Advertisement
১১ মে ২০২৪
CPM

সাঁইবাড়ি নিয়ে হঠাৎ ফেসবুক-তরজায় সিপিএম-কংগ্রেস, দুঃখপ্রকাশ বিকাশের

সিপিএম নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে রাজনৈতিক মতবিরোধ তুঙ্গে উঠল জোট শরিক কংগ্রেস-সিপিএমের।

নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২১ ২০:৩০
Share: Save:

সিপিএম নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের একটি ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে রাজনৈতিক মতবিরোধ তুঙ্গে উঠল জোট শরিক কংগ্রেস-সিপিএমের। শনিবার সকালে তাঁর একটি পোস্টকে ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত। এই দীর্ঘ পোস্টে একাধিকবার সাঁইবাড়ির কথা উল্লেখ করে ‘কংগ্রেসি গুণ্ডা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। সঙ্গে কংগ্রেসি গুন্ডাদের হাতে সিপিএম নেতা-কর্মীদের হত্যার কথা ফলাও করে লিখেছেন। পোস্টের শেষে সেই হত্যাকাণ্ডের স্মরণে আগামী ১২ জুন বর্ধমানের আহ্লাদিপুরের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দলীয় কর্মীদের আসতে বলেছেন।

সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা ভোটে জোট করেই লড়াই করেছে কংগ্রেস সিপিএম। বিধানসভায় সংযুক্ত মোর্চার সদস্য ১ হলেও, জোট চালিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী দুইপক্ষই। কিন্তু বিকাশের এমন পোস্ট নেটমাধ্যমে আসার পরেই ক্ষেপে যান কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। বিকাশকে উদ্দেশ্য করে কংগ্রেস কর্মীরা লেখেন, ‘বিকাশবাবু আপনি কংগ্রেসি গুণ্ডাদের ভোটে জিতেই রাজ্যসভায় গিয়েছেন’। কেউ বা লিখেছেন, ‘বিকাশবাবু কংগ্রেস কর্মী হিসেবে আপনার পোস্ট দেখে আশ্চর্য হচ্ছি। কংগ্রেস গুণ্ডাদের সমর্থনে সাংসদ হয়েছিলেন। তাহলে কী ধরে নিতে হবে আপনার এই পোস্ট আপনার দলের অবস্থান?’ কংগ্রেস কর্মী মহলে আরও প্রশ্ন, বিকাশবাবুর মতো একজন অভিজ্ঞ নেতা, রাজ্যসভার সাংসদ ওই পোস্টের জন্য এই সময়টা বেছে নিলেন কেন? বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে আব্বাস সিদ্দিকির দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট একটি মাত্র আসন পেয়েছে। জোটের এমন করুণ পরিস্থিতিতে বিকাশের পোস্ট অস্বস্তি বাড়িয়েছে জোটের অভ্যন্তরে।

কর্মীদের কাছেই বিকাশের এই পোস্টের কথা জানতে পারেন বর্ষীয়ান রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেস কর্মী মহলের ক্ষোভের আঁচ প্রত্যক্ষ করে ফোন করেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রকে। ওই পোস্টকে কেন্দ্র করে সূর্যকান্তর কাছে বিকাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন প্রদীপ। বিকাশের এমন পোস্টের ফলে রাজ্য সিপিএম নেতৃত্বও চাপে পড়ে গিয়েছেন বলে খবর। সেই অস্বস্তি ঝেড়ে ফেলতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বলেছেন, ‘‘সোশাল মিডিয়ায় কে কী পোস্ট করেছেন জানি না। আমরা এখন এই মুহূর্তে বিতর্কে ঢুকতে চাই না। এখন বিতর্কের সময় নয়।’’ ক্ষোভের সুরে কংগ্রেস নেতা প্রদীপ বলেছেন, ‘‘আমি মনে করি না পঞ্চাশ বছর আগেকার ঘটনা এই মুহূর্তে আলোচনা করার কোনও অবকাশ রয়েছে। গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। আর যদি এটাই মাথায় থাকে তাহলে আমরা জোট করতে গেলাম কেন? অতীতের অনেক বিষাক্ত স্মৃতি তো সকলেরই আছে। সেসব ভুলেই তো নতুন বাংলা গড়ব বলে জোট করেছিলাম।’’

সাফাইয়ের সুরে বিকাশ বলেছেন, ‘‘অতীতকে অস্বীকার করে কোনও লাভ নেই, অতীতটা সত্যই। এতে মতবিরোধের কোনও জায়গা নেই। কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে রাজ্যসভায় গিয়েছি এটা সত্যি। তেমনি সাঁইবাড়ি নিয়ে বামপন্থীদের যে মত তা উল্লেখ করেছি, যদি কংগ্রেসের কেউ আমার পোস্ট নিয়ে দুঃখ পেয়ে থাকেন, তা হলে আমি দুঃখিত। তবে আমার মনে হয়, এমন একটি ঘটনার জন্য বাম-কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষ লড়াইয়ের ক্ষেত্রে কোনও প্রভাব পড়বে না।’’ প্রসঙ্গত, শনিবার সাঁইবাড়ির সঙ্গে কংগ্রেসের যোগাযোগের কথা উল্লেখ করে আক্রমণাত্মক পোস্ট করেছিলেন সিপিএমের যুবনেত্রী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। তখনও কংগ্রেসের কর্মীমহল থেকেও প্রতিবাদ হয়েছিল। কিন্তু শনিবার বিকাশবাবুর পোস্ট নেটমাধ্যমে প্রকাশ পেতেই ক্ষোভ লক্ষ্য করা গিয়েছে কংগ্রেসের কর্মীদের মধ্যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Congress CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE