কাজে মগ্ন মুস্তারি খাতুন। —নিজস্ব চিত্র।
প্রায় এক দশক আগে তাঁর বিয়ে হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু যাবতীয় বিরুদ্ধ মতের মোকাবিলা করে সেই বাল্যবিবাহ রুখে দিয়েছিলেন তিনি নিজেই। তার পরে লেখাপড়া শিখে এখন কম্পিউটারে স্নাতক। উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ থানার প্রত্যন্ত ভাটোল এলাকার ডাঙাপাড়ার বাসিন্দা সেই মুস্তারি খাতুন এখন লড়াই করছেন অন্য নাবালিকাদের বিয়ে আটকাতে। এবং সেখানেই থেমে না গিয়ে চেষ্টা করছেন তাদের আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর করতেও।
এমন জনা পঞ্চাশ মেয়ে এখন মুস্তারির সঙ্গে হাতের কাজ করেন। জেলা তথ্য সংস্কৃতি দফতরের আয়োজনে যে সব মেলা হয়, সেই হাতের কাজ বিক্রির জন্য স্টলও দেন। বিক্রিবাটা খারাপ হয় না। মুস্তারির চোখে অবশ্য আরও বড় স্বপ্ন। তিনি বলেন, ‘‘আগামী বছর থেকে আমরা অনলাইনে বেচাকেনা শুরু করব।’’
অথচ এই মেয়েটিকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন বাবা-মা। সরাসরি সে বিষয়ে এখন কিছু বলতে চান না তাঁরা। কিন্তু বোঝালেন, তখন সমাজ-সংস্কারের চাপে পড়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মুস্তারি যখন একাদশ শ্রেণিতে পড়তেন, তখন বাড়ি থেকে বিয়ের কথা শুরু হয়। কিন্তু রুখে দাঁড়ান মুস্তারি। এখন অবশ্য তাঁর মা রোকেয়া খাতুন এবং বাবা ইয়াসিন আলি মেয়ের জন্য গর্বিত। মা বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই হাতের কাজের ঝোঁক ছিল মুস্তারির। ও জীবনে আরও উন্নতি করবে।’’ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বাবা বলেন, ‘‘মেয়ে খুব ভাল কাজ করছে। বাবা হিসেবে আমি গর্বিত।’’
আরও পড়ুন: রাতে বাড়ি ফেরার পথে মহিলার যৌনাঙ্গে লাঠি ঢুকিয়ে মার, নেতৃত্ব দিলেন গ্রামের মহিলা প্রধান!
মুস্তারির লড়াই অবশ্য ঘরেই থেমে যায়নি। এ পর্যন্ত পাঁচটি নাবালিকা বিয়ে আটকেছেন তিনি। দু’টি নিজের এলাকায়, দু’টি করণদিঘিতে এবং একটি চাকুলিয়ায়। তবে তার থেকেও বড় কথা, হাতের কাজের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে অনেক নাবালিকাকে স্বনির্ভর হওয়ার পথ দেখিয়েছেন। তাঁর নিজের কথায়, ‘‘এর ফলে অনেকের বিয়ের ভাবনা এমনিতে অঙ্কুরেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’
আরও পড়ুন: শবর মহিলাকে মার, অভিযোগ
মুস্তারি যখন রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, মু্খ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প ‘কন্যাশ্রী’ তখন ভবিষ্যতের গর্ভে। এখন মুস্তারির বয়স ২৭ বছর। স্বাভাবিক ভাবে তাঁকে আর কন্যাশ্রীর পর্যায়ে ফেলা যায় না। কিন্তু তাঁর সাহায্যে এগিয়ে এসেছে জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। জেলা তো বটেই, বাইরে কোথাও সরকারি মেলা হলে সেখানে স্টল দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন তাঁরা। উত্তর দিনাজপুরের তথ্য-সংস্কৃতি আধিকারিক রানা দেব দাস বলেন, ‘‘ওঁকে দিয়ে প্রচার করাব, এমন চিন্তাভাবনা রয়েছে। আমাদের হাতে তো ঋণ অনুমোদনের দায়িত্ব নেই। তবে উপরমহলে সুপারিশ করেছি মুস্তারির নাম। তিনি তো এখন এলাকার ‘রোল মডেল’!’’
মুস্তারির অধীনে এখন কাজ করে ১২-১৬ বছর বয়সি মেয়েরা। তাদের কারও আর্থিক অবস্থাই ভাল নয়। তাদের হাতে তৈরি হয় ব্যাগ, চুড়ি, দুল এবং নানা ধরনের শো-পিস। মুস্তারির কথায়, ‘‘আমরা নিজেরাই এখন প্রতিষ্ঠান।’’
বিয়ে করবেন না? মুস্তারি বলেন, ‘‘সময় এলেই তা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy