Advertisement
০২ মে ২০২৪
Bengal Cattle Smuggling and Coal Scam

কয়লা পাচারের বিকাশকে বিশেষ সুবিধা! প্রেসিডেন্সির জেল সুপারকেই জেলে ভরার হুঁশিয়ারি বিচারপতির

বিচারপতি প্রেসিডেন্সি জেলের সুপারকে বলেন, ‘‘রাজ্যের অন্যতম বড় জেলের সবচেয়ে বড় দায়িত্বে আছেন। সেখানে যদি এমন হয়, তা হলে তো বলতে হয় তদন্তকে প্রভাবিত করা হচ্ছে।’

Bikash Mishra to stay in Jail, says Calcutta high court\\\\\\\'s Division Bench.

কয়লা এবং গরু পাচার মামলায় মূল অভিযুক্ত বিনয় মিশ্রের ভাই বিকাশ মিশ্র এখন প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:৩৩
Share: Save:

অসুস্থ না হয়েও জেলের হাসপাতালে থাকছিলেন কয়লা এবং গরু পাচার মামলায় অন্যতম মূল অভিযুক্ত বিকাশ মিশ্র। এ ব্যাপারে জেল কর্তৃপক্ষকেই দোষী ঠাওরালো কলকাতা হাই কোর্ট। প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি রয়েছেন বিকাশ। জেলে তাঁর বিশেষ সুবিধা নিয়ে অভিযোগ করেছিল সিবিআই। বৃহস্পতিবার সব পক্ষের বক্তব্য শুনে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, জেলের সুপার ইচ্ছা করেই বিকাশকে ওই সুবিধা দিয়েছেন। শাস্তিস্বরূপ জেল সুপারকে জরিমানা করার পাশাপাশি আদালত জানিয়েছে, যথা সময়ে জরিমানা না দিলে জেলেও ভরা হবে প্রেসিডেন্সি জেলের জেল সুপারকে।

কয়লা এবং গরু পাচার মামলায় মূল অভিযুক্ত বিনয় মিশ্রের ভাই বিকাশ। বিনয় এখন পলাতক। তাঁকে খুঁজছে সিবিআই। অন্য দিকে বিনয়ের সাম্রাজ্যের অনেকটাই বিকাশ সামলাতেন বলে জানিয়ে তাকে হেফাজতে নেওয়ার আর্জি জানিয়েছিল সিবিআই। সম্প্রতি সিবিআই অভিযোগ করেছিল, প্রেসিডেন্সি জেলে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বিকাশকে। আদালতে তারা বলে, বিকাশ অসুস্থ না হওয়া সত্ত্বেও মাঝেমধ্যেই তাঁকে জেলের সেল থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। এমনকি, তাঁকে জেলে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে বেশ কয়েক বার বাধা পেয়েছে বলে জানায় সিবিআই। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই মামলাটি স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে শোনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। বৃহস্পতিবার সেই মামলা ওঠে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চে। শুনানিতে প্রেসিডেন্সি জেল কর্তৃপক্ষকে ভর্ৎসনা করে বেঞ্চ বলে, ‘‘প্রেসিডেন্সি জেল রাজ্যের সব থেকে বড় জেল। সেখানে এমন বেআইনি কাজ হয় কী করে?’’

জেলে অনিয়মের বিষয়ে শুনানিতে বৃহস্পতিবার ডেকে পাঠানো হয়েছিল প্রেসিডেন্সি জেলের সুপার দেবাশিস চক্রবর্তীকেও। তাঁকে প্রকাশ্যেই বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনি বার বার বিকাশকে জেলের সেল থেকে হাসপাতালে পাঠিয়ে বেশ সাহসের পরিচয় দিয়েছেন বলতে হবে!’’ কয়লা এবং গরু পাচার মামলায় সিবিআই জেরা করেছে শাসকদলের বেশ কিছু নেতা এবং নেতাদের ঘনিষ্ঠদের। গুরুত্বপূর্ণ সেই দুই মামলাতেই অভিযুক্ত বিকাশ। বিচারপতি এ প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্সির জেল সুপারকে বলেন, ‘‘আপনার কাজে স্পষ্ট, যা করেছেন, তা জেনেবুঝে এবং ইচ্ছা করেই করেছেন। আদালত বিকাশকে জেলে রাখার কথা বলার পরও তাঁকে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। আপনি একজন সরকারি কর্মচারী। আইন মেনে কাজ করা উচিত ছিল। একজন সরকারি কর্মচারীর এমন আচরণ কাম্য নয়।’’

আদালতের ভর্ৎসনার পর দেবাশিস অবশ্য দুই বিচারপতির কাছে ক্ষমা চান। তাঁর ভুল হয়েছে বলেও জানান। জবাবে বেঞ্চ তাকে আবারও ভর্ৎসনা করে। বিচারপতি বাগচি বলেন, ‘‘রাজ্যের অন্যতম বড় জেলের সবচেয়ে বড় দায়িত্বে আছেন। সেখানে যদি এমন হয়, তা হলে তো বলতে হয় তদন্তকে প্রভাবিত করা হচ্ছে।’’ এর পরই আদালত জানিয়ে দেয়, বিকাশ মিশ্র জেলেই থাকবেন। জেলের সুপারকে তাঁর বেআইনি কাজের জন্য দুই হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। ১৫ দিনের মধ্যে জরিমানার অর্থ জমা না পড়লে জেল সুপারকে ৭ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন বিচারপতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE