Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Beleghata ID Hospital

দেরিতে রিপোর্ট, সংক্রমণ-আশঙ্কা বাড়ছে আইডিতে

করোনা-সন্দেহভাজনদের প্রথমে আইডি-র আইবি-৬ ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হচ্ছে। রাজ্যে এ-পর্যন্ত সাত জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

রিপোর্টের অপেক্ষায়।

রিপোর্টের অপেক্ষায়।

সৌরভ দত্ত
শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২০ ০৫:৪৭
Share: Save:

আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছিলেন। তার উপরে করোনার উপসর্গও ছিল। তড়িঘড়ি রোগীকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের আইবি-৬ ওয়ার্ডে ভর্তি করিয়ে লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য নাইসেডে (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজ়িজ়েস) পাঠিয়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসকদের আশঙ্কা সত্যি করে পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে না-পড়ে, সেই জন্য তৎপরতার সঙ্গে আক্রান্তকে আইবি-২ ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা জরুরি ছিল। কিন্তু রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়ায় সেটাই করা সম্ভব হল না। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের দেরি পর্যবেক্ষণ বিভাগে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

করোনা-সন্দেহভাজনদের প্রথমে আইডি-র আইবি-৬ ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হচ্ছে। রাজ্যে এ-পর্যন্ত সাত জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ছ’জন আইডি-তে চিকিৎসাধীন। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়ায় ছ’জনের মধ্যে কাউকেই দ্রুত সঙ্গে আইবি-২ ওয়ার্ডে সরানো যায়নি। যাঁরা নিশ্চিত করোনা-রোগী, তাঁদের জন্য ওই ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। করোনা চিকিৎসায় রাজ্যের নোডাল হাসপাতাল আইডি-র পাশাপাশি এমআর বাঙুর হাসপাতালেও আছেন করোনা সন্দেহভাজনেরা। স্বাস্থ্য ভবনের খবর, রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়ায় এ দিন সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন পর্যবেক্ষণাধীন লোকজন।

স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, দ্বিতীয় আক্রান্তের বাবা-মা এবং পরিচারকের দেহেও যে করোনা ভাইরাস ধরা পড়েছে, তা সন্ধ্যার মধ্যে জানা গিয়েছিল। কিন্তু আইডি-কর্তৃপক্ষ ই-মেলে রিপোর্ট পান রাত ১১টা নাগাদ। এই টানাপড়েনে দু’জন সন্দেহভাজন রোগীকে দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় বলে অভিযোগ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ডে অনেক সুস্থ মানুষ রয়েছেন। করোনা সন্দেহে ভর্তি হলেও তাঁদের দেহে ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলবে, এমন ভাবার কারণ নেই। সুস্থ রোগীদের মধ্যে যাতে করোনা-আক্রান্ত ব্যক্তির দেহের সংক্রমণ ছড়িয়ে না-পড়ে, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি।

কিন্তু এ-পর্যন্ত ছ’জনের রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, লাল ফিতের ফাঁসে পরের দিন ই-মেল পৌঁছেছে, এমন ঘটনাও ঘটেছে। এই প্রক্রিয়ায় সংক্রমণের আশঙ্কা কেন বাড়ছে, সেই বিষয়ে এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আইবি-২ ওয়ার্ডে আলাদা ঘর আছে পর্যবেক্ষণাধীন ব্যক্তিদের জন্য। কিন্তু সেখানে শৌচাগার নেই। বারান্দা দিয়ে ওই ওয়ার্ডের সকলের জন্য যে-শৌচাগার রয়েছে, পর্যবেক্ষণে থাকা লোকজনকে সেটাই ব্যবহার করতে হবে।’’ ঝুঁকির আর বাকি রইল কী!

নাইসেডের রিপোর্ট প্রথমে যাচ্ছে স্বাস্থ্য ভবনে। সেখান থেকে সরকারি প্রক্রিয়া মেনে তা পৌঁছয় আইডি-কর্তৃপক্ষের কাছে। আইডি-কর্তৃপক্ষের একাংশের বক্তব্য, রিপোর্ট না-পেলে রোগীদের পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ড থেকে সরানোর নির্দেশও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। হাসপাতালের এক চিকিৎসক-প্রশাসক বলেন, ‘‘লিখিত রিপোর্ট না-পেলে আক্রান্তকে স্থানান্তরিত করব কিসের ভিত্তিতে? এই সময়ের মধ্যে পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ডের সুস্থ মানুষেরা যে ভাইরাসের সংস্পর্শে চলে আসতে পারেন, সে-দিকে কারও খেয়াল নেই।’’ অন্য এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘বলা হচ্ছে, রিপোর্ট নিয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করা প্রয়োজন। কিসের গোপনীয়তা? জনস্বাস্থ্যে সব কিছুর আগে প্রয়োজন দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া। করোনার মোকাবিলায় সেটা আরও বেশি করে জরুরি।’’

এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আইডি-র অধ্যক্ষা অণিমা হালদার বলেন, ‘‘রিপোর্টের বিষয়টি আমাদের এক্তিয়ারভুক্ত নয়। রোগীরা যাতে সুষ্ঠু পরিষেবা পান, সেই ব্যাপারে সকলে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Beleghata ID Hospital Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE