথ্য দিয়ে ওই বাংলাদেশি ব্যক্তি জাল পাসপোর্ট বানিয়ে ভারতে ঢুকেছিল। এমন বিষয়ে বিএলও, ইআরও-সহ বাকি আধিকারিকদের সতর্ক থাকারও বার্তা দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, বিএলও-দের জন্য নতুন তৈরি অ্যাপে ভোটার তালিকায় সাম্প্রতিক ম্যাপিংয়ের তথ্য দেওয়া হবে। তা মিলিয়ে কাজ করতে পারবেন তাঁরা। এ দিন কোলাঘাটে সভাস্থলে ঢোকার সময় বিক্ষোভের মুখে পড়েন উপ-নির্বাচন কমিশনার। তৃণমূল প্রভাবিত ‘পশ্চিমবঙ্গ সনাতন ব্রাহ্মণ ট্রাস্ট’ বিক্ষোভ দেখিয়ে দাবি করে, এসআইআর হলে বহু ন্যায্য ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়বে। তবে বৈঠক শেষে সিইও বলেন, “রাজ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ ভোটারের নাম ২০০২-এর তালিকার ম্যাপিংয়ে পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের কোনও নথিই লাগবে না। বৈধ ভোটারদের দুশ্চিন্তার কারণ নেই।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)