জনসভায় মমতা।—ফাইল চিত্র।
একাধিক নিরাপত্তা বেষ্টনী টপকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভামঞ্চে উঠে পড়লেন এক যুবতী। অন্য এক জনকে যদিও মঞ্চে ওঠার আগেই আটকে দেওয়া হয়। তবে যে ভাবে ওই যুবতী মমতার প্রায় পায়ের কাছে গিয়ে পড়েন, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। গোটা ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছেন মমতা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদে থানার মাঠে একটি সরকারি জনসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি যখন পো়ডিয়ামের সামনে দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন, ঠিক সেই সময়েই রাবেয়া নামে ওই যুবতী মঞ্চে উঠে পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর পা ধরতে যান। মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে সরে যান। রাবেয়াকে ওখানেই আটকে দেন মুখ্যমন্ত্রীর এক নিরাপত্তারক্ষী। তার আগে রাবেয়ার বোন আফসারাকে মঞ্চের নীচেই আটকে দিয়েছিলেন নিরাপত্তাকর্মীরা। ঘটনায় হতচকিত মুখ্যমন্ত্রী এর পর বিরক্তির সুরে নিরাপত্তাকর্মীদের বলেন, ‘‘তোমাদের ল্যাকুনাটা দেখতে পেলে এ বার!’’
নিয়মমতো মুখ্যমন্ত্রীর সভামঞ্চকে ঘিরে চারটি নিরাপত্তা বলয় থাকে। তার দায়িত্বে থাকেন এসপি পদমর্যাদার এক পুলিশকর্তা। দু’জন ডিএসপি পদমর্যাদার কর্মীর পাশাপাশি থাকেন প্রায় ১০০ জন পুলিশকর্মী। তল্লাশির কড়াকড়ি মেনে প্রথমটি পেরিয়ে যেতে পারেন সাংবাদিকেরা। কিন্তু, পরের তিনটি বেষ্টনীকে কার্যত ঘিরে রাখেন জনা পঞ্চাশেক নিরাপত্তাকর্মী। সেই বলয়গুলি পেরিয়ে কী ভাবে ওই যুবতীরা ঢুকে পড়লেন? প্রশ্ন তুলেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীও। তিনি বলেন, ‘‘এটা কোনও সিস্টেম হতে পারে না।’’
আরও পড়ুন
সেই বকুনি সমানে চলছে
ঘটনার কথা শুনে প্রাক্তন পুলিশ কর্তা প্রসূন মুখোপাধ্যায় জানালেন, মুখ্যমন্ত্রীর মতো ভিভিআইপি-র ক্ষেত্রে এমন ঘটে থাকলে তাকে নিশ্চিত ভাবেই নিরাপত্তা ব্যাবস্থায় গাফিলতি বলা যায়। কারণ, এ দেশে এ ভাবেই অনেক জননেতা বা নেত্রীকে প্রাণ দিতে হয়েছে। মহাত্মা গাঁধী থেকে রাজীব গাঁধী— উদাহরণ অনেক। তাঁর কথায়, ‘‘এ ক্ষেত্রে হয়তো ওই যুবতীর কোনও অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কেউ কিছু করতেই পারে!’’ পাশাপাশি তিনি জানান, জনপ্রিয়তার খাতিরে অনেক রাজনীতিকই সাধারণ মানুষকে নিজেদের কাছে আসতে দেন। তিনিও সাধারণের মধ্যে মিশে যান। এমন রাজনীতিকের নিরাপত্তারক্ষীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় বোঝার সমস্যা হতে পারে।
মুখ্যমন্ত্রীর কোনও জেলা সফরে বা এই ধরনের জনসভায় বিশেষ জেড প্লাস ক্যাটেগরির নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি জেলা পুলিশ এবং জেলা গোয়েন্দা বিভাগও তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে। সব মিলিয়ে মোতায়েন থাকেন শ’খানেক নিরাপত্তাকর্মী। প্রশ্ন উঠছে, অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে যদি কেউ কিছু করতে চায়, তা হলে যে কোনও মুহূর্তেই তা সম্ভব। এমনকী, যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর পা ধরার চেষ্টা হয়েছে, তাতে আচমকা তিনি পড়ে গিয়ে কোনও দুর্ঘটনাও ঘটতে পারত। গোটা ঘটনায় নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যর্থতাই ধরা পড়েছে।
রাবেয়াকে সভাস্থল থেকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র।
কিন্তু, ওই যুবতীরা কেন এ ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছতে চাইলেন? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাবেয়া-আফসারার বাবা ২০১৫ সালে জমি বিবাদে খুন হয়ে যান। তার পর মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেই আফসারার পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়। রাবেয়াকে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চাকরি দেওয়া হয়েছে। গীতাঞ্জলি প্রকল্পে তাঁদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার পাশাপাশি দু’টাকা কিলো দরে চাল এবং এক বোনের বিয়ে ও ভাইয়ের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়। মুখ্যমন্ত্রীকে এক জন এ কথা মনে করিয়ে দিতেই তিনি ওই মঞ্চ থেকে বলেন, ‘‘এত কিছু করে দেওয়া হয়েছে। আর কী চাই! যদি কিছু প্রয়োজন হয় চিঠি লিখুন। এ ভাবে হয় না।’’ পাশাপাশি তিনি সকলের উদ্দেশে বলেন, ‘‘এমন চেষ্টা করবেন না। তা হলে কিন্তু কাজ হবে না।’’
আরও পড়ুন
রাজ্যে আর বিরোধী থাকবে না: অরূপ
তবে, নিরাপত্তার এমন গাফিলতি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি জেলার পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কোনও অফিসারও এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy