বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মতো মঞ্চে যার ভিত্তি তৈরি হয়েছিল, তা এ বার রূপায়ণের পথে। বিভিন্ন বাণিজ্যগোষ্ঠীর তরফ থেকে সুনির্দিষ্ট বিনিয়োগ-প্রস্তাব জমা পড়েছে রাজ্য সরকারের কাছে। সব খতিয়ে দেখে শিল্পায়নের জন্য জমির ব্যবস্থাও চূড়ান্ত করে ফেলল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভা। ২০২১ সালে তৃতীয় মেয়াদে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়ে মমতা ঘোষণা করেছিলেন, এ বার তাঁর প্রধান লক্ষ্য শিল্পায়ন। বুধবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য দ্রুত শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান তৈরি করা।’’
২৫ হাজার কোটির জন্য ২,৫১৫ একর
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যে বিনিয়োগের ব্যাপারে যে যে শিল্পগোষ্ঠী প্রস্তাব দিয়েছিল, সেগুলি নিয়ে বুধবার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুরুলিয়া, দুর্গাপুর, পানাগড়-সহ মোট ১০টি জায়গায় রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের অধীনে যে জমি রয়েছে, তা থেকে ২,৫১৫ একর জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই সব জায়গায় বিনিয়োগ হবে ২৫ হাজার কোটি টাকা। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে কর্মসংস্থান হবে ৭০ হাজারের। যা যা বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে, তার বেশির ভাগটাই ইস্পাত শিল্পের বলে জানিয়েছেন মমতা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য রাজ্যের ১৫টি শিল্পতালুকে ৪৩টি সংস্থাকে জমি দেওয়ার সিদ্ধান্তও বুধবার নেওয়া হয়েছে মন্ত্রিসভার বৈঠকে।
জেলায় জেলায় শপিং মল
কয়েক মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, টলিউডের অনেকে তাঁর কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন, জেলায় জেলায় যাতে সিনেমা হল তৈরি হয়। সেই প্রস্তাব পেয়েই মমতা ঘোষণা করেছিলেন, প্রতিটি জেলায় পিপিপি মডেলে শপিং মল তৈরি হবে। সেই মলে থাকবে সিনেমা হলও। বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ১১টি জেলার ক্ষেত্রে শপিং মল তৈরিতে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তালিকায় রয়েছে পুরুলিয়া, দার্জিলিং, হাওড়া, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়ার মতো জেলাগুলি। বাকি ১২টিও প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন মমতা। তবে এই শপিং মলের অন্তত দু’টি তলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির স্টলের জন্য বরাদ্দ রাখা হবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
উত্তরবঙ্গ সফর
সামনের সপ্তাহে উত্তরবঙ্গ সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গের বণিকমহলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বিনিয়োগে প্রক্রিয়াগত জটিলতা দূর করতে গত ফেব্রুয়ারির বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন থেকে মমতা সিনার্জি কমিটি গড়ার ঘোষণা করেছিলেন। সেই সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই উত্তরবঙ্গের বণিকমহলের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির ওদলাবাড়িতে সরকারি পরিষেবা প্রদান কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। বুধবার উত্তরকন্যায় (উত্তরবঙ্গে রাজ্য সরকারের সচিবালয়) প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠক করবেন মমতা। সেই বৈঠকে যোগ দেবেন উত্তরবঙ্গের সব জেলার আধিকারিক এবং জনপ্রতিনিধিরা। বৃহস্পতিবার তিনি শিলিগুড়ি থেকে কলকাতায় ফিরবেন।