Advertisement
E-Paper

১২ ঘণ্টায় ২৬১ মিমি বৃষ্টিতে ধসে গেল পাহাড়! অন্তত ২০ জনের মৃত্যু, আটকে বহু পর্যটক, সোমে উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন মমতা

১২ ঘণ্টায় ২৬১ মিলিমিটার বর্ষণে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা সাম্প্রতিক কালে দেখা যায়নি বলেই জানাচ্ছেন স্থানীয়েরা। কেউ কেউ বলছেন, শেষ বার এমন ভয়াবহ অবস্থা দেখা গিয়েছিল ২৭ বছর আগে, ১৯৯৮ সালে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৫ ২১:০২
ভয়াবহ পরিস্থিতি পাহাড়ে। —নিজস্ব চিত্র।

ভয়াবহ পরিস্থিতি পাহাড়ে। —নিজস্ব চিত্র।

পুজোর ঠিক আগে ঘণ্টা ছয়েকের টানা বৃষ্টিতে বানভাসি হয়েছিল কলকাতা। পুজো মিটতে না-মিটতেই দুর্যোগ-বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হল উত্তরবঙ্গের পাহাড়। ১২ ঘণ্টায় ২৬১ মিলিমিটার বর্ষণে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা সাম্প্রতিক কালে দেখা যায়নি বলেই জানাচ্ছেন স্থানীয়েরা। কেউ কেউ বলছেন, শেষ বার এমন ভয়াবহ অবস্থা দেখা গিয়েছিল ২৭ বছর আগে, ১৯৯৮ সালে।

শনিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে পাহাড়ে। কোথাও সেতু ভেঙে পড়েছে, কোথাও ধসে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-রাস্তাঘাট। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মিরিক এবং সুখিয়াপোখরিতে। মিরিকেই সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। উদ্ধারকাজে নেমেছে জাতীয় এবং রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, সেনা এবং স্থানীয় পুলিশ। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় উদ্ধারকাজ মধ্যে মধ্যে ব্যাহতও হয়েছে।

সৌরেনির কাছে দারাগাঁওয়ে গভীর রাতে ধস নামে। একটি বাড়ি ধসে যায়। আপার দুধিয়া বা ডাম্ফেডার এলাকায় চার থেকে পাঁচটি বাড়ি ধসে গিয়ে জলের তলায় চলে গিয়েছে। বেশ কিছু হোমস্টে ছিল দার্জিলিঙের ওই অংশে। সেগুলিও ভয়ঙ্কর ক্ষতিগ্রস্ত। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুধিয়া নদীর একপাশে থাকা বিএসএফের ক্যাম্পও।

পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে সোমবারই উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, রবিবার সকাল থেকেই নবান্নের কন্ট্রোল রুম থেকে পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দুর্যোগ তো আমাদের কারও হাতে নেই। আমরা মর্মাহত। উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলার সঙ্গে আমি আর মুখ্যসচিব ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক করেছি। সকালে ডিজি ফোন করেছিলেন। সকাল ৬টা থেকে আমি মনিটরিং করছি। আশা করছি, কাল (সোমবার) বিকেল ৩টের মধ্যে পৌঁছে যাব।’’ দুর্যোগে মৃতদের পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও।

পুজোর সময় হাজার হাজার পর্যটক পাহাড়ে বেড়াতে যান। এই বিপর্যয়ের জেরে তাঁদের অনেকেই আটকে পড়েছেন সেখানে। কত পর্যটক উত্তরবঙ্গে আটকে রয়েছেন, তার কোনও সরকারি হিসাব না মিললেও সংখ্যা যে অনেক, সে ব্যাপারে প্রশাসন নিশ্চিত। তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টাও চালানো হচ্ছে। তবে ধস নামায় অধিকাংশ সড়কপথই বন্ধ।

একাধিক জায়গায় ধস এবং সেতু ভেঙে শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং এবং কালিম্পং তথা সিকিমের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। রবিবার ভোর থেকেই এই পরিস্থিতি। প্রশাসন সূত্রে খবর, আপাতত বন্ধ শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পং এবং সিকিমগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। ২৯ মাইল, রবিঝোরার মতো একাধিক এলাকায় তিস্তার জল ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে বইছে। ডুয়ার্স হয়ে সিকিমগামী বিকল্প রাস্তা ৭১৭-এ বন্ধ। কার্শিয়াঙের দিলারাম এবং হুইসেলখোলা এলাকায় ধসে শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিংগামী ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কও বন্ধ হয়ে পড়েছে। দার্জিলিংগামী রোহিনীর রাস্তাও ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। জলের তোড়ে দুধিয়া সেতু ভেঙে শিলিগুড়ির সঙ্গে মিরিকের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পাহাড়ে ফুলবাড়ি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিজনবাড়ি, থানালাইনের মতো এলাকাও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

উত্তরবঙ্গে আটকে পড়া পর্যটকদের নিরাপদে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা তাঁর সরকার করবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি বলেছেন, ‘‘পর্যটকেরা অনেকে আটকে পড়েছেন। ওঁরা এখন যেন তাড়াহুড়ো না করেন। আপনারা যেখানে আছেন, থাকুন। হোটেলগুলিতে যেন পর্যটকদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া না-নেওয়া হয়। এটা আমাদের দায়িত্ব। প্রশাসন বিষয়টা দেখে নেবে।’’

কোন পথে যাতায়াত

দুধিয়া ব্রিজ ভাঙায় শিলিগুড়ি এবং মিরিকের মধ্যে মূল যে সড়কপথ, তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, মিরিক সৌরেনিতে আটকে পড়া পর্যটকদের নল-পটং-লোহাগড় হয়ে শিলিগুড়িতে পাঠানো হচ্ছে। ধস নামায় শিলিগুড়ি-দার্জিলিং রোহিণী রোড বন্ধ। বিপর্যস্ত হিলকার্ট রোড। ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ চলছে। এখনও পর্যন্ত পাঙ্খাবাড়ি রোড খোলা। খোলা দার্জিলিং থেকে মংপু হয়ে শিলিগুড়ি যাওয়ার রাস্তা। যানবাহন চলাচল করতে পারে মিরিক-পশুপতি-ঘুম-কার্শিয়াঙের রাস্তাতেও। তিস্তা ফুঁসে ওঠায় এবং ধসের কারণে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ। যার জেরে বন্ধ শিলিগুড়ি থেকে সিকিম-কালিম্পঙের সরাসরি যোগাযোগ। তবে খোলা রয়েছে লাভা-গরুবাথানের রাস্তা এবং শিলিগুড়ি-কালিম্পঙের পানবু রোড। যে যে রাস্তা খোলা, সেই সব রাস্তায় স্বাভাবিক ভাবেই যানজট তৈরি হয়েছে। এখনও শতাধিক পর্যটক দার্জিলিং, কালিম্পং থেকে সমতলে নামতে পেরেছেন বলে খবর প্রশাসনিক সূত্রে।

প্রধানমন্ত্রীর বার্তা

উত্তরবঙ্গের প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃতদের পরিবারকে সমবেদনা জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দার্জিলিং এবং সংলগ্ন এলাকার পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি কেন্দ্রের তরফে ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মৃতদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন তিনি। রবিবার দুপুরে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি লেখেন, “ভারী বর্ষণ এবং ভূমিধসের কারণে দার্জিলিং এবং সংলগ্ন এলাকার যা পরিস্থিতি, তার উপর নজর রাখা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের আমরা যথাসম্ভব সাহায্য করব।”

অভিষেকের বার্তা

মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি দার্জিলিঙের দুর্যোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। দলের কর্মীদের এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মা দুর্গার আশীর্বাদে এই বিপদের মোকাবিলা সম্ভব হবে বলে বার্তা দিয়েছেন অভিষেক। জিটিএ প্রধান তথা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার শীর্ষ নেতা অনীত থাপার দাবি, কেবল মিরিক অঞ্চলেই ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছেন তিনি। অন্যান্য জায়গা থেকেও নানা দুর্ঘটনার খবর পাচ্ছেন। এমতাবস্থায় ত্রাণের কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘মিরিকের এসডিও, বিডিও থেকে (দার্জিলিঙের) সাংসদ, পুরসভার চেয়ারম্যান, ইঞ্জিনিয়ার— সকলেই কাজে নেমেছেন। সকলে সতর্ক থাকুন।’’

সাংসদ রাজুর বার্তা

দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তা জানান, দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলায় ভারী বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাণহানি থেকে সম্পত্তির ক্ষতি, সরকারি পরিকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। তিনি সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘আমি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আমরা আমাদের বিজেপি কর্মীদের মানুষকে সাহায্য ও সহায়তার জন্য একত্রিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’’ পাহাড়ে ধস পরিস্থিতিকে রাজ্য বিপর্যয় ঘোষণা করার দাবি তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতাকেও চিঠি দিয়েছেন রাজু।

Heavy Rainfall Darjeeling
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy