Advertisement
০২ মে ২০২৪
বধূ নির্যাতনে চতুর্থ রাজ্য

পণপ্রথা রুখতে প্রচার কী ভাবে, চিন্তায় বাংলা

পায়েল পাল থেকে নমিতা নস্কর। পঞ্চমী থেকে লক্ষ্মীপুজোর পর দিন পর্যন্ত পাঁচ জন। শ্বশুরবাড়ির পণের দাবি না-মেটাতে পারার শিকার হয়েছেন ওই পাঁচ বধূ। উলুবেড়িয়ায় মিতা মণ্ডলের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:০৭
Share: Save:

পায়েল পাল থেকে নমিতা নস্কর। পঞ্চমী থেকে লক্ষ্মীপুজোর পর দিন পর্যন্ত পাঁচ জন। শ্বশুরবাড়ির পণের দাবি না-মেটাতে পারার শিকার হয়েছেন ওই পাঁচ বধূ। উলুবেড়িয়ায় মিতা মণ্ডলের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সে তো শুধু একটি ঘটনায়। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি)-র রিপোর্ট বলছে, ২০১৫-তে পণের জন্য অত্যাচারিত হয়ে মৃত মহিলার সংখ্যার নিরিখে গোটা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ চতুর্থ স্থানে।

গত বছর রাজ্যে পণের দাবি না মেটায় ৪৯৮ জন মহিলা মারা গিয়েছেন। প্রতিটিই অপমৃত্যুর ঘটনা। তদন্তে প্রকাশ, এঁদের কেউ আত্মঘাতী হয়েছেন, কাউকে খুন করা হয়েছে। গোটা দেশে‌ এই সংখ্যাটা ৭৫১৭। দেশে বড় শহরগুলোয় এই ধরনের ঘটনার সংখ্যার বিচারে দিল্লি, হায়দরাবাদের পরেই রয়েছে কলকাতা।

অথচ পণপ্রথা আইনবিরুদ্ধ। তার পরেও এমন হচ্ছে কী করে? খোদ রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় মনে করেন, পণপ্রথা ও পণের জন্য নারীদের উপর নির্যাতন রোধে একাধিক আইন থাকলেও সেগুলো প্রয়োগের জন্য, সেগুলোর অস্তিত্ব সম্পর্কে মহিলাদের অবগত করার জন্য সচেতনতা প্রসার ও প্রচারের কার্যক্রম নেই।

সুনন্দাদেবীর বক্তব্য, এক সময়ে দুইয়ের বেশি সন্তানের জন্ম আটকানোর জন্য ‘হম দো, হমারা দো’-এর প্রচারের হোর্ডিং, পোস্টার, রেডিও-টিভি-তে জিঙ্গল বা অ্যাড ফিল্ম, দেওয়াল লিখন রাজ্যের যত্রতত্র ছড়ানো হয়েছিল। লোকের মুখে মুখে ঘুরত সে কথা। একই ভাবে পাল্‌স পোলিও-র টিকা নেওয়ার জন্যও প্রচার চলছে। দু’ক্ষেত্রেই ফল মিলেছে হাতেনাতে। তা হলে পণপ্রথা বিরোধী প্রচারকে এমন তুঙ্গে নিয়ে যাওয়া হবে না কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন সুনন্দাদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার দু’পক্ষকেই পণপ্রথা বিরোধী প্রচার ও এই ব্যাপারে আইনে নারীদের অধিকার ও দোষীদের শাস্তি সম্পর্কে সচেতন করে প্রচারের জন্য প্রকল্প নিতে হবে।’’

বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার কন্যাভ্রূণ নষ্ট না করা ও কন্যাসন্তানকে জন্ম দেওয়ার জন্য প্রচারে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। ‘‘অথচ সেই ‘বেটি’-র বিয়ের পরে তাকে পণের হাত থেকে বাঁচাতে, পণপ্রথা চিরতরে বন্ধ করতে কোনও কর্মসূচি কেন্দ্র বা রাজ্য, কোনও সরকারই নেয়নি’’— সখেদে বলেন সুনন্দা দেবী।

কিন্তু রাজ্য সরকার বুঝে উঠতে পারছে না, এই নিয়ে কী পদক্ষেপ করা যাবে। নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আইন করলেই যে সমস্যা মিটে যাবে, তা নয়। বাল্য বিবাহ কিন্তু আইনে বন্ধ করা যায়নি। সাফল্য অনেকটা মিলেছে কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য।’’ তা হলে পণপ্রথা বন্ধ করার জন্য, পণের দাবি নিয়ে মহিলাদের উপর অত্যাচার বন্ধ করতে কি কোনও প্রকল্প নেওয়া হবে? ওই আধিকারিক অবশ্য কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।

পণপ্রথার বিরুদ্ধে নতুন আইনে যে পণের দাতা-গ্রহীতা— দু’পক্ষই দোষী। তাই, বিয়ের সময়ে যে মেয়ের বাপের বাড়ি এক বার পণ দিয়েছে, তারা পরবর্তী সময়ে ফের পণের দাবির মুখে অভিযোগ জানাতে কিছুটা পিছু হটছে বলে মনে করছেন নারী আন্দোলনকারীদের একাংশ।

নারী আন্দোলনের কর্মী, পেশায় শিক্ষিকা শাশ্বতী ঘোষ মনে করেন, মহিলাদের নিজেদের সচেতনতার ক্ষেত্রেই কিছুটা সমস্যা আছে। তিনি বলেন, মেয়েদের অধিকার সুনিশ্চিত করতে আইন আছে। কিন্তু সেই আইনের বলে নিজেদের সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারে বহু মহিলা এখনও কুণ্ঠাবোধ করেন এবং বিয়ের সময়ে বাপের বাড়ি থেকে দেওয়া পণ বা টাকা-গয়নাকে সেই সম্পত্তির পরিপূরক ভাবেন। শাশ্বতী দেবীর কথায়, ‘‘এই মানসিকতা বন্ধ করতে না পারলে পণ বন্ধ হবে না।’’ তাঁর পর্যবেক্ষণ, বিয়ের সময়ে বাপের বাড়ি থেকে কিছু না আনলে তাঁদের সম্মান থাকবে না, এই মানসিকতা থেকে মেয়েদের বেরিয়ে আসতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dowry system State government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE