প্রতীকী ছবি।
নবান্ন থেকে প্রশাসনিক ‘ভার্চুয়াল’ বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিম বর্ধমানের করোনা সংক্রমণের হার নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের দাবি, ভিন্ জেলা ও ভিন্ রাজ্য থেকে অনেকেই পশ্চিম বর্ধমানে আসছেন। সে জন্যই এই অবস্থা।
এ দিন মমতা বলেন, ‘‘পশ্চিম বর্ধমানে কোভিড রেট ৫.৯ শতাংশ (অর্থাৎ, জেলায় একশো জনের পরীক্ষায় কত জন সংক্রমিত)। এত বেশি কেন? শিল্প ক্ষেত্র না কি ঘিঞ্জি এলাকার জন্য?’’ এর পরেই জেলার প্রতিনিধি ভিন্ জেলা ও ভিন্ রাজ্যের কথা বলেন। মমতা জেলা প্রশাসনকে পরামর্শ দেন, ‘‘পাশ্ববর্তী রাজ্য থেকে যাঁরা আসবেন, তাঁদের আলাদা হিসেব রাখতে হবে। এখানে চিকিৎসা হলেও হিসেব হবে ওখানে। পাশের জেলার লোকেরাও যেহেতু পশ্চিমবঙ্গের সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলার সঙ্গে হিসেব হবে। ডিএম, এসপি, সিএমওএইচ-দের বারবার এটা বলছি। পাশের রাজ্য থেকে কেউ এলে চিকিৎসা পরিষেবাও দিতে হবে। আগে ভর্তি করিয়ে নিয়ে পরিষেবা দেওয়ার সময়ে ঠিক ঠিকানাটা নিয়ে নিতে হবে।’’
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৪ অগস্ট পর্যন্ত সংক্রমিতের সংখ্যা ৩,১২৩ জন। সুস্থ, ২,২৩৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। কিন্তু সংক্রমণ বাড়ছে কেন? রাজ্য সরকারের তৈরি ‘কোভিড ম্যানেজমেন্ট কমিটি’র পশ্চিম ও পূর্ব বর্ধমান জেলার ‘কোঅর্ডিনেটর’ ডাক্তার সমরেন্দ্রকুমার বসুর ব্যাখ্যা, ‘‘অন্য জায়গার তুলনায় পশ্চিম বর্ধমানে করোনা প্রকোপ অনেকটা পরে দেখা গিয়েছে। সংক্রমণের নিয়ম অনুযায়ী, তা বাড়তে-বাড়তে শীর্ষে পৌঁছয়। পরে তা কমতে থাকে। এখন এই জেলার ক্ষেত্রে সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছনোর সময়।’’
পাশাপাশি, জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও কিছু পদক্ষেপ করা দরকার বলে মনে করছেন ডাক্তারদের একাংশ। কমিটির রিপোর্টেও এই জেলায় নতুন কোভিড-হাসপাতাল চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, সেফ হোম ও নিভৃতবাস কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো, বেসরকারি হাসপাতালের মাধ্যমে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা, গোটা ব্যবস্থায় বড় নার্সিংহোমগুলিকে যুক্ত করা এবং প্রশাসনকে আরও কড়া হওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। সেই সঙ্গে জেলায় স্বাস্থ্য দফতরের মধ্যে কোথাও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলেও ওই কমিটির পর্যবেক্ষণ।
তবে ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর আসানসোল শাখার সভাপতি শ্যামল সান্যালের দাবি, ‘‘স্বাস্থ্য-বিধি ঠিক ভাবে মেনে চললে সংক্রমণে লাগাম পরানো সম্ভব হত। পাড়া, গ্রাম, গলিতে নজরদারি সে ভাবে নেই।’’ পাশাপাশি, অন্য এলাকা থেকে আসা লোকজনের ঠিক সময়ে পরীক্ষা হচ্ছে না বলেও তাঁর অভিযোগ। সেই সঙ্গে আসানসোলে ‘আরটিপিসিআর’ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার বলেও মনে করছেন ডাক্তারদের একাংশ।
স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরে সমন্বয়ের অভাবের যে অভিযোগ উঠছে, সে প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়ার জন্য যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেননি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) দেবাশিস হালদার। জবাব মেলেনি মেসেজের। তবে জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ীই কাজ করা হবে।’’ আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনারেটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা নজরদারি আরও কড়া করার আশ্বাস দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy