Advertisement
E-Paper

হাসপাতালে রোগীদের পাশেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে রইল মৃতদেহ!

বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুরুষ বিভাগের সেই ৩ নম্বর ঘরে ডুরে চাদরে ঢাকা দেহটা পড়ে রয়েছে।

শুভাশিস সৈয়দ

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৩
মৃতদেহ মাঝে নিয়ে কয়েক ঘণ্টা এ ভাবেই পড়ে থাকতে হল রোগীদের। সোমবার বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

মৃতদেহ মাঝে নিয়ে কয়েক ঘণ্টা এ ভাবেই পড়ে থাকতে হল রোগীদের। সোমবার বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

গায়ে গা লাগানো একের পর এক শয্যা। ক্যাথিটার আর স্যালাইনের নল জড়ানো ভিড়ে কেউ যন্ত্রণায় গোঙাচ্ছেন, কেউ বলে চলেছেন, ‘আর পারছি না!’

বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুরুষ বিভাগের সেই ৩ নম্বর ঘরে ডুরে চাদরে ঢাকা দেহটা পড়ে রয়েছে। দেহের ডান পাশে ভাঙা হাত নিয়ে ছটফট করছেন এক রোগী, অন্য পাশে যন্ত্রণাকাতর এক যুবক তাঁর পা সটান তুলে দিয়েছেন মৃতদেহের পেটে। সোমবার সকালে হরিহরপাড়ার কানাইলাল মণ্ডল (৭২) মারা গিয়েছেন ঘণ্টা দুয়েক আগে। তবে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেহটি সরিয়ে নেওয়ার সময় পাননি!

এ দিন সকাল সোয়া আটটা নাগাদ কানাইবাবুর পরিজন এসে দেখেন, জীবিত-মৃতের এই সহাবস্থানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায় সেরেছে চোখ দু’টি তুলসী পাতায় ঢেকে দিয়ে! হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কানাইবাবুর মৃত্যুর সময় ভোর সোয়া চারটে। বেলা সাড়ে দশটা পর্যন্ত দেহটি পড়ে ছিল ওই শয্যাতেই।

শুধু শয্যা নয়, ওই ওয়ার্ড থেকেই যে দেহ সরিয়ে নেওয়া হাসপাতালের কর্তব্য, মেনে নিচ্ছেন মেডিক্যাল কলেজের সুপার দেবদাস সাহা। তিনি বলছেন, ‘‘এ তো ভয়ানক অন্যায়। কেন এত ক্ষণ দেহটি শয্যাতেই ফেলে রাখা হল বুঝতে পারছি না।’’ ওই ওয়ার্ডের কর্তব্যরত নার্সরা অবশ্য বলেছেন, ‘‘ভোরবেলায় মারা গিয়েছেন তো, তখন কে সরাবে বডি (দেহ), তাই বেডেই পড়ে ছিল!’’ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য স্থানীয় বিধায়ক কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তী যা শুনে বলছেন, ‘‘বাম আমল থেকেই সরকারি হাসপাতালগুলির এই অবস্থা। পালাবদলের পরে তার হাল যে তলানিতে, এ ঘটনাই তার প্রমাণ।’’

পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, হরিহরপাড়ার বিহারিয়া গ্রামের কানাই মণ্ডল খাট থেকে নামতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে ‘রেফার’ করে দেওয়া হয় বহরমপুর মেডিক্যল কলেজে। শুক্রবার রাতে কৌশিক ঘোষের অধীনে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। তাঁর ছেলে দেবেন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘ডাক্তারবাবু জানান, বাবার পক্ষাঘাত হয়েছে। দু’বোতল রক্ত লাগবে। কিন্তু ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে ওই দিন রাতে এক বোতলের বেশি রক্ত মেলেনি।’’ অভিযোগ, পরের দিন আরও এক বোতল রক্তের জন্য ওয়ার্ডে নার্সের কাছে ‘রিকুইজিশন স্লিপ’ আনতে গিয়ে দেবেন্দ্রকে শুনতে হয়েছিল, ‘হারিয়ে গিয়েছে।’ ফের নতুন করে ‘রিকুইজিশন স্লিপ’ তৈরি করে রক্ত আনতে রবিবার গড়িয়ে যায়।

কিন্তু স্লিপ হারিয়ে গেল কী করে? কৌশিকবাবুর জবাব, ‘‘এমনটা হওয়ার কথা নয়, খোঁজ নেব।’’ চিকিৎসকদের একাংশের অভিমত, রক্ত দিতে দেরি হওয়ায় কানাইবাবুর অবস্থার অবনতি হয়। সোমবার ভোরে মারা যান।

তবে, তার পরেও দেহ সরিয়ে নেওয়ার সময়ও পাননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ!

Berhampore Health
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy