মন্ত্রীদের নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা। শুক্রবার টাউন হলে। ছবি: সুদীপ আচার্য।
নোট বাতিলের জেরে বাংলায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার টাউন হলে সরকারের সব দফতরের মন্ত্রী ও আমলাদের নিয়ে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকের পরে তিনি নিজেই এ কথা জানান।
কেন তাঁর এমন মনে হচ্ছে ব্যাখ্যা দিয়ে মমতা বলেন, ব্যাঙ্কে-এটিএমে টাকা নেই। মানুষ কষ্টার্জিত টাকাও তুলতে পারছেন না। দু’মাসে সাড়ে ৮১ লক্ষ লোক কাজ হারিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্রের ভুল সিদ্ধান্তের জন্য মানুষের উপরে চাপ পড়েছে। ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।’’
পরিস্থিতি সামলাতে বিভিন্ন দফতরের কর্তাদের প্রতি তাঁর নির্দেশ, আর্থিক শৃঙ্খলা মেনে চলুন। অযাচিত খরচ করা চলবে না। ‘‘চলতি প্রকল্পগুলিতে অকারণ খরচ বাড়াবেন না, প্রতিটি প্রকল্পের জন্য দরপত্র ডাকুন,’’ বলেছেন তিনি।
নবান্নের খবর, চলতি আর্থিক বছরে পরিকল্পনা খাতে ৫৭ হাজার কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন দফতরকে ৪১ হাজার কোটি টাকা খরচের অনুমোদন দিয়েছে অর্থ দফতর। যা গত বছরের তুলনায় তিন হাজার কোটি টাকা বেশি। কিন্তু হিসেব বলছে, গত দু’মাসে রাজ্যের সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। আর্থিক বছর শেষ হতে এখনও তিন মাস বাকি। ফলে রাজস্ব ঘাটতি কোথায় দাঁড়াবে— তা ভেবে পাচ্ছেন না অর্থকর্তারা। এই বাতাবরণের মধ্যেই এ দিন বিভিন্ন দফতরের কাজের খতিয়ান নেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতে কোনও দফতর যেমন ভাল কাজের স্বীকৃতি পেয়েছে, কেউ আবার তাঁর তোপের মুখে পড়েন। যেমন, পর্যটনসচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন। এখনও কেন বিভিন্ন পর্যটন প্রকল্পগুলির কাজ শেষ হয়নি, সেই প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানতে চান, ঝড়খালি পর্যটন আবাসের কাজ কতদূর হয়েছে? সচিব জানান, প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ। তিনি ঠিক বলছেন কি না, যাচাই করতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসককে পিবি সেলিমকে দাঁড়াতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেলিম আমতা আমতা করে কিছু বলতে চাইলে মুখ্যমন্ত্রী ধমক দিয়ে বলেন, ‘জানেনই না কী হয়েছে। তা-ই ঠিকমতো বলতে পারছেন না’।
এ দিন বিদ্যুৎসচিব এস কিশোরকেও কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর প্রশ্ন ছিল, ‘‘গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছচ্ছে, কিন্তু এত লো-ভোল্টেজের সমস্যা কেন? মানুষের ঘরে বাতি থাকলেও তা টিমটিম করে জ্বললে কী লাভ!’’ কিশোর বলার চেষ্টা করেন, রাজ্যে আরও কিছু ট্রান্সফর্মার বসানোর কাজ চলছে। পুরোপুরি সমস্যা মিটতে আরও বছরখানেক লাগবে। বিদ্যুৎসচিবের এই উত্তর মুখ্যমন্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।
চার বছরেও আলিপুরে ধন-ধান্য ভবনের কাজ কেন শেষ হল না, এই প্রশ্ন তুলে পূর্তসচিব ইন্দিবর পাণ্ডের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘হবে কী করে! ও তো এখানে থাকেই না।’’ গঙ্গার পাড়ে ‘কলকাতা আই’-ও কেন হল না, তা নিয়ে তোপের মুখে পড়েন পূর্বতন নগরোন্নয়ন সচিব দেবাশিস সেন এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বিজ্ঞাপন খাতে অতিরিক্ত খরচ করার জন্য তিরস্কৃত হন উপভোক্তা ও ক্রেতাসুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। কর্মতীর্থ প্রকল্পে ঢিলেমির জন্য তিরস্কৃত হন দফতরের সচিব রাজীব সিন্হা।
প্রায় কোনও কাজই হচ্ছে না বলে মুখ্যমন্ত্রী বকঝকা করেন বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনকেও। আবার কাজের বহর দেখিয়ে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে খোঁচা খেয়েছেন পঞ্চায়েত সচিব সৌরভ দাস। গ্রামীণ রাস্তা তৈরির কাজ-সহ নানা প্রকল্পে পঞ্চায়েত দফতর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে (১১০%) বলে দাবি করায় মমতা জানতে চান, ‘‘এর মধ্যে কতটা জল আছে?’’ শুনে কিছু বলার চেষ্টা করেন সৌরভবাবু। তাতে মুচকি হাসেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে খড়্গপুরে (বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এই কেন্দ্রের বিধায়ক) বেশ কিছু আইসিডিএস কেন্দ্র হচ্ছে শুনে মুখ্যমন্ত্রীর হাসি নিমেষে উড়ে যায়। সারা রাজ্যে কয়েক হাজার আইসিডিএস কেন্দ্র চলছে কোনও রকম বাড়িঘর ছাড়াই। সবচেয়ে বেশি মুর্শিদাবাদে। সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজার কাছে কবে কেন্দ্রগুলি তৈরি হবে, তা জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। মন্ত্রী বিভিন্ন জায়গার সঙ্গে খড়্গপুরের নাম বলাতেই চটে যান মমতা। বলে ওঠেন, ‘‘খড়্গপুর-খড়্গপুর বারবার বলছ কেন! আইসিডিএস কেন্দ্র গ্রামে দরকার। সেখানে বেশি করে করো।’’
বৈঠক শেষে মমতা সাংবাদিকদের জানান, বিভিন্ন দফতর ও ব্লক স্তরের মধ্যে প্রশাসনিক সমন্বয় বাড়াতে তাঁর দফতর থেকে একটি মোবাইল নম্বর চালু হচ্ছে। ওই নম্বরে যে কেউ সমস্যার কথা জানাতে পারবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy