Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
State news

পুরসভার গেস্টহাউসে জাঁকিয়ে দেহ ব্যবসা! নেপথ্যে তৃণমূলের জাঁদরেল নেতা

বিজ্ঞাপনের মোড়কেই ওই গেস্ট হাউসে জাঁকিয়ে দেহ ব্যবসা চলছিল। বুধবার সন্ধ্যায় সিআইডি-র একটি দল ওই গেস্ট হাউস থেকে ৫ নাবালিকাকে উদ্ধার করার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয় গেস্ট হাউসের ম্যানেজার-সহ ৪ জনকে।

এই গেস্ট হাউসেই চলছিল দেহ ব্যবসা। ইনসেটে তৃণমূল নেতা শ্যামল মণ্ডল।

এই গেস্ট হাউসেই চলছিল দেহ ব্যবসা। ইনসেটে তৃণমূল নেতা শ্যামল মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৮ ১৩:৩২
Share: Save:

গোটা কোন্নগর শহর জুড়ে বেশ কিছু দিন ধরেই বিজ্ঞাপনটা নজরে পড়ছিল। দেখা যাচ্ছিল শহরের বাইরেও। ছোট্ট তিন-চারটে বাক্য। সেখানে লেখা, ‘মনোরম পরিবেশে আধুনিক, সুসজ্জিত ও সব রকমের সুবিধাযুক্ত গেস্টহাউসে থাকার সুযোগ নিন। এসি/নন-এসি রুম পাওয়া যাবে।’

গ্রাহক টানতে হুগলির কোন্নগর রেল স্টেশনের কাছে ‘বিশ্রামিকা গেস্ট হাউস’ ঠিক এমনই বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। কিন্তু ওই বিজ্ঞাপনের মোড়কেই ওই গেস্ট হাউসে জাঁকিয়ে দেহ ব্যবসা চলছিল। বুধবার সন্ধ্যায় সিআইডি-র একটি দল ওই গেস্টহাউস থেকে ৫ নাবালিকাকে উদ্ধার করার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয় গেস্টহাউসের ম্যানেজার-সহ ৪ জনকে।

সিআইডি সূত্রে খবর, উদ্ধার হওয়া ৫ নাবালিকাই হুগলির শ্যাওড়াফুলি এবং বৈদ্যবাটির বাসিন্দা। কাজের টোপ দিয়ে তাদের ওই গেস্ট হাউসে নিয়ে আসা হত। প্রথমে মোবাইলে তাদের ছবি তোলা হত। তার পর হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন গ্রাহকদের কাছে পাঠানো হত সেই ছবি। ছবি দেখে পছন্দ হলে তারপরেই ‘বিশ্রামিকা গেস্টহাউস’-এ আসতেন গ্রাহকেরা। এর পর ওই নাবালিকাদের বাধ্য করা হত যৌন সম্পর্ক স্থাপনে।

আরও পড়ুন: সল্টলেকের বাড়িতে মধুচক্র, উদ্ধার ৬ নাবালিকা

খবর পেয়ে সিআইডি এক ব্যক্তিকে গ্রাহক সাজিয়ে প্রথমে ওই গেস্টহাউসে পাঠায়। নকল গ্রাহকের মাধ্যমেই হাতেনাতে ধরা পড়ে অভিযুক্তেরা। গোয়েন্দাদের দাবি, উদ্ধার হওয়া ৫ নাবালিকাকে দিল্লি এবং পুণেতে পাচার করার পরিকল্পনা ছিল ধৃতদের। ওই গেস্ট হাউসের বিভিন্ন ঘর থেকে প্রচুর কন্ডোম, পর্নো ভিডিও পাওয়া গিয়েছে। সিআইডির সন্দেহ, পর্নোগ্রাফি শুটও করা হত ওই গেস্ট হাউসে। ওই রাতেই কোন্নগরের আরও একটি গেস্টহাউসে হানা দেন সিআইডির গোয়েন্দারা।

দেখুন ভিডিও:

এলাকার গেস্টহাউসে যে এ ভাবে দেহ ব্যবসা চলছে, বিষয়টা স্থানীয়দের অনেকেই জানতেন। এমনকি, জানতেন এলাকার রাজনৈতিক নেতারাও।ওই গেস্টহাউসের ভিতরে যে এমন কারবার চলে তা বেশ ভাল করেই জানতেন বলে দাবি করছেন কোন্নগর পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্বপন দাস। এত কিছু জানা সত্ত্বেও কোনও রকম ব্যবস্থা নেননি তৃণমূলের ওই কাউন্সিলর! এমনকি, পুলিশকে জানানোরও প্রয়োজন বোধ করেননি তিনি।

গেস্ট হাউস থেকে যে ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি, তাঁদেরই তিন জন (অবিনাশ কানু, বিবেকানন্দ বেরা এবং সুখদেব দাস)।

সবটা জানা সত্ত্বেও কেন তিনি পুলিশ-প্রশাসনকে জানাননি? স্বপনবাবুর দাবি, তিনি নাকি ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি। তাঁর কথায়, ‘‘এলাকার মানুষ জানতেন।আমিও খবর পেয়েছি। কিন্তু, ভয়ে মুখ খুলতে পারিনি। আর জানাবই বা কাকে? জানালেই তো হামলা হবে। এর আগেও তো আমার উপর হামলা হয়েছে। দোকান ভাঙচুর হয়েছে।’’ তিনি আরও জানান, বছর দুয়েক আগে কোন্নগর পুরসভার কাছ থেকে শ্যামল মণ্ডল নামে এক তৃণমূল নেতা লিজ নিয়েছিলেন গেস্ট হাউসটি। গত পুরসভা নির্বাচনে শ্যামল তৃণমূলের প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েও ছিলেন।স্থানীয়দের দাবি, শ্যামল কোন্নগরের পুরপ্রধান বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায় এবং উত্তরপাড়ার বিধায়ক তথা হুগলি জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি প্রবীর ঘোষালের ঘনিষ্ঠ। সে কারণেই শ্যামলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পেতেন সবাই।

বৃহস্পতিবার বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত এই গেস্ট হাউস নিয়ে আমার কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। আজ সকালেই শুনছি এ সব। আমি কোন্নগরের বাসিন্দা। এলাকার বহু মানুষকে চিনি। শ্যামলকেও চিনি। তার মানে এই নয় যে, শ্যামল আমার ঘনিষ্ঠ।’’

বাপ্পাদিত্য অবশ্য দাবি করেছেন তিনি এ সবের কিছুই জানতেন না। তিনি বলেন, “আগে কখনও এ রকম অভিযোগ পাইনি। আমি আজই বৈঠক ডাকব। যিনি লিজ নিয়েছেন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লিজের চুক্তি বাতিল করা হবে।” পাশাপাশি, শ্যামলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা অস্বীকার করেছেন বাপাদিত্য। সিআইডি ওই গেস্ট হাউসে তল্লাশি চালাতে পারে এই খবর পাওয়ার পর থেকেই শ্যামল গা ঢাকা দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে কোনও ভাবেই যোগাযোগ করা যায়নি।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sex racket Konnagar Trafficking CID
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE