Advertisement
E-Paper

সূর্য-গৌতমের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে স্বস্তি বাংলায়

নিজের শহরের বাইরে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হলে সাধারণত তিনি অনুপস্থিত থাকেন। দিল্লিতে সেই গৌতম দেবই সাদা টুপি পরে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের হয়ে মাঠে নেমে জোটের পক্ষে ঝোড়ো ব্যাটিং করলেন! অসুস্থ শরীর নিয়েই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪১

নিজের শহরের বাইরে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হলে সাধারণত তিনি অনুপস্থিত থাকেন। দিল্লিতে সেই গৌতম দেবই সাদা টুপি পরে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের হয়ে মাঠে নেমে জোটের পক্ষে ঝোড়ো ব্যাটিং করলেন! অসুস্থ শরীর নিয়েই।

বিপরীতে কেরল ব্রিগেডের বিষাক্ত স্পিন। সঙ্গে প্রকাশ কারাট শিবিরের ভয়ানক সব বাউন্সার! এ সবের মোকাবিলায় গৌতমবাবু এবং দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের আক্রমণাত্মক ব্যাট কঠিন পিচে বাংলাকে ভরসা জোগাল। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বুধবার সকালে তাঁদের দেখানো পথ ধরেই পরের পর্বে ম়ৃদুল দে, রামচন্দ্র ডোম, রেখা গোস্বামী, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, সুকোমল সেনেরা বাংলায় জোটের পক্ষে জোরালো সওয়াল করে গেলেন। নোট পাঠিয়ে বৃহত্তর ঐক্যের কথাই বললেন বাংলার শ্যামল চক্রবর্তী এবং কেরলের ভি এস অচ্যুতানন্দন। তাঁদের সম্মিলিত যুক্তিই কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের প্রথম দিনে পাল্টা চাপ তৈরি করল সংখ্যাগুরু কারাট শিবিরের উপরে!

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আজ, বৃহস্পতিবার। এবং দিনের শেষে ঈষৎ স্বস্তি নিয়েই এ কে গোপালন ভবন ছেড়েছেন বঙ্গ ব্রিগেডের নেতারা। এ রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের দাবি, ‘‘বৈঠকে ভোটাভুটির আর কোনও প্রশ্ন নেই। এখান থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য মৃত্যুবাণ পাঠানোরই তোড়জোড় চলছে!’’ আর দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘বাংলার মত দলে সংখ্যালঘু ঠিকই। কিন্তু তাকে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ওই রাজ্যের পরিস্থিতি যে একেবারেই ব্যতিক্রমী, তা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

দলের শীর্ষ সূত্রের ইঙ্গিত, আদর্শগত বিরোধ, পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত লাইন এবং কেরল শিবিরের প্রবল আপত্তি— এ সবের নিরিখে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের সঙ্গে সরাসরি জোটে যাওয়া হয়তো সম্ভব হবে না সিপিএমের পক্ষে। তবে দু’পক্ষের মধ্যে আসন সমঝোতা করার লক্ষ্যে কৌশলগত বোঝাপড়ায় আলিমুদ্দিনকে সবুজ সঙ্কেত দিতে পারে কেন্দ্রীয় কমিটি। কী ভাবে, তার পদ্ধতিগত দিক নিয়েই এখন শেষ মুহূর্তের চর্চা চলছে। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘আমাদের লক্ষ্য, তৃণমূলের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বিরোধী পক্ষকে ভোটের ময়দানে নামানো। তার জন্য সব ধরনের মানুষকে কাছে টানার চেষ্টা করব।’’

সিপিএম নেতৃত্ব ধরেই রেখেছেন, রাজ্যে কংগ্রেসের এখন যে ৭-৮% ভোট আছে, কৌশলগত সমঝোতা করে তার সবটা এক দিকে টেনে আনা সম্ভব নয়। কিন্তু তার কিছু অংশও তৃণমূলের বিরুদ্ধে এক বাক্সে ফেলতে পারলে বিরোধীদের লাভ। সেই সঙ্গেই এ রাজ্যের এক সিপিএম নেতার বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনার জন্য কৌশলগত বোঝাপড়ায় সম্মতি দিলেও সেটা নিচু তলায় গিয়ে জোটেরই চেহারা নেবে।’’

কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ দিন কিছুটা নজিরবিহীন ঘটনাও ঘটেছে। সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির প্রারম্ভিক বক্তব্যের পরে পলিটব্যুরোর সংখ্যাগুরু মত কী, তা বৈঠকে জানিয়েছেন এস আর পিল্লাই। আবার সংখ্যালঘু মত পেশ করেছেন সূর্যবাবু। আর গৌতমবাবু একেবারে চাঁছাছোলা ভঙ্গিতে যুক্তি দিয়েছেন, কংগ্রেস-বাম জোট হলেই তৃণমূলের কার্যকরী মোকাবিলা করা যাবে। নইলে কার্যত মমতার হাতে উপহার তুলে দেওয়া হবে! বিরোধীরা আলাদা আলাদা লড়বে আর তৃণমূল ফায়দা নিয়ে যাবে, এটা হতে দেওয়া যাবে না!

পঞ্জাবের এক নেতাও বৃহত্তর ঐক্যের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। কয়েক দিন আগে পঞ্জাব প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অমরেন্দ্র সিংহও তাঁদের রাজ্যে বামেদের নিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ জোট চেয়েছিলেন। কিন্তু কেরল বা তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যের নেতারা বাংলাকে মাঠ
ছেড়ে দেননি মোটে! সরাসরি কংগ্রেসের নাম বাদ রেখে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একজোট করার প্রস্তাবেও কেরলের আপত্তি! গৌতমবাবুদের পাল্টা হিসাবে যেমন এ দিনই কেরলের এ বিজয়রাঘবন কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও রকম বোঝাপড়ার বিরুদ্ধে জোর সওয়াল করেছেন। পেশাদার একটি সংস্থাকে দিয়ে করানো সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বিধানসভা ভোটে কেরলে ১৪০টির মধ্যে ৮০টি পেয়ে ক্ষমতায় আসতে পারে বামেরা। কেরলের নেতাদের প্রধান যুক্তি, বঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হলে কিছু আসন বাড়তে পারে। কিন্তু একটি রাজ্যে কিছু আসন বাড়ানোর জন্য আর একটি রাজ্যে নিশ্চিত জয়ে আপস করা যায় না!

কেরল থেকে বাংলাকে পৃথক করার চূড়ান্ত লড়াই-ই হবে আজ!

MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy