Advertisement
E-Paper

ঠিক যেন ২০১৯-এর মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র! সাজেশনের বিজ্ঞাপনী ভাষা নিয়ে ঘোর বিতর্ক

এ বার ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থের সঙ্গে, বৃহত্তর অর্থে শিক্ষার স্বার্থের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া একটি বিজ্ঞাপনের ভাষা নিয়ে তুমুল বিবাদবিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

মধুমিতা দত্ত 

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৩৪
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

বিজ্ঞাপনের ভাষা নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে, বিতর্ক হয়। আদালতেও গড়ায়।

এ বার ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থের সঙ্গে, বৃহত্তর অর্থে শিক্ষার স্বার্থের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া একটি বিজ্ঞাপনের ভাষা নিয়ে তুমুল বিবাদবিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ‘ঠিক যেন ২০১৯-এর মাধ্যমিকের কোয়েশ্চেন পেপার’— এমনই বিজ্ঞাপন দিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার সাজেশন বিক্রি করছে একটি বেসরকারি সংস্থা। প্রশ্ন উঠছে, ব্যবসার খাতিরে চমক সৃষ্টির তাগিদ যতই থাকুক, ছাত্রছাত্রীরা একই সঙ্গে প্রলুব্ধ ও বিভ্রান্ত হয়, এমন ভাষা বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা যায় কি?

শিক্ষক শিবিরের বক্তব্য, এমন বিজ্ঞাপন কোনও মতেই দেওয়া যায় না। এতে পড়ুয়ারা বিভ্রান্ত হয়। সেই সঙ্গে এই সন্দেহও জাগে যে, সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা সংস্থা সত্যিই ২০১৯-এর মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র জেনে যায়নি তো! বেসরকারি প্রকাশনা সংস্থা বিভিন্ন স্কুলের প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে কী ভাবে সাজেশন হিসেবে ব্যবহার করছে, উঠছে সেই প্রশ্নও।

দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংগঠনগুলির তৈরি প্রশ্নপত্র কিনেই রাজ্যের বিভিন্ন স্কুল মাধ্যমিকের টেস্ট নিয়ে আসছে। এ বছর থেকে টেস্টের প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট স্কুলকেই তৈরি করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। প্যাকেটের উপরে সংশ্লিষ্ট স্কুলের নাম লিখে প্রতিটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র পর্ষদে পাঠাতেও বলা হয়েছিল।

আরও পড়ুন: সরকারি প্রকল্পে অনীহা শবরদের, তাঁদের মতো করে বোঝাতে চায় রাজ্য

তার থেকে বাছাই করে তৈরি হচ্ছে পর্ষদের নিজস্ব টেস্ট পেপার। পর্ষদের তরফে টেস্ট পেপার প্রকাশও দীর্ঘদিনের রেওয়াজ।

এই পরিস্থিতিতে বেসরকারি কোনও সংস্থার সাজেশনকে আসন্ন মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হিসেবে আদৌ দাবি করা যায় কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। সংশ্লিষ্ট প্রকাশন সংস্থার পক্ষে নীলাঞ্জন মণ্ডল জানান, ২০১৭ সালেও তারা এই ধরনের সাজেশন বই প্রকাশ করেছিলেন। দেখা যায়, ২০১৮ সালের মাধ্যমিকে সব বিষয়ের প্রায় অধিকাংশ প্রশ্নের সঙ্গে তা মিলে গিয়েছে। তাই এ বার তাঁরা বিজ্ঞাপনে ‘ঠিক যেন ২০১৯-এর মাধ্যমিকের কোয়েশ্চেন পেপার’ শব্দগুলি ব্যবহার করেছেন।

আরও পড়ুন: বাল্যবিয়ে রুখে পথ দেখাচ্ছেন মুস্তারি

কিন্তু রাজ্যের সরকারি স্কুলশিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসুর বক্তব্য, এমন দাবি কখনওই করা যায় না। এতে পড়ুয়ারা বিভ্রান্ত হবে। তা ছাড়া বিষয়টি অনৈতিকও। ২০১৯-এর মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে এমন দাবি কী ভাবে করা যায়, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। সৌগতবাবু বলেন, ‘‘এতে মনে হচ্ছে, যে-সব মডারেটর মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র তৈরি করেছেন, তাঁদের সঙ্গে ওই প্রকাশ সংস্থার যোগ রয়েছে! পর্ষদের অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।’’ একদা যে-শিক্ষক সংগঠনের টেস্ট পেপার পরীক্ষার্থীরা সব থেকে বেশি অনুসরণ করত, সেই নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতি বা এবিটিএ-র সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্যেরও প্রশ্ন, যে-পরীক্ষা এখনও হয়নি, তার প্রশ্নপত্র সাজেশন বইয়ে আছে বলে কী ভাবে দাবি করা যায়?

নীলাঞ্জনবাবু অবশ্য জানান, এই জন্যই তাঁরা ‘ঠিক যেন’ শব্দ দু’টি ব্যবহার করেছেন। তাঁদের সাজেশন বইয়ে রাজ্যের প্রায় দেড়শো স্কুলের টেস্টের প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছে। অভিজ্ঞ শিক্ষকদের দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ‘বিজ্ঞানভিত্তিক’ সাজেশন।

কৃষ্ণপ্রসন্নবাবুর প্রশ্ন, স্কুলগুলির টেস্টের প্রশ্নপত্র যদি পর্ষদে জমা দেওয়া জরুরি হয়, তা হলে সেগুলোই বেসরকারি প্রকাশন সংস্থা তাদের বইয়ে ব্যবহার করতে পারে কী ভাবে? পর্ষদ বিষয়টি দেখেও দেখছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। সেই সঙ্গে তিনি জানান, প্রতি বারের মতো এ বছরেও ডিসেম্বরের শুরুতেই টেস্ট পেপার প্রকাশ করবে এবিটিএ।

বিজ্ঞাপনের বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক মহল যতই আপত্তি তুলুক, এই নিয়ে পর্ষদের বিশেষ হেলদোল দেখা যাচ্ছে না। বক্তব্য জানতে চাওয়ায় পর্ষদ-সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কে কী করছে, কী করে বলব? এ-সব নিয়ে আপত্তি করলে ওদের অকারণ গুরুত্ব দেওয়া হয়।’’

Suggestion Book Advertisement Language Madhyamik Exam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy