Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

ভুল করে কোভিড রোগীকে বাড়ি পাঠাল বাঙুর! ফের নিয়ে যেতেই মৃত্যু

মৃত বৃদ্ধ আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৮ এপ্রিল থেকে অসুস্থতা বোধ করতে শুরু করেন তিনি।

বৃদ্ধকে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়ির সামনে অ্যাম্বুল্যান্স। —নিজস্ব চিত্র

বৃদ্ধকে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়ির সামনে অ্যাম্বুল্যান্স। —নিজস্ব চিত্র

সিজার মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২০ ২০:৩৮
Share: Save:

কোভিড পজিটিভ রোগীকে ‘নেগেটিভ’ বলে ছেড়ে দিল সরকারি হাসপাতাল! ভুল ভাঙল প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর। তড়িঘড়ি স্বাস্থ্য দফতর বাড়ি থেকে সেই রোগীকে নিয়ে গেলেন হাসপাতালে। কিন্তু দ্বিতীয় বার ভর্তি হওয়ার পরের দিন সকালেই মৃত্যু হল সেই রোগীর। তার মাঝে গোটা পরিবারের সঙ্গে পুরো একটা দিন কাটিয়ে গেলেন কোভিড সংক্রমিত সেই ব্যক্তি। ওই পরিবারে রয়েছে ৭ মাসের একটি শিশুও। এ ব্যাপারে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, বিষয়টির কথা তাঁরা শুনেছেন। সবিস্তারে খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।

মৃত বৃদ্ধ আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৮ এপ্রিল থেকে অসুস্থতা বোধ করতে শুরু করেন তিনি। সর্দি, কাশি, জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। আক্রান্ত বৃদ্ধের ছেলে ফোনে মঙ্গলবার বলেন, ‘‘২২ এপ্রিল বিকেলে বাবাকে প্রথমে নিয়ে যাই একটি বেসরকারি হাসপাতালের ফিভার ক্লিনিকে। সেখানে বলা হয়, আগে এমআর বাঙুর বা বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে দেখাতে। সেখান থেকে বাবাকে নিয়ে যাই এমআর বাঙুর হাসপাতালে। সেখানে বাবাকে ভর্তি করে নেওয়া হয়।”

মৃতের ছেলে জানিয়েছেন, গত ২৫ এপ্রিল স্বাস্থ্যভবন থেকে একটা ফোন পান তিনি। সেই ফোনে জানানো হয় যে, তাঁর বাবার লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এবং পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। পরের দিন সকালে ২৬ এপ্রিল ফের ফোন আসে স্বাস্থ্য দফতর থেকে। গোটা পরিবারকে বাড়িতে কোয়রান্টিনে থাকতে বলা হয়। বৃদ্ধের ছেলের দাবি, ওই দিন বিকেলেই ফোন আসে এমআর বাঙুর হাসপাতাল থেকে। বৃদ্ধের ছেলে বলেন, ‘‘ফোন করে বলা হয়, আমার বাবার কোভিড পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে। বাবাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। আমি যেন রাতেই বাবাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসি।”

সেই অনুযায়ী ২৬ এপ্রিল রাত ১০টার সময় এমআর বাঙুর হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় ওই বৃদ্ধকে। হাসপাতালের ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে লেখা— রোগীর ‘কোভিড নেগেটিভ’। বৃ্দ্ধের ছেলে বলেন, ‘‘আমরা নিশ্চিন্ত মনে বাবাকে নিয়ে আসি। বাড়িতে সবার সঙ্গেই ছিলেন বাবা। বাড়িতে রয়েছেন আমার ৬৩ বছরের মা, স্ত্রী, ৭ মাসের ছেলে এবং ৬ বছরের মেয়ে।”

অ্যাম্বুল্যান্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বৃদ্ধকে। —নিজস্ব চিত্র

পরের দিন অর্থাৎ ২৭ এপ্রিল বিকেলে ফের ফোন আসে স্বাস্থ্যববন থেকে। খোঁজ নেওয়া হয় যে, তাঁরা হোম কোয়রান্টিনে আছেন কি না? কারও কোনও উপসর্গ দেখা দিয়েছে কি না? তখন বৃদ্ধের ছেলে স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিককে জানান যে, তাঁর বাবার রিপোর্ট নেগেটিভ পাওয়া গিয়েছে। বাবাকে হাসপাতাল ছেড়েও দিয়েছে। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই ফের ফোন আসে স্বাস্থ্য দফতর থেকে। জানানো হয়, ভুল করে এম আর বাঙুর কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিয়েছেন। আসলে ওই বৃদ্ধের রিপোর্ট পজিটিভ। স্বাস্থ্যভবন থেকেই বৃ্দ্ধের পরিবারকে জানানো হয়, অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হবে বাড়িতে।

সোমবার রাতেই স্বাস্থ্যভবন থেকে ওই বৃদ্ধের বাড়িতে পাঠানো হয় অ্যাম্বুল্যান্স। কোভিড রোগীকে পরিবহণের সমস্ত নিয়ম মেনে বৃদ্ধকে ফের নিয়ে যাওয়া হয় এমআর বাঙুর হাসপাতালে। এ বার ভর্তি করা হয় এমআর বাঙুরের কোভিড বিভাগে। বৃদ্ধের ছেলের অভিযোগ, ‘‘বাবা হাসপাতাল থেকে ফেরার পর সামান্য দুর্বল ছিলেন। কিন্তু বেশ সুস্থ ছিলেন। নিজে হেঁটেই অ্যাম্বুল্যান্সে ওঠেন। হাসপাতালে যাওয়ার পরেই রাত সাড়ে ১১টার সময় হাসপাতাল থেকে ফোন করে বলা হয়, বাবার অবস্থা খারাপ। সকালে ফোন করে হাসপাতাল জানায়, বাবা মারা গিয়েছেন। যে লোক কয়েক ঘণ্টা আগেও কথা বলছিলেন তিনি পরের দিনই মারা গেলেন!”

গোটা ঘটনা ঘিরে চরম আতঙ্কে গোটা ওই পরিবার। বৃদ্ধের ছেলে বলেন, ‘‘বাবা কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালের ভুলে গোটা দিন আমাদের সঙ্গে কাটালেন। এ বার জানি না আমাদের কী হবে?”

বাঙুর হাসপাতাল থেকে দেওয়া ডিসচার্জ সার্টিফিকেট। —নিজস্ব চিত্র

স্বাস্থ্য দফতর আগামী ৪ মে গোটা পরিবারের কোভিড পরীক্ষা করবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু বৃদ্ধের সঙ্গে ওই ঘটনা ঘটার পর হাসপাতালে ভর্তি হতে নারাজ গোটা পরিবার। বৃদ্ধের ছেলে বলেন, ‘‘আমরা ভয় পাচ্ছি হাসপাতালে যেতে। গেলে কী হবে জানি না।” বৃদ্ধের ছেলের দাবি, হাসপাতাল থেকে তাঁর বাবার ডেথ সার্টিফিকেট পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। হাসপাতাল থেকে একটা চিরকূট দিয়ে বলা হয়েছে, কলকাতা পুরসভা থেকে ডেথ সার্টিফিকেট নিতে।

বৃদ্ধের পরিবারের অভিযোগ নিয়ে এমআর বাঙুর হাসপাতালের সুপার শিশির কুমার নস্করের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তাঁকে হোয়াট্‌সঅ্যাপে মেসেজ করা হলেও কোনও উত্তর মেলেনি। যোগাযোগ করা হয়েছিল শুভাঞ্জন দাসের সঙ্গে। রাজ্য প্রশাসনের ওই যুগ্ম সচিব কোভিড সংক্রান্ত বিশেষ টাস্ক ফোর্সের সদস্য এবং এমআর বাঙুর কোভিড হাসপাতালের তদারকির দায়িত্বে। তিনিও ফোন ধরেননি। জবাব দেননি মেসেজের। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এমআর বাঙুরে এ রকম একটা ঘটনার কথা শুনেছি। আমরা খোঁজ নিচ্ছি। সমস্ত কিছু জানতে চাওয়া হয়েছে।” তিনি জানিয়েছেন, গোটা বিষয় না জেনে তিনি এখনই কিছু বলতে পারবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE