দার্জিলিং, তরাই এবং ডুয়ার্সের গোর্খাদের নানাবিধ বিষয় নিয়ে কথোপকথন চালানোর জন্য অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস পঙ্কজ কুমার সিংহকে নিযুক্ত করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। শনিবার সেই নিয়োগ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি লিখলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। যে চিঠির গোড়াতেই মমতা জানিয়েছেন, এ হেন নিয়োগ দেখে তিনি বিস্মিত এবং স্তম্ভিত! রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা ছাড়া এই নিয়োগ নিয়ে চিঠিতে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
উত্তরবঙ্গ এবং গোর্খাদের বিষয়টি রাজ্য সরকারের জন্য ‘স্পর্শকাতর’। মোদীকে লেখা চিঠিতে মমতা স্পষ্টই উল্লেখ করেছেন, ‘এই ধরনের নিয়োগ রাজ্যের প্রশাসন এবং শান্তির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সমান্তরাল ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপ সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কাম্য নয়।’ প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মমতা এ-ও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, ২০১১ সালে রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার মধ্যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তার পর থেকেই রাজ্য সরকারের অধীনে স্বশাসিত সংস্থা হিসাবে জিটিএ পাহাড়ের পরিকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা-সহ নানা ক্ষেত্রে কাজ করছে।
আরও পড়ুন:
যাঁকে নিয়োগ করেছে কেন্দ্র, সেই অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস পঙ্কজ জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ। দেশের উপমুখ্য জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসাবেও কাজ করেছেন তিনি। অতীতে জম্মু-কাশ্মীর এবং উত্তর-পূর্বের একাধিক রাজ্যে জাতিগত অশান্তি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর।
মমতার সাড়ে ১৪ বছরের শাসনে পাহাড় একাধিক বার অশান্ত হয়েছে। বারংবার পাহাড়ের নেতার মুখ বদলেছে। কখনও বিমল গুরুং তো কখনও বিনয় তামাংরা এসেছেন। বর্তমানে অনীত থাপাদের নেতৃত্বে চলছে জিটিএ। এর মধ্যে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার মধ্যেও বিভাজন হয়েছে। গত কয়েক বছর তেমন কোনও বড় ঘটনা বা অশান্তি না-হলেও প্রশাসনিক মহলের অনেকেই বলেন রাজ্য সরকারের জন্য পাহাড়, ডুয়ার্স, তরাই সবসময়েই ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি। যখন-তখন লাভা উদ্গীরণ হতে পারে। সদ্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে উত্তরবঙ্গ। দু’দফায় আট দিন সেখানে পড়ে থেকে ত্রাণ ও পুনর্গঠনের কাজ পর্যালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এখনও সেখানে ত্রাণের কাজ চলছে। সর্বত্র পরিস্থিতি স্বাভাবিকও হয়নি। এমন একটি সময়ে বিধানসভা ভোটের কয়েক মাস আগে কেন্দ্রের এই নিয়োগকে ‘অভিসন্ধিমূলক’ বলেই মনে করছেন সরকারের অনেকে। সেই প্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। যে চিঠিতে অনুরোধের সুরেই মমতা দাবি জানিয়েছেন, এই নিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুক কেন্দ্রীয় সরকার।