E-Paper

এসআইআর নিয়ে জারি উত্তাপ শিবির শুরু সিপিএমের, সিএএ-তর্কে দুই শাসক

নভেম্বর মাস জুড়ে গোটা রাজ্যে সহায়তা শিবির চালানোর কর্মসূচি নিয়েছে সিপিএম। তারই অঙ্গ হিসেবে দলের তরফে একটি ভিডিয়ো-বার্তা তৈরি করে এসআইআর-এর গণনা-পত্র পূরণের পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৫ ০৬:২৯
এসআইআর শিবিরে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। যাদবপুরে।

এসআইআর শিবিরে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। যাদবপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

আর এক দিন পর থেকেই বাড়ি বাড়ি গণনা-পত্র নিয়ে যাওয়া শুরু করবেন নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরা। ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সং‌শোধনের (এসআইআর) ওই প্রক্রিয়াকে সামনে রেখে সক্রিয়তা বাড়াচ্ছে সব দলই। গণনা-পত্র পূরণে সহায়তা করার জন্য ভিডিয়ো প্রকাশ করে ওয়ট্‌সঅ্যাপ নাম্বার ঘোষণা করা হয়েছে সিপিএমের তরফে। মানুষের সমস্যা বুঝতে তারা শুরু করেছে শিবিরও। এরই মধ্যে আবার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে (সিএএ) আবেদনের জন্য সহায়তা শিবিরকে কেন্দ্র করে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে গোলমালও বেধেছে বিজেপির।

নভেম্বর মাস জুড়ে গোটা রাজ্যে সহায়তা শিবির চালানোর কর্মসূচি নিয়েছে সিপিএম। তারই অঙ্গ হিসেবে দলের তরফে একটি ভিডিয়ো-বার্তা তৈরি করে এসআইআর-এর গণনা-পত্র পূরণের পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যাদবপুরের ১০১ ও ১০৪ নম্বর ওয়ার্ডে রবিবার সিপিএমের সহায়তা শিবিরে বসে মানুষের প্রশ্ন ও সমস্যা শুনেছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। ওই দুই এলাকায় এক সময়ে উদ্বাস্ত হয়ে আসা মানুষের পাশাপাশি মতুয়া সম্প্রদায়ের লোকজনও আছেন। সুজনের মতে, ‘‘অনেকের কাছেই এখনও এসআইআর-এর পদ্ধতি পরিষ্কার নয়। তাঁদের নানা প্রশ্ন আছে, কাগজপত্র নিয়ে উদ্বেগও আছে। বিজেপি প্রকৃত ভোটার বাদ দিতে এবং তৃণমূল ভুয়ো ভোটার রাখতে চাইছে। আমাদের দায়িত্ব এই সময়ে মানুষকে যথাসাধ্য সহায়তা করা।’’

এসআইআর শুরুর আগে নাগরিকত্ব পেতে সিএএ-তে আবেদন করতে হবে, বিজেপির বিরুদ্ধে এমন প্রচারের অভিযোগে গোলমাল বেধেছে পূর্ব বর্ধমানের দাঁইহাটে। তৃণমূলের লোকজনের সঙ্গে বচসা, বিজেপির বুথ সভাপতির বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। দাঁইহাটের চরপাতাইহাটে শনিবার রাতে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। বিজেপির দাবি, ওই এলাকায় গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে আসা নানা পরিবার রয়েছে। তাদের সুবিধার জন্য সিএএ নিয়ে প্রচার করা হচ্ছিল। তৃণমূল সে কারণে হামলা চালায়। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, এসআইআর এবং সিএএ নিয়ে এলাকায় ভুল বোঝাচ্ছে বিজেপি। তবে হামলা চালানো হয়নি। বীরভূমের তৃণমূল নেতা কাজল শেখ এ দিনই বলেছেন, ‘‘২০২১ থেকে ২০২৪ সালের নির্বাচনের মাঝে অনেকটা সময় ছিল, তখন কেন এসআইআর করলেন না? ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগেই কেন এত কম সময়ে এসআইআর করতে হচ্ছে? এসআইআর চালু করতে গিয়ে আতঙ্কে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকে হিন্দু।’’

বিজেপি নেতারাও তাঁদের মতো করে চাপ বাড়িয়ে চলেছেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রামে দাবি করেছেন, ‘‘সকলেই জানেন এ রাজ্যে এসআইআর ১০০% সফল হবে না। বিহারে রাজ্য সরকার সহযোগিতা করেছিল। তাই সেখানে সফল হয়েছে। তবে এখানে ৫০% এসআইআর সফল হলেই রাজ্য সরকার পরিবর্তন হয়ে যাবে। এটা শাসক দল বুঝে গিয়েছে, বাংলাদেশি মুসলিম আর মৃত ভোটারদের নাম বাদ গেলে তারা ক্ষমতায় থাকবে না। তাই এনআরসি-র নামে মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে।’’ কলকাতায় কাল, মঙ্গলবার মমতা ও অভিযেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল যে মিছিলের ডাক দিয়েছে, তাকেও কটাক্ষ করে শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘তৃণমূলের বিশেষ শান্তি বাহিনী এবং ১০০ দিনের কাজের লোকেরা হাঁটবেন। আর পুলিশ দড়ি দিয়ে ঘিরে রাখবে। ভেতরে চোর-চিটিংবাজরা হাঁটবেন!’’

মেচেদায় একটি বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করেও পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর হবে। আর এক প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার সমাজমাধ্যমে অভিযোগ করেছেন, দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারি ব্লকের করখায় দুই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী দীর্ঘ দিন ধরে বাস করলেও তৃণমূলের ভোট-ব্যাঙ্কের স্বার্থে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। জেলার পুলিশ সুপার চিন্ময় মিত্তল অবশ্য বলেছেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।”

পাল্টা সরব শাসক শিবিরও। কলকাতা প্রেস ক্লাবে একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর মন্তব্য, “বিজেপি ঠিক কী করতে চাইছে, তার প্রমাণ পর পর আত্মহত্যার তালিকা। যাঁরা মারা গিয়েছেন, প্রত্যেকে হিন্দু। বিজেপি ২০২০-তে বলেছিল, হিন্দু মানেই শরণার্থী আর মুসলমান মানেই অনুপ্রবেশকারী। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এনআরসি এবং এসআইআর একই মুদ্রার এ-পিঠ ও-পিঠ।” এসআইআর সংক্রান্ত কর্মী সম্মেলনও শুরু করেছে শাসক দল। ক্ষীরপাই টাউন হলে এ দিন ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা আইএনটিটিইউসি-র উদ্যোগে এমন সম্মেলনে ছিলেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPIM TMC BJP

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy