Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Suvendu Adhikari

‘প্রভাবশালী’ তকমার আড়ালে কাকে লক্ষ্য করলেন শুভেন্দু? তৃণমূল বলছে, পারলে নাম বলুন!

সাংবাদিক বৈঠক করে শাসকদলের এক ‘প্রভাবশালীর’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন শুভেন্দু। তাঁর দাবি, কয়লা পাচারকাণ্ডে মোট ২,৪০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। এই দুর্নীতিতে আরও বড় চক্র জড়িত।

সাংবাদিক বৈঠকে একের পর এক অভিযোগ এনেছেন শুভেন্দু। বড় চক্রের ইঙ্গিতও দিয়েছেন।

সাংবাদিক বৈঠকে একের পর এক অভিযোগ এনেছেন শুভেন্দু। বড় চক্রের ইঙ্গিতও দিয়েছেন। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২২ ১৯:০১
Share: Save:

কয়লা পাচারকাণ্ডে শাসকদলের এক ‘প্রভাবশালী ব্যক্তি’ হাজার কোটি টাকা পেয়েছেন বলে অভিযোগ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেছেন, ‘‘কয়লা পাচারের সঙ্গে বড় চক্র যুক্ত আছে। সেই চক্রের সঙ্গে রাজ্যের এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের যোগও রয়েছে।’’ যদিও কে সেই ‘প্রভাবশালী’ তা স্পষ্ট করে জানাননি শুভেন্দু। তবে তাঁর ইঙ্গিত, ‘‘যে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তির কাছে ওই অর্থ গিয়েছে, তিনি এই রাজ্যে কার্যত প্রশাসন, পুলিশ ও শাসকদলকে নিয়ন্ত্রণ করেন।’’

তবে একই সঙ্গে শুভেন্দু ‘বোমা ফাটানো’র যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা তিনি করেননি। বৃহস্পতিবার বিরোধী দলনেতা বলেছিলেন, তিনি ইডির চার্জশিট থেকে উদ্ধৃত করে ‘বোমা’ ফাটাবেন। কিন্তু শুক্রবার শুভেন্দু জানান, বিষয়টি ‘বিচারাধীন’ বলে তিনি তা পুরোপুরি সর্বসমক্ষে আনছেন না।

শুক্রবার কয়লা পাচার সংক্রান্ত মামলায় দিল্লি হাই কোর্টে পেশ-করা একটি চার্জশিটের তথ্য নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে এসেছিলেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘দিল্লির আদালতে গুরুপদ মাঝি নামে ব্যক্তির বিরুদ্ধে যে চার্জশিট পেশ করা হয়, সেই চার্জশিট এখন পাবলিক ডোমেনেও এসে গিয়েছে। কয়লা পাচারের সঙ্গে যে বড় চক্র যুক্ত আছে এবং সেই চক্রের সঙ্গে প্রভাবশালী ব্যক্তিরও যোগ আছে, তা ওই চার্জশিটেই বলা হয়েছে।’’ সাংবাদিকদের সেই চার্জশিটের পাতার নম্বর দেখিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘আসলে মোট ২,৪০০ কোটি টাকার দুর্নীতি। এই ২,৪০০ কোটি টাকা দুর্নীতির মধ্যে ১,০০০ কোটি টাকা প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তির কাছে গিয়েছে।’’ পাশাপাশিই শুভেন্দু বলেন, ‘‘আগামী ১২ ডিসেম্বর গুরুত্বপূর্ণ অভিযুক্ত ব্যক্তির মামলা সুপ্রিম কোর্টে নির্দিষ্ট হয়েছে। তাই এখন পুরো বলছি না।’’

‘প্রভাবশালী’ বলতে শুভেন্দু কাকে বোঝাতে চেয়েছেন, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে রাজ্যে পুলিশ-প্রশাসন এবং শাসক দলকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা বললে তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা মনে হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পাশাপাশি মমতা রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্যের পুলিশ এবং প্রশাসন দুই-ই তাঁর নিয়ন্ত্রণে। আর যে হেতু তিনিই দলের সর্বময় নেত্রী, তাই তাঁর হাতেই শাসকদলের ভারও থাকার কথা। কিন্তু শুভেন্দুর আক্রমণের লক্ষ্য মমতা নয় বলেই মনে করছে তৃণমূল। কারণ, শুক্রবার শুভেন্দুর ওই মন্তব্যের পরেই তৃণমূলের তরফে কুণাল ঘোষ একটি পাল্টা বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘‘ও অভিষেক ফোবিয়ায় ভুগছে। আর তার নাম নেওয়ার সাহস হল না?’’

শুভেন্দুর নাম নিয়ে অভিযোগ করার সাহস নেই জানিয়ে কুণাল বলেন, ‘‘ও ইঙ্গিতে কেন কথা বলে? আমি নাম করে বলছি, শুভেন্দু হচ্ছে চোর, ব্ল্যাকমেলার, তোলাবাজ, বিশ্বাসঘাতক। আমি নাম করে বলছি শুভেন্দু অধিকারীর। ক্ষমতা থাকলে মানহানির মামলা করুক!’’ কুণাল বলেন, ‘‘আমি শুভেন্দুকে বলছি, ওর বুকে নেই দমদম, ও খাবে চমচম। দম থাকলে নাম বলত।’’

সম্প্রতি কুণালকে শুভেন্দুর বিধানসভা কেন্দ্র নন্দীগ্রামে তৃণমূলের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছে দল। তার পর থেকেই শুভেন্দুকে আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছেন কুণাল। শুক্রবার তিনি সুর আরও চড়িয়ে বলেছেন, ‘‘যার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ, যে পুরোদস্তুর নিজেকে বাঁচানোর জন্য বিজেপিতে গিয়েছে, তার মুখে সততার কথা মানায় না। করুণ লাগল আদি বিজেপির বিধায়কগুলোকে দেখে। একজন চোর, ডাকাত, সিবিআইয়ের এফআইআরে নাম থাকা লোক ব্যক্তিগত স্বার্থের রাজনীতি করছে। আর তার পিছনে ওরা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।’’ কুণালের দাবি, ‘‘যাঁরা দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁরা অনেকেই ফোন করে বলেছেন, উনি সাংবাদিক বৈঠক করে যা বলছেন, তা ওঁর ব্যক্তিগত মতামত। আমাকে এর মধ্যে জড়াবেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE