Advertisement
E-Paper

‘আমাদের ত্রাতা দেবদূত হিন্দুই’

দরগা রোডের চামড়ার কারখানার মালিক, ৩৪ বছরের কালিম এবং তাঁর স্কুলের সহপাঠী, চিৎপুর রোডের পাইকারি ব্যবসায়ী ইউসুফ রাজনীতির ছায়া মাড়াননি কখনও।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৬:০১
ইউসুফ আনিস (বাঁ দিকে) ও কালিম আহমেদ। মুসৌরিতে।

ইউসুফ আনিস (বাঁ দিকে) ও কালিম আহমেদ। মুসৌরিতে।

দিল্লি থেকে নিজের শহরে ফিরেও আতঙ্কের ঘোর কাটেনি দুই বন্ধুর। তবে এক রক্ষাকর্তার কথা ভেবে ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন তাঁরা।

মঙ্গলবার রাত ২টোর পরে কলকাতায় ফিরেছেন ইউসুফ আনিস ও কালিম আহমেদ। দিল্লির নারকীয় বিভীষিকা এবং স্বর্গের দেবদূতদের একযোগে চাক্ষুষ করে ফেলেছেন তাঁরা। ‘‘এ দেশে আর কাউকে যেন এ-সব দেখতে না-হয়,’’ বুধবার দুপুরে বলছিলেন কালিম। ইউসুফের কথায়, ‘‘ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে যাওয়া ছবিগুলো যে সব সময়ে ভুয়ো হয় না, সেটা টের পেলাম।’’ সেই সঙ্গে দু’জনেই বলছেন, ঈশ্বরপ্রেরিত এক দূতের কথা! প্রাণ হাতে করা কয়েকটি মুহূর্তে আবির্ভূত হয়ে যিনি তাঁদের রক্ষা করেছেন, তাঁর চেহারা এখন আর ঠিকঠাক মনেও করতে পারছেন না তাঁরা। হামলাকারীদের হাত থেকে গাড়ির চাবিটা উদ্ধার করে সেই দেবদূত তাঁদের হাতে ফেরত না-দিলে দু’জনের বেঁচে ফেরা সম্ভব হত না।

দিল্লি থেকে ভাড়ার গাড়ি নিজেরা চালিয়ে মুসৌরি বেড়ানোর পরের ঘটনা। সেটা সোমবার, সন্ধ্যা ৬টা। ক্যানাল রোড ধরে সবে দিল্লিতে ঢুকেছেন দুই বন্ধু। বেড়াতে বেরিয়ে রাজধানীতে গোলমালের খবর কেউই খেয়াল করেননি। কালিমের বিবরণ, ‘‘হঠাৎ এক দল যুবক ‘তোরা হিন্দু না মুসলিম’ বলে গাড়িটা ঘিরে ফেলল। আমি গাড়ি চালাচ্ছিলাম। মুসলিম শুনেই ‘গদ্দার’ বলে চোয়ালে সাত-আটটা ঘুষি। দেখি, পাশে পুলিশ নীরব দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে।’’ ইউসুফ জানান, হামলাকারীরা গাড়ির ‘উইন্ডস্ক্রিন’ ভেঙে দিয়েছিল। এক দল দুর্বৃত্ত তেড়ে আসছিল গাড়ির দিকে। তাদের হাতে লোহার রড। আশ্চর্য ঘটনাটা ঘটল ঠিক তখনই। কালিমের কথায়, ‘‘আমি তখন হাল ছেড়ে দিয়েছি। কোনও মতে মুখটা আড়াল করছি। হঠাৎই এক জন চাবিটা আমায় ফেরত দিয়ে বলল, ‘পালা!’ আর কিছু ভাবিনি! যন্ত্রের মতো গাড়ি ঘুরিয়ে পালালাম।’’ সে-রাতে অন্য সড়ক ধরে দিল্লিতে ঢুকে হোটেলে ছিলেন দু’জনে। পরের দিন বিমানে কলকাতা। ইউসুফের কথায়, ‘‘দিল্লিতে এক মুহূর্তের জন্যও আর পুলিশকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।’’

আরও পড়ুন: পুলিশের হাল দেখে বিস্মিত বিচারপতি মুরলীধর

দরগা রোডের চামড়ার কারখানার মালিক, ৩৪ বছরের কালিম এবং তাঁর স্কুলের সহপাঠী, চিৎপুর রোডের পাইকারি ব্যবসায়ী ইউসুফ রাজনীতির ছায়া মাড়াননি কখনও। শুধু প্রজাতন্ত্র দিবসে কলকাতায় সংবিধান রক্ষার মানববন্ধনে গিয়েছিলেন ইউসুফ। হিংসা, ঘেন্নার উল্টো পিঠে দিল্লিতেই মুসলিম পড়শিকে হিন্দুদের পাহারা দেওয়ার কাহিনিও শোনা যাচ্ছে। দাঙ্গাবাজদের রুখে দিচ্ছেন শিখ বা তথাকথিত দলিত সহ-নাগরিকেরা। গবেষণার ভিত্তিতে সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দী বলেছেন, দেশভাগের দাঙ্গায় যাঁরা বেঁচে যান, তাঁদের ৪০ শতাংশের রক্ষাকর্তাই ভিন্‌ ধর্মের। ভারত ও পাকিস্তান— দু’দিকেই এটা সত্যি। কালিমের কথায়, ‘‘নেতাদের ‘হেটস্পিচেই’ কিছু লোক ফাঁদে পা দিচ্ছে। তবে যে আমাদের বাঁচাল সে-ও তো হিন্দুই।’’ ধর্মের নামে হিংসার পটভূমিতেও জিতে যায় এই ভারত।

Delhi Violence CAA Protest Citizenship Amendment ACT CAA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy