দুর্যোগের রেশ কাটিয়ে উঠতে সময় লাগছে উত্তরবঙ্গের। নতুন করে মিলছে দেহ। বন্যার জলে ভেসে আসা বুনো শুয়োরের হামলায় ফের প্রাণহানি হয়েছে কোচবিহারে। এ দিন নাগরাকাটার বামনডাঙায় ত্রাণ বিলি করে ফেরার পথে আচমকা নদীর জল বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন রাজ্যের মন্ত্রী বুলু চিক বরাইক। সঙ্গে ছিলেন জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মহুয়া গোপ। কোনও মতে রক্ষা পান তাঁরা।
দার্জিলিঙের পুলবাজারে মঙ্গলবার রাতে সমীর ছেত্রী (৪৪) নামে এক নিখোঁজের দেহ উদ্ধার হয়েছে। জামুনিতে ছোটা রঙ্গিত নদী থেকে এ দিন দেহ মেলে লিম্বুধুরার বাসিন্দা দশরথ থামির (৪২)। দুর্যোগের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনিও। সব মিলিয়ে সরকারি হিসাবে দুর্যোগে ৩৯ জন মারা গিয়েছেন।
শিলিগুড়ি থেকে রোহিনী হয়ে দার্জিলিঙের রাস্তা কোথাও বসে গিয়েছে। কোথাও ধসে গিয়েছে। বুধবার থেকে পূর্ত দফতর মেরামত শুরু করলেও, কালীপুজোর আগে ওই রাস্তা স্বাভাবিক করা যাবে কি না, সংশয়ে প্রশাসন। পাহাড়ে মিরিক ছাড়াও, বিজনবাড়ি-পুলবাজার এলাকার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। পুলবাজারের ছোট রঙ্গিত নদীর সেতুর একাংশ তোড়ে ভেসে যাওয়ায় সে পথে যাতায়াত বন্ধ। পুলবাজার কমিউনিটি হলে এখনও ১০টি পরিবার আশ্রয় নিয়ে রয়েছে।
কী ভাবে স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরবেন তা নিয়ে চিন্তিত বিজনবাড়ি-পুলবাজারের কুন্দন শর্মা, নরেশ ছেত্রীরা। নরেশ বলেন, ‘‘আমাদের মতো অনেকেরই ঘর বলে এখন কিছু নেই। উদ্বেগে দিন কাটছে।’’ সুখিয়ার পুবংফটক এলাকার প্রথমিক স্কুলটি ধসে ধংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এলাকার বাসিন্দা বীরবাহাদুর রাই বলেন, ‘‘স্কুল ভেঙে পড়ায় বাচ্চাগুলোর পড়াশোনা এখন অনিশ্চিত।’’ দুধিয়া সেতুর কাছে ফাস্ট ফুডের দোকান ছিল প্রীতম ছেত্রীর। নদী দোকান ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে। প্রীতম বলেন, ‘‘এখন কী ভাবে কী হবে জানা নেই!’’ বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বিপর্যস্ত মিরিকের পরিস্থিতি নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছেন কেন্দ্রকে দিতে। শিলিগুড়ি থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মিরিকের জন্য ৪০০ বস্তা রান্নার জিনিস, কম্বল, পোশাক সব পাঠানো হয়েছে।’’
মঙ্গলবারের পরে এ দিনও কোচবিহারের মাথাভাঙা ২ ব্লকের ঘোকসাডাঙায় বুনো শুয়োরের হামলায় প্রাণহানি হয়েছে। মৃত কাশীকান্ত বর্মণ (৬৯) স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য স্বপন বর্মণের বাবা। বন্যার জলে জঙ্গল থেকে ভেসে আসা বন্যপ্রাণীর আতঙ্ক তৈরি হয়েছে মালবাজারের কুমলাই ও ক্রান্তি এলাকাতেও। বন্যপ্রাণীদের ফেরাতে বন দফতরের উদ্ধারকারী দল কুনকি হাতি, ড্রোন, ঘুমপাড়ানি বন্দুক নিয়ে ময়দানে নেমেছে। বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা বলেন, ‘‘বন্যপ্রাণীদের জঙ্গলে ফেরাতে সব রকম চেষ্টা হচ্ছে। গ্রামবাসীদের সতর্ক করতে মাইকে প্রচারও চলছে।’’ সমাজমাধ্যমে এ দিন নদীগর্ভে একটি গন্ডারের মৃতদেহের ছবি ছড়ায়। অনেকে দাবি করেন, উত্তরবঙ্গ থেকে নদীতে ভেসে বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে পৌঁছেছে ওই গন্ডারের দেহ। বন দফতর সে দাবি খতিয়ে দেখছে।
কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। এখন পুনর্গঠনের কাজ চলছে।’’ তমলুকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘বহু মানুষ এখনও নিখোঁজ। মৃতের সংখ্যা না বাড়লেই ভাল।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)