Advertisement
০৩ মে ২০২৪

জেল-জরিমানা দুটোই আছে, মানা হচ্ছে কই 

উত্তরবঙ্গের জঙ্গলগুলির বেশিরভাগই জাতীয় উদ্যান অথবা অভয়ারণ্য। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের জঙ্গল চরিত্রগতভাবে আলাদা। এই জঙ্গলগুলি সংরক্ষিত হলেও জীবিকার প্রয়োজনে প্রতিদিন বহু মানুষ সেখানে যান। তাই উত্তরবঙ্গে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনের প্রয়োগ যেভাবে করা যায়, সেটা জঙ্গলমহলের জঙ্গলে করা সমস্যার বলে জানাচ্ছেন বনকর্মীরা।

বে-হুঁশ: প্রচারেও বদলায়নি হাতিকে উত্যক্ত করার ছবি। ফাইল চিত্র

বে-হুঁশ: প্রচারেও বদলায়নি হাতিকে উত্যক্ত করার ছবি। ফাইল চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৫২
Share: Save:

ছবি তোলার নামে বন্যপ্রাণীকে উত্যক্ত করা বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জেল-জরিমানা দু’টোই হতে পারে। তবে বাস্তবে পরিকাঠামোর অভাবে জঙ্গলমহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই নিয়ম মানা হয় না। তার ফলেই হাতির কাছাকাছি গিয়ে নিজস্বী কিংবা ছবি তুলতে গিয়ে বাড়ছে প্রাণহানির ঘটনা।

উত্তরবঙ্গের জঙ্গলগুলির বেশিরভাগই জাতীয় উদ্যান অথবা অভয়ারণ্য। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের জঙ্গল চরিত্রগতভাবে আলাদা। এই জঙ্গলগুলি সংরক্ষিত হলেও জীবিকার প্রয়োজনে প্রতিদিন বহু মানুষ সেখানে যান। তাই উত্তরবঙ্গে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনের প্রয়োগ যেভাবে করা যায়, সেটা জঙ্গলমহলের জঙ্গলে করা সমস্যার বলে জানাচ্ছেন বনকর্মীরা। খড়্গপুরের ডিএফও অরূপ মুখোপাধ্যায়ও জানান, উত্তরবঙ্গ আর ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জঙ্গলের চরিত্রের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। তাই বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনের প্রয়োগ করা উত্তরবঙ্গে যতটা সহজ, এখানে ততটা সহজ নয়। এমন পরিস্থিতিতে হাতির গতিবিধির এলাকায় এবং পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে সবাইকে সচেতন করতে সতর্কবার্তার বোর্ড দিতে উদ্যোগী হচ্ছে বন দফতর।

গত কয়েক বছর ধরেই জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় হাতি নিয়ে হোর্ডিং-ব্যানার দিয়ে প্রচার চালাচ্ছে বন দফতর। মাঝে মধ্যে এলাকায় প্রচারপত্রও বিলি করা হয়। এ বার দুর্গাপুজোর সময়েও বিভিন্ন মণ্ডপে হাতি নিয়ে সচেতনতামূলক ব্যানার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও মৃত্যু আটকানো যায়নি। রবিবার ঝাড়গ্রামের সাঁকরাইলে আতাডিহার জঙ্গলে হাতির ছবি তুলতে গিয়ে হাওড়ার আন্দুলের মৌড়ি পাকুড়তলার যুবক আশিস শীটের মৃত্যুর ঘটনায় বন দফতরের চিন্তা বেড়েছে। কয়েক মাস আগে জামবনিতে মোবাইল ফোনের ফ্ল্যাশ জেলে হাতির ছবি তুলতে গিয়ে এভাবেই প্রাণ হারান স্থানীয় এক যুবক। বছর চারেক আগে ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়ার জঙ্গলে হাতির ছবি তুলতে গিয়ে প্রাণ হারান মেদিনীপুর পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলর কৌস্তভ বন্দ্যোপাধ্যায়। বন দফতরের এক আধিকারিক জানান, এ বার প্রচারের ধরন বদলানোর কথা ভাবা হচ্ছে। হাতির কাছাকাছি যাওয়া যে নিজের মৃত্যুকেই ডেকে আনা সেটা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে। সচেতন করা হবে পর্যটকদেরও।

প্রাক্তন বনকর্তা সমীর মজুমদার বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই একসঙ্গে শয়ে শয়ে লোক হাতির ছবি তোলেন। তখন গুটিকয় বনকর্মীর কিছু করার থাকে না।’’ বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইন প্রয়োগের জন্য ঝাড়গ্রামে উপযুক্ত পরিকাঠামো-সহ বিশেষ ব্যবস্থা করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। সমীর আরও বলেন, ‘‘দৃষ্টান্ত হিসেবে এ ধরনের অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। না হলে অত্যুৎসাহীদের বিরত করা যাবে না।’’

ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হলেইচ্চি বলেন, ‘‘যে এলাকায় হাতির গতিবিধি আছে সেখানে হোর্ডিং দিয়ে সচেতনতা-প্রচার চলবে। কাছেপিঠে হাতি থাকে এমন পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে আরও সচেতন-বোর্ড দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Elephant Death Wild Life
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE