Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

‘লকডাউন হালকা ভাবে নেবেন না’

এগরায় যে বিয়েবাড়ির সূত্রে পূর্ব মেদিনীপুরে প্রথম করোনা আক্রান্তের হদিশ মিলেছিল, সেই পরিবারের কর্ত্রী সম্প্রতি সুস্থ হয়ে ফিরেছেন। করোনা-যুদ্ধে নিজের অভিজ্ঞতা জানালেন সেই হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক-পত্নী।নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এই সময় নিয়ম মানাটা ভীষণ জরুরি। সামান্য গা ছাড়া মনোভাবেও বড় বিপদ হতে পারে।

ছবি: পিটিআই

ছবি: পিটিআই

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২০ ০৪:১৪
Share: Save:

অ্যাম্বুল্যান্সটা বাড়ির সামনে দাঁড়ানোর পরেও বিশ্বাসই হচ্ছিল না, সত্যি নিজের ঘরে ফিরে এসেছি!

করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ আসার পরে গত ২৮ মার্চ অ্যাম্বুল্যান্সেই এগরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল থেকে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কলকাতার বেলেঘাটা আইডি-তে। তখন মানসিক ভাবে একেবারে ভেঙে পড়েছিলাম। মনে হয়েছিল, আর বাড়ি ফেরা হবে না। কিন্তু বেলেঘাটার ওই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক আর নার্সদের সেবা-শুশ্রূষায় সুস্থ হয়ে গত বুধবার বাড়ি ফিরেছি।

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এই সময় নিয়ম মানাটা ভীষণ জরুরি। লকডাউনকে কেউ হালকা ভাবে নেবেন না। সামান্য গা ছাড়া মনোভাবেও বড় বিপদ হতে পারে।

আমাদের বাড়িতে তো বিপদ এল উৎসবের হাত ধরেই। আমার ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে আসা এক আত্মীয় গত ২৫ মার্চ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন জানতে পেরে সকলেই খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। পরে আমার এবং অন্য এক আত্মীয়ার করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ এল। দু’জনেরই বেলেঘাটা আইডি-তে চিকিৎসা চলে। উনিও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

করোনা উপসর্গ না থাকায় আমাকে ‘প্রথম ক্যাটেগরি’তে রাখা হয়েছিল। প্রাতরাশে দিত ডিম-পাউরুটি। দুপুরে ভাত, ডাল, আনাজের হালকা তরকারি। কোনও দিন মাছের ঝোল দিয়ে ভাত। রাতে রুটি বা ভাত খেতাম। রোজ দুপুরে চিকিৎসক এসে কেমন আছি খোঁজ নিতেন। আর নার্সরা ২৪ ঘণ্টা নজর রাখতেন। ভাল-মন্দের খবর নিতেন। মনোবল জোগাতেন। খুব মন খারাপ হলে ফোনে স্বামী আর ছেলের সঙ্গে কথা বলতাম। নার্সরা একটা নির্দিষ্ট জায়গায় প্যাকেট থেকে বের করে ওষুধ রেখে দিতেন। সেখান থেকে নিয়ে ওষুধ খেতে হত। কোনও অসুবিধা হলে নার্সদের বললে ওঁরা চিকিৎসককে ডেকে দিতেন। সরকারি হাসপাতালে এত ভাল পরিষেবা পাব ভাবিনি।

গত ৬ এপ্রিল আমার লালারসের পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। পর দিন সকালে ফের নমুনা পরীক্ষায় পাঠানো হয়। সেই রাতেও রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তার পর গত বুধবার হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, আমি সুস্থ হয়ে গিয়েছি। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ছুটি দেওয়া হবে। শুনে চোখে জল এসে গিয়েছিল। স্বামীকে ফোন করে তখনই সব জানাই।

গত ৮ এপ্রিল, বুধবার বিকেল চারটে নাগাদ বেলেঘাটা আইডি থেকে আমাকে ছেড়ে দেয়। অ্যাম্বুল্যান্সে এগরার বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত ন’টা। চিকিৎসকেদের নির্দেশে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ‘হোম আইসোলেশনে’ থাকতে হবে আমাকে। বাড়িতে ভাত, ডাল, আলু মাখা, হালকা মশলা দিয়ে ডাঁটার ঝোল খাচ্ছি। আর চিকিৎসকেদের দেওয়া ওষুধও নিয়ম মেনে খেতে হচ্ছে। এখন সুস্থই আছি।

(অনুলিখন: গোপাল পাত্র)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Covid-19 Beleghata ID Hospital Egra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE