Advertisement
E-Paper

‘বুঝিনি এতটা ভয়ানক সময় অপেক্ষা করে আছে’

মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে কোটা শহরে রাস্তায় বেরোনো নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি হল। তার সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই লকডাউন শুরু  হয়ে গেল।

সায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ মে ২০২০ ০৩:৫৬
ফেরা: রাজস্থানের কোটা থেকে পড়ুয়াদের নিয়ে ফিরল বাস। শুক্রবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের বাইরে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

ফেরা: রাজস্থানের কোটা থেকে পড়ুয়াদের নিয়ে ফিরল বাস। শুক্রবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের বাইরে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

জাতীয় স্তরে মেডিক্যালের প্রবেশিকা পরীক্ষার (নিট) প্রস্তুতি নিতে বছর খানেক আগে কলকাতা থেকে কোটায় এসেছিলাম।

রাজস্থানের তৃতীয় জনবহুল শহর কোটার দেশ জোড়া পরিচিতি কোচিং সেন্টারের জন্য। হাজার হাজার পড়ুয়া এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে আসে। গত বছর এখানে একটি কোচিং ইনস্টিটিউটে ভর্তি হই। সংস্থাটির নিজস্ব ছাত্রাবাস উঠি। গত ফেব্রুয়ারি থেকে আমাদের মক টেস্ট শুরু হয়েছিল। পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। তখনও জানতাম না এতটা ভয়ানক সময় অপেক্ষা করে আছে।

মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে কোটা শহরে রাস্তায় বেরোনো নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি হল। তার সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই লকডাউন শুরু হয়ে গেল। শুরুতে মনে হয়েছিল দিন পনেরোর মধ্যে সব মিটে যাবে। কিন্ত লকডাউন দীর্ঘ হতেই আশঙ্কা বাড়তে লাগল। এর মধ্যেই উত্তরপ্রদেশের পড়ুয়াদের তাদের রাজ্য থেকে বাসে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল। ছাত্রাবাস ক্রমশ খালি হচ্ছিল। কোটাতে সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করায় আমাদের উদ্বেগও বাড়ছিল। ছাত্রাবাসে দু’বেলা কোনও মতে খাবার জুটলেও পেয়িং গেস্ট থাকা অনেক বন্ধুর তা-ও জোটেনি।

দিন কয়েক আগে শুনলাম আমাদের ফেরার একটা ব্যবস্থা হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে ওয়ার্ডেন এসে আমাদের তৈরি থাকতে বললেন।

আরও পড়ুন: রেড জ়োন নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধ

বুধবার দুপুরে হস্টেল থেকে বেরিয়ে পড়লাম। সন্ধ্যায় থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের পরে কোটা থেকে হাজার দু’য়েক পড়ুয়াকে নিয়ে পর পর বাস ছাড়া শুরু হল। জনা তিরিশেক পড়ুয়াকে নিয়ে সারা রাত আমাদের বাস ছুটেছে। ঘুম আসছিল না। সুনসান রাস্তায় কোথায় চলেছি তার কিছুই টের পাচ্ছিলাম না। গুগল ম্যাপ দেখে আঁচ পাওয়ার চেষ্টা করছিলাম।

হস্টেল কর্তৃপক্ষ রাতের খাবারের সঙ্গে কিছু জলের বোতল আর বিস্কুট দিয়েছিলেন। পর দিন সকালে মধ্যপ্রদেশের এক ছোট শহরে কিছু সময়ের জন্য বাস থামলেও সেখানে খাবার জোটেনি।

আরও পড়ুন: করোনা-আক্রান্তে সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি স্বাস্থ্যসচিবের চিঠিতে

সারা দিন খাবার ছাড়াই বাসে কাটিয়ে রাতে বারাণসীতে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের আশ্রমে ভাত-ডাল-তরকারি জুটল। রাতেই আবার বাস ছুটল। দু’জন ড্রাইভার পালা করে বাস চালাচ্ছিলেন। শুক্রবার দুপুরে ঝাড়খণ্ড পেরিয়ে আসানসোল ঢুকে কিছুটা স্বস্তি পেলাম। প্রশাসনের উদ্যোগে জল এবং খাবারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা চোখে পড়ল।

কলকাতা ফেরার পথে ভাবছিলাম বিহারের অভিষেক কুমার এবং শশী রঞ্জনের কথা। ওঁদের রাজ্য থেকে বাস এখনও আসেনি। শুনলাম ঝাড়খণ্ডও তাদের রাজ্যের পড়ুয়াদের ফিরিয়ে নিচ্ছে। কলকাতায় পৌঁছে শুনলাম লকডাউনের মেয়াদ বাড়ছে। বাবা-মার কথা ভাবতে ভাবতেই মনে হচ্ছিল আটকে থাকলে কি হতো ?

কোনও যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরলাম মনে হচ্ছে।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

Student Kota NEET Coronavirus Lockdown
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy