—ফাইল চিত্র।
বছর দুই আগে শ্রীজাতের লেখা ‘অভিশাপ’ কবিতা নিয়ে বিতর্কের শুরু। কিছু সময়ের জন্য ফেসবুক থেকে কবিতা তুলে নেওয়া, কবিকে প্রাণে মারার হুমকি, ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার অভিযোগ তুলে হিন্দুত্ববাদীদের বিক্ষোভ, এফআইআর— কিছুই বাদ যায়নি। গত ১৩ জানুয়ারি অসমের শিলচরে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে ফের ওই কবিতার জন্য কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠনের বিক্ষোভ-হামলার মুখে পড়েন শ্রীজাত। তাঁকে এবং প্রায় দেড়শো জন দর্শকে প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়।
ওই কবিতায় হিন্দু ভাবাবেগকে আঘাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে এ বার শ্রীজাতের বিরুদ্ধে মামলা করা হল কৃষ্ণনগরে। বুধবার কৃষ্ণনগর আদালতে মামলাটি করেন আইনজীবী রমিত শীল। তাঁর দাবি, ‘অভিশাপ’ কবিতার কয়েকটি লাইন তাঁর ধর্মীয় ভাবাবেগেও আঘাত করেছে। তাই তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁর হয়ে মামলা দায়ের করেন তাঁর আইনজীবী বিশ্বদেব টামটা।
রাজনৈতিক মহলের খবর, বিজেপি প্রথম থেকেই পরিকল্পিত ভাবে এই কবিতার বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে। এ নিয়ে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির যাবতীয় বিক্ষোভ, এফআইআরের পিছনে আসলে বিজেপির ইন্ধন রয়েছে। প্রথম থেকে তাই শ্রীজাত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলকে পাশে পেয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, আইনজীবী রমিত শীল সরাসরি এমন কোনও সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নন, বিজেপির সদস্যও নন। তা হলে তিনি কেন হঠাৎ ‘অভিশাপ’ নিয়ে মামলা করলেন? এখানেও রাজনৈতিক নেতাদের একাংশের বক্তব্য, সরাসরি না হলেও পরোক্ষে বিজেপির সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে রমিতবাবুর।
এই মামলার সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই বলে তিনি নিজে দাবি করলেও রমিতবাবু বিজেপির লিগ্যাল সেলের সঙ্গে ঘনিষ্ট ভাবে যুক্ত বলে দলীয় সূত্রের খবর। তিনি আবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বিজন ঘোষের বিশেষ ঘনিষ্ঠ। বিজনবাবু বিগত পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্য বিজেপির কো-কনভেনার পঞ্চায়েত(লিগ্যাল) ছিলেন। দলীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, আগামী লোকসভা ভোটে বিজনবাবু কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে দলের টিকিট পাওয়ার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ আইনজীবীকে দিয়ে মামলা করানো সেই চেষ্টারই অংশ।
মামলার পিটিশন ‘সেটল’ যে তিনিই করে দিয়েছেন তা স্বীকার করে নিলেও বিজনবাবুর দাবি, “এর সঙ্গে বিজেপি বা অন্য সংগঠনের যোগ নেই। আমি এক জন সিনিয়র আইনজীবী এবং রমিত আমার বন্ধুর ছেলে। সেই সূত্র ধরেই আমি পিটিশনটা সেটল করে দিয়েছি।” একই দাবি করেছেন রমিতবাবুও।
বিরোধীরা কিন্তু এর পিছনে বিজেপির হাত দেখছেন। তাঁদের দাবি, লোকসভা ভোটের আগে এই মামলা করে সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি। তৃণমূলের নদিয়া জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের কথায়, “আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, এর পিছনে আছে বিজেপি। এই রকম অর্ধশিক্ষিত আচরণ কেবল বিজেপির পক্ষেই সম্ভব।” অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকার বলেছেন, “যুক্ত থাকা দূরে থাক, এমন কোনও ঘটনার কথাই আমাদের জানা ছিল না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy