Advertisement
E-Paper

ত্রাণ বিলিতে দুর্নীতির অভিযোগে ঝাঁটা-জুতো-চড়, ফেরত মিলছে টাকাও

ত্রাণে স্বজনপোষণের অভিযোগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর ২ ব্লকের নন্দকুমার পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য প্রশান্ত মাইতির বাড়িতেও এ দিন বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২০ ০৪:৩২
পঞ্চায়েত সদস্যদের বাড়িতে ঝাঁটা-জুতো নিয়ে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র

পঞ্চায়েত সদস্যদের বাড়িতে ঝাঁটা-জুতো নিয়ে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র

আমপান-ত্রাণ বিলিতে দুর্নীতির অভিযোগে ঝাঁটা-জুতো নিয়ে চড়াও হওয়া, ‘চড়-থাপ্পড়’, মারামারি— বাদ যাচ্ছে না কিছুই। আবার ‘ক্ষমা চাওয়া’, টাকা ফেরানো— হচ্ছে এ সবও। উঠছে বেআইনি ভাবে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অভিযোগও।

যেমন, হুগলির পান্ডুয়ার সিমলাগড়-ভিটাসিন পঞ্চায়েতের গোয়াড়া গ্রামের ডাক্তার মুর্মুকে সস্ত্রীক মাথা গুঁজতে হচ্ছে পড়শির বাড়িতে। ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। ওই গ্রামেরই পাঁচিলঘেরা দোতলা বাড়িটির কোনও ক্ষতি হয়নি ঘূর্ণিঝড়ে। অথচ, বাড়ির মালিকের মা ক্ষতিপূরণের ২০ হাজার টাকা পেয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাড়ির মালিক দেবাশিস মুখোপাধ্যায় এলাকার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা। প্রভাবশালী শাসকনেতার মায়ের থেকে টাকা ফেরত এবং সঠিক তদন্তের দাবি তুলেছেন গ্রামের অনেকেই। একই দাবি বিজেপিরও।

ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত থেকে পাঠানো ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকার ভিত্তিতেই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজ চলছে।’’ পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের রেজিনা খাতুনের দাবি, ‘‘দেবাশিসবাবুর মায়ের নাম তালিকায় আছে কিনা এবং তিনি ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন কিনা, জানি না।’’ ওই গ্রাম থেকে নির্বাচিত তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য শ্রাবণী রানা মজুমদার বলেন, তাঁর তৈরি তালিকায় দেবাশিসবাবুর মায়ের নাম ছিল না। তিনি বলেন, ‘‘গ্রামের ৪০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই তালিকাই পঞ্চায়েতে জমা দিই। এখন শুনছি, পরে কেউ দেবাশিসবাবুর মায়ের নামও তালিকায় ঢুকিয়েছেন।’’

দুই চিত্র: ডাক্তার মুর্মুর বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণের টাকা মেলেনি (বাঁ দিকে)। গ্রামেরই তৃণমূল নেতার দোতলা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও তাঁর মা ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন বলে অভিযোগ। নিজস্ব িচত্র

এ নিয়ে দেবাশিসবাবুর বক্তব্য, ‘‘একই বাড়িতে থাকলেও আমার সঙ্গে মায়ের এখন সম্পর্ক নেই। মা ঝড়ের ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন কিনা, কী ভাবে পেলেন, বলতে পারব না।’’ দেবাশিসবাবুর মা কল্পনাদেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তিনি ওই বাড়িতেই ছোট ছেলে শুভাশিসের সঙ্গে থাকেন। শুভাশিসের দাবি, ‘‘মা আলাদা যে ঘরে থাকেন, ঝড়ে তার দেওয়াল ভেঙে যায়। পঞ্চায়েতে ক্ষতিপূরণের আবেদন করি। তালিকায় মায়ের নাম আছে।’’

ঝাঁটা-জুতো পর্বটি উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর ধর্মপুকুরিয়া পঞ্চায়েত এলাকার। সে সব হাতে নিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা চাইতে বৃহস্পতিবার বিকেলে এলাকায় পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সদস্যের বাড়িতে হাজির হয় জনতা। গোপাল দে নামে ওই পঞ্চায়েত সদস্য অবশ্য বলেন, ‘‘দুর্নীতির অভিযোগ কেউ প্রমাণ করতে পারলে, তাঁকে ধন্যবাদ জানাব। আমার নিজের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। আমি টাকা নিইনি।’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘বিজেপির লোকজন আমার ছেলেকে মারধর করেছে।’’ বিজেপি নেতা দেবদাস মণ্ডল বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ টাকা না-পেয়ে দাবি জানাতে গিয়েছিলেন। এর সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক নেই।’’

আরও পড়ুন: ত্রাণে দুর্নীতির নালিশ, তৃণমূলের কড়া মোকাবিলা

ত্রাণে স্বজনপোষণের অভিযোগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর ২ ব্লকের নন্দকুমার পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য প্রশান্ত মাইতির বাড়িতেও এ দিন বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। জগন্নাথচক গ্রামের ওই পঞ্চায়েত সদস্য বিক্ষোভকারীদের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চান বলে দাবি এলাকাবাসীর। তাঁদের কথায়, ‘‘প্রশান্তবাবু আমাদের বলেছেন, ‘ভুল হয়েছে। যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, তাঁদের টাকা পাওয়ার ব্যবস্থা করব’।’’

ত্রাণের টাকা নিয়ে পাছে বিতর্কে জড়াতে হয়— এই আশঙ্কায় আমপান-ত্রাণে পাওয়া ২০ হাজার টাকা এ দিন প্রশাসনকে ফেরত দেন পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা-৩ ব্লকের নলবনা পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের অজয় সাউ। টাকা ফেরালেন কেন? অজয়বাবুর জবাব, ‘‘দলের কয়েক জন বলল, টাকা নেওয়া ঠিক হবে না। বিতর্ক হতে পারে। তাই ফিরিয়েছি।’’ স্থানীয় সূত্রের অবশ্য দাবি, অজয়বাবুর বাড়ির তেমন ক্ষতি হয়নি।

আরও পড়ুন: সারদায় চূড়ান্ত খসড়া চার্জশিট গেল দিল্লিতে

এ দিন মেদিনীপুরে ‘ত্রাণ-দুর্নীতি’ প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের লোকেরাই লুট করছে। প্রশাসনের কর্মীরাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা শোনেন না। তাঁর দলের কর্মীরাও শোনেন না। বাংলার মানুষকে নিজের অধিকার নিজেকে বুঝে নিতে হবে।’’ যদিও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের জবাব, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ত্রাণ নিয়ে যে অভিযোগ আসছে, তা উনি কড়া হাতে মোকাবিলা করছেন।’’

হুগলির পান্ডুয়ার বেলুন-ধামাসিন পঞ্চায়েতে ক্ষতিপূরণ নিয়ে চাপানউতোরের জেরে এ দিন তৃণমূল-বিজেপির মারামারিতে ১২ জন জখম হন। মুর্শিদাবাদের জলঙ্গিতে প্রকৃত দুর্গতেরা ত্রাণ পাননি বলে অভিযোগ সিপিএম এবং কংগ্রেসের।

Cyclone Amphan TMC Relief Corruption
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy