আরোগ্য নিকেতন সকলের শুশ্রূষা করে, কিন্তু নিজের এই অসুখটা এখনও সারিয়ে উঠতে পারছে না!
‘রেফার’ করার অসুখ। মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেছেন, এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসাপাতালে হুটহাট রোগী রেফার করা চলবে না। রোগী প্রথমে যে-হাসপাতালে যাবেন, তাঁর দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে। কিন্তু রেফার-রোগটা বিশেষ সারেনি। তাই এ বার স্বাস্থ্য ভবনে বিশেষ কন্ট্রোল রুম গড়ে অযৌক্তিক রেফার আটকানোর চেষ্টা করছে স্বাস্থ্য দফতর। এ ব্যাপারে সোমবার বিশেষ নির্দেশিকা জারি করেছেন স্বাস্থ্যসচিব অনিল বর্মা।
নয়া নির্দেশিকার নির্যাস: সরকারি হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজে রোগী আসার পরে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল যদি মনে করে যে রোগীকে উন্নত পরিষেবা দিতে অন্য কোথাও রেফার করতে অর্থাৎ পাঠাতে হবে, তা হলে সেখানকার কর্তৃপক্ষ বা দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকেরা প্রথমে স্বাস্থ্য ভবনে তৈরি কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। কন্ট্রোল রুমের তরফে রেফারাল হাসপাতালে যোগাযোগ করা হবে। রেফারাল হাসপাতাল রাজি হলে তবেই রোগীকে সেখানে পাঠানো যাবে। এবং রোগীকে সেখানে পাঠাতে হবে সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সেই।
ব্যাধি সামলাতে এমন কন্ট্রোল রুম বা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ কেন?
স্বাস্থ্য শিবির সূত্রের খবর, বারবার সতর্ক করেও সরকারি হাসপাতালের রেফার-ব্যাধি সারানো যাচ্ছে না। কয়েক বছর আগে রেফার বন্ধ করতে এবং রেফারের ফলে রোগীর ভোগান্তি দূর করতে ‘রেফারাল রেজিস্ট্রি’ তৈরির কথা ঘোষণা করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। কয়েক মাস কাটতে না-কাটতেই সেই পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়ে। তা মেনে চলেনি কোনও হাসপাতালই। বহু সরকারি হাসপাতালে বিশেষ করে সন্ধ্যার পরে ইমার্জেন্সিতে রোগী এলে চিকিৎসার বন্দোবস্ত না-করে তাঁকে পত্রপাঠ রেফার বা অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়াটাই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে দিশাহারা হয়ে রোগীকে নিয়ে ছুটে বেড়াতে হয় বাড়ির লোকেদের। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রত্যাখ্যাত হতে হয়। এই অবস্থায় একাধিক হাসপাতালে টানাহেঁচড়া করতে করতে চিকিৎসার আগেই প্রাণহানির অজস্র নজির আছে। সেই অমানবিক পরিস্থিতির মোকাবিলা করতেই এই নতুন ব্যবস্থা।
স্বাস্থ্য দফতরের নয়া নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, যে-হাসপাতালে রোগী প্রথমে আসবেন, তারা রেফার করার পরিকল্পনা করলেও প্রথমে রোগীকে স্থিতিশীল করতে হবে তাদেরই। তার পরে সত্যিই অন্যত্র পাঠানোর প্রয়োজন পড়লে স্বাস্থ্য দফতরের ওই কন্ট্রোল রুমের সাহায্যে তার ব্যবস্থা করতে হবে। রেফারাল হাসপাতাল যদি সেই মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট রোগীকে নিতে না-চায়, বিকল্প হাসপাতাল খোঁজার দায়িত্ব নিতে হবে কন্ট্রোল রুমের চিকিৎসককে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি রোগী নিজে অন্যত্র যেতে চাইলে তিনিও সরাসরি ওই কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করতে পারেন। রেফার বা অন্যত্র রোগী পাঠানোকে ঘিরে কোনও সমস্যা দেখা দিলে ওই কন্ট্রোল রুম সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের সুপার, অধ্যক্ষ অথবা সরাসরি স্বাস্থ্য অধিকর্তা বা স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তাকে বিষয়টি জানিয়ে সমাধানের চেষ্টা করতে পারে। এবং যাবতীয় ‘রেফারাল কেস’-এর তথ্য নথিভুক্ত করে রাখতে হবে কন্ট্রোল রুমকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy