Advertisement
E-Paper

স্কুলে যৌন নিগ্রহ রোধে বিধি কোর্টের 

কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া প্রথমে চেয়েছিলেন, সরকারি ও বেসরকারি সব স্কুলে পড়ুয়াদের উপরে যৌন ও মানসিক নির্যাতন রুখতে রাজ্য সরকার একটি বিধি তৈরি করুক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:২০

কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া প্রথমে চেয়েছিলেন, সরকারি ও বেসরকারি সব স্কুলে পড়ুয়াদের উপরে যৌন ও মানসিক নির্যাতন রুখতে রাজ্য সরকার একটি বিধি তৈরি করুক। শুক্রবার, হাইকোর্টে তাঁর কার্যকালের শেষ দিনে তিনিই এই বিষয়ে একটি ‘গাইডলাইন’ বা বিধি-নির্দেশিকা তৈরি করে দিলেন। নির্দেশ দিলেন, ওই বিধি রূপায়ণে একটি ‘নোডাল এজেন্সি’ গড়তে হবে সরকারকে।

বিচারপতি পাথেরিয়ার নির্দেশে জানানো হয়েছে, নোডাল এজেন্সি বা নির্দেশিকা রূপায়ণকারী সংস্থায় থাকবেন রাজ্যের শিক্ষা, স্বরাষ্ট্র ও সমাজকল্যাণ দফতরের প্রতিনিধিরা। কোনও স্কুল নির্দেশিকা না-মানলে নোডাল এজেন্সি আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে। বিচারপতি একই সঙ্গে অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্তকে অনুরোধ করেছেন, সব স্কুলে দু’বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কাউন্সেলর (শিশুমন বিশেষজ্ঞ) নিয়োগের বন্দোবস্ত করা হোক।

গত বছরের শেষ দিকে কলকাতার একটি বেসরকারি ইংরেজি স্কুলে এক শিশু পড়ুয়ার উপরে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তার পুলিশি তদন্তে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে মামলা করেন শিশুটির বাবা। সেই মামলার শুনানিতে ২৬ সেপ্টেম্বর একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ে দেন বিচারপতি পাথেরিয়া। স্কুলে যৌন ও মানসিক নির্যাতন রুখতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, কমিটিকে সেই বিষয়ে সুপারিশ করতে বলেছিলেন তিনি। বিশেষজ্ঞ কমিটিকে সাহায্য করতে হাইকোর্টের আইনজীবী ফিরোজ এডুলজিকে আদালত-বান্ধব হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। সেই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই এ দিন বিধি তৈরি করে দেন বিচারপতি। তিনি জানান, এখন এই মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না। নোডাল এজেন্সি কী কাজ করল, ছ’মাস পরে তা খতিয়ে দেখবে কোর্ট।

এডুলজি জানান, বিধিতে বলা হয়েছে, নোডাল এজেন্সির কাজ হবে স্কুলে যৌন নির্যাতনের বিষয়ে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের সচেতন করা, প্রশিক্ষণ দেওয়া, যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে কর্মশালা করা। তারা সচেতন করবে অভিভাবকদেরও।

বিধি-নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, স্কুলে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী নিয়োগের সময় তাঁর সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। নিযুক্ত ব্যক্তিকে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে, তাঁর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের বা অন্য অপরাধমূলক অভিযোগ আছে কি না। প্রতি বছর সেই হলফনামার পুনর্নবীকরণ চাই। এ ছাড়া প্রত্যেক পড়ুয়ার ঠিকানা, তার আপৎকালীন যোগাযোগের ফোন নম্বর রাখতে হবে স্কুলগুলিকে। স্কুলের অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক, ক্লাসটিচার এবং স্কুলটি যে-থানার আওতায় পড়ে, তাদের নম্বরও পড়ুয়াদের অভিভাবককে জানিয়ে রাখতে হবে। যৌন ও মানসিক নির্যাতন রুখতে স্কুল-কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক-অশিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে এবং গৃহীত সিদ্ধান্ত লিখে রাখতে হবে ‘লগ বুক’-এ।

আদালতবান্ধব জানান, ক্লাসের সময়ের বাইরে স্কুলের ভিতরে পড়ুয়ারা কী করছে, সে-দিকে সতর্ক নজর রাখতে হবে। যাঁরা নজরদারিতে থাকবেন, পড়ুয়াদের অভিভাবকের কাছে তাঁদের ফোন নম্বর দিয়ে রাখতে হবে। প্রতি বছর যৌন শিক্ষা সংক্রান্ত কর্মসূচি পালন করতে হবে নোডাল এজেন্সির অধীনে। কোন ধরনের স্পর্শ খারাপ আর কোনটা ভাল, সেই বিষয়ে সচেতন করতে হবে পড়ুয়াদের। ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তায় প্রতিটি স্কুলে ‘মনিটরিং কমিটি’ থাকা জরুরি। প্রধান শিক্ষক, অন্য এক জন শিক্ষক, অভিভাবকদের দুই প্রতিনিধি এবং সমাজের বিশিষ্ট কোনও ব্যক্তি, পুলিশ, স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ দফতরের সঙ্গে যুক্ত প্রতিনিধিরা থাকবেন সেই কমিটিতে।

নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে সঙ্গে সঙ্গে তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করে তা নিরাপদে রাখতে হবে স্কুল-কর্তৃপক্ষকে। পরে তা তুলে দিতে হবে পুলিশের হাতে। নির্যাতিত বা নির্যাতিতার গোপনীয়তার ব্যবস্থাও করতে হবে। তার পরিচয় যাতে প্রকাশ না-পায়, বিশেষ ভাবে নজর রাখতে হবে সেই দিকে। যাঁর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠবে, রক্ষা করতে হবে তাঁর গোপনীয়তাও। নিজের পছন্দের যে-কোনও স্কুলে পুনরায় ভর্তি হওয়ার স্বাধীনতা থাকবে নির্যাতিত বা নির্যাতিতার।

School Sexual Harassment Calcutta High Court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy