E-Paper

বিএলও-সহায়কে ‘সাড়া নেই’ রাজ্যের

কয়েক জন বিএলও-র মৃত্যুর নেপথ্যে এসআইআর-কে সরাসরি দায়ী করে সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে লেখা চিঠিতে বিএলও-দের কাজের চাপের কথাও উল্লেখ করেছিলেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:৩২

—প্রতীকী চিত্র।

এসআইআর (ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন)-এর জেরে মৃত্যু। শুরু থেকেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। শাসক দলের অভিযোগ, জাতীয় নির্বাচন কমিশন বিএলও-দের উপর কাজের বিপুল বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে বলেই কয়েক জন বিএলও-র মৃত্যু হয়েছে। অবসাদে আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছেন কেউ কেউ। কমিশন-সূত্রে পাল্টা অভিযোগ, বিএলও-দের সহযোগিতার প্রশ্নে যে দাবিদাওয়া রাজ্য সরকারের কাছে পেশ করা হয়েছিল, তাতে এখনও মান্যতা দেয়নি নবান্ন। তা করা হলে বিএলও-দের কাজের বোঝা লাঘব হত অনেকটাই। প্রশাসনের তরফে এ নিয়ে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কেন্দ্রীয় বকেয়ার পাল্টা অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল!

কয়েক জন বিএলও-র মৃত্যুর নেপথ্যে এসআইআর-কে সরাসরি দায়ী করে সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে লেখা চিঠিতে বিএলও-দের কাজের চাপের কথাও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। শনিবার নদিয়ার এক বিএলও-র আত্মহত্যার পরে তাঁর ‘সুইসাইড নোট’ সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে মুখ্যমন্ত্রী আরও সরব হয়েছেন। সেই নোটের একটি অংশে লেখা রয়েছে, ‘...অফলাইন কাজ ৯৫% শেষ করে ফেলেছি কিন্তু অনলাইনে আমি কিছুই পারি না। বিডিও অফিসে এবং সুপারভাইজ়ারকে জানানো সত্ত্বেও ব্যবস্থা করল না।...বিএলও কাজ তুলতে না-পারলে প্রশাসনিক চাপ এলে আমার পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়।’

প্রশ্ন উঠছে, বিএলও-দের সহযোগিতা করার কথা কাদের? রাজ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কার্যালয় এবং জাতীয় নির্বাচন কমিশন সূত্রের পাল্টা অভিযোগ, মাসখানেক আগে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগের প্রস্তাব পাঠানো হলেও, এখনও তার উত্তর রাজ্য সরকারের থেকে পাওয়া যায়নি। কয়েক মাসের জন্য এক হাজার ডেটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগের জন্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতর টেন্ডার করে তার ফলাফল নবান্নে পাঠিয়েছিল। তাতে এখনও সরকারি সম্মতি পাওয়া যায়নি।

এ ছাড়া বিএলও-দের যে ১৮ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা রয়েছে, তার অনুমোদনও এখনও বাকি। মোবাইল রিচার্জের জন্য ৫০০ টাকা করে দেওয়ার কথা থাকলেও, তা ঝুলে রয়েছে। বিজেপি নেতা অমিত মালবীয়ও এই ক’টি বিষয়ে রাজ্যের জবাব চেয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর পোস্টের উল্লেখ করে তাঁর মন্তব্য, তথ্য বিকৃত করে, বিএলও-দের জন্য কুমিরের কান্না কাঁদছেন কেন?

প্রশাসনের শীর্ষ মহল এ নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও, তৃণমূলের মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তীর প্রশ্ন, “রাজ্য সরকারের কাছে টাকা চাইতে লজ্জা করছে না! ১ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখে কেন এই রকম নির্লজ্জ আবদার করা হচ্ছে? হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও টাকা আটকে রেখে প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে, অন্য দিকে অর্থহীন অজুহাত দেওয়া হচ্ছে।”

বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “বিএলও-দের উপর রাজনৈতিক চাপ দেওয়া হচ্ছে ভুয়ো ফর্ম আপলোড করার জন্য। তা তাঁদের মানসিক চাপও বাড়াচ্ছে। রাজ্য সরকার চূড়ান্ত অসহযোগিতা করছে এই সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায়।” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, "দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিএলও- দের এমন মর্মান্তিক পরিণতি হবে কেন? কমিশন এর দায় অস্বীকার করতে পারে না। কিন্তু রাজ্য সরকারেরও দায়িত্ব ছিল, বিএলও-দের কাজে সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করা। কিন্তু সে সব না করে সরকার বা শাসক পক্ষ বিএলও-দের বিপন্নতার রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চাইছে।” প্রসঙ্গত, কমিশন জানিয়েছে, এ দিন পর্যন্ত প্রায় ৯৯.৭৭% ফর্ম বিলি হয়ে গিয়েছে এবং জমা পড়ে ফর্ম ডিজিটাইজ় করার হার প্রায় ৪০.২০%।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Special Intensive Revision BLO West Bengal government Election Commission of India

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy